শহরে ফের শ্লীলতাহানির ঘটনা। অভিযোগ উঠল, এ বার আলিপুরে পিছু ধাওয়া করে হাত ধরে টানা হয়েছে এক ছাত্রীর। শনিবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটেছে আলিপুর থানা এলাকার আলিপুর সেন্ট্রাল জেলের মূল গেটের সামনে। ঘটনা জানাজানি হতেই অভিযুক্ত যুবককে মারধর করেন এলাকার উত্তেজিত বাসিন্দারা। পরে আহত অবস্থায় ওই যুবককে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে আলিপুর থানার পুলিশ। প্রথমে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় চিকিৎসার জন্য। চিকিৎসার পর ওই দিন রাতেই তাকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
পুলিশ জানায়, ধৃতের নাম সঞ্জয় দাস। তার বাড়ি চেতলাতে।
পুলিশ অবশ্য ওই যুবকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে শ্লীলতাহানি করার অভিযোগ এনেছে। রবিবার সঞ্জয়কে আলিপুর আদালতে তোলা হয়।
শনিবার সন্ধ্যায় গড়িয়াহাটে শ্লীলতাহানির শিকার হতে হয়েছিল মা ও মেয়েকে। ওই ঘটনায় পুলিশ তৎপরতার সঙ্গে ঘটনাস্থল থেকেই গ্রেফতার করে অভিযুক্ত সুরেন গুপ্তকে।
পুলিশ জানায়, অভিযোগকারিণী ছাত্রীর বাড়ি আলিপুর সেন্ট্রাল জেলের কাছে একটি আবাসনে। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রী গোপালনগর মোড় থেকে চপ কিনে ১০০ মিটার দূরে নিজেদের আবাসনে ফিরছিল। গোপালনগর মোড়ের সামনে থেকেই দুই যুবক অনুসরণ করতে শুরু করে ওই ছাত্রীকে। আলিপুর সেন্ট্রাল জেলের মূল গেটের উল্টোদিকে একটি কারারক্ষী ইউনিয়ন অফিসের সামনে ওই দুই যুবক ওই ছাত্রীর পাশে পাশেই চলতে থাকে। তাকে অশ্লীল কথাবার্তাও বলতে থাকে তারা। সেই সময় রাস্তায় তেমন লোকজনের ভিড় ছিল না। ফলে মেয়েটি প্রতিবাদ করার সাহস দেখাতে পারেনি। অভিযোগ, এর পরেই তার হাত ধরে টানে এক যুবক।
পুলিশের কাছে ওই ছাত্রী অভিযোগ করে, যুবকটি তার হাত ধরে টান মারার পরেই সে দৌড়ে কিছুটা দূরে তাদের আবাসনের ভিতরে নিজেদের ঘরে ঢুকে পড়ে। কিন্তু তাতেও দমে না গিয়ে ওই যুবকেরা আবাসনের ভিতরে ঘরের খোলা দরজা দিয়ে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করে।
ওই ছাত্রীর প্রতিবেশী এক মহিলা রবিবার বলেন, “আমি ঘটনার সময়ে ওদের ঘরেই ছিলাম। ও ঘরের মধ্যে ঢুকেই চিৎকার করে আতঙ্কে আমাকে জড়িয়ে ধরে।
আমি সামনে তাকিয়ে দেখি দুই অপরিচিত যুবক ঘরে ঢোকার চেষ্টা করছে। ওদের দেখে সঙ্গে সঙ্গে আমিও চিৎকার শুরু করি। আমার চিৎকারে আবাসনের অন্য বাসিন্দারা এসে এক জনকে ধরে ফেলে। অন্য জন পালিয়ে যায়।”
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, আটক যুবক সঞ্জয়কে আবাসনের ভিতরে মারধর করেন এলাকার বাসিন্দারা। পরে তাঁরাই খবর দেন আলিপুর থানার পুলিশকে। পুলিশ এসে ওই যুবককে আহত অবস্থায় আবাসনের ভিতর থেকে উদ্ধার করে এবং চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যায়। পুলিশের দাবি, ঘটনার সময়ে ওই যুবক মত্ত অবস্থায় ছিল।
তার অন্য সঙ্গীর খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ।রবিবার দুপুরে ওই ছাত্রীর বাড়ি গিয়ে দেখা যায় ঘটনার পরে ১৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও আতঙ্কে রয়েছে ওই ছাত্রী এবং তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যরা।
রবিবার নিজের বাড়িতে বসে ওই ছাত্রী বলে, “ওই রাস্তা দিয়ে তো আমি প্রায়ই যাওয়া-আসা করি। এর পর থেকে মনে হয়, আমি আর বাড়ি থেকে একা বেরোতেই পারব না।” ওই ছাত্রীর মাও বলেন, “দু’বছর ধরে আমরা এখানে রয়েছি। ভাবতেই পারছি না আলিপুরের মতো জায়গায় এ রকম একটা ঘটনা ঘটতে পারে। ভবিষ্যতে মেয়েকে রাস্তায় একা ছাড়ব কী করে, তা বুঝে উঠতে পারছি না।” এই রকম একটা ঘটনার পরে আতঙ্কে রয়েছেন ওই ছাত্রীর প্রতিবেশীরাও। |