|
|
|
|
বিনোদন |
এত ভালবাসা আর কোথায় |
|
তারাদের চোখে বাংলাই তারকা
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
|
আগের বারের মতোই অমিতাভ-শাহরুখ একসঙ্গে। হাজির মিঠুনও। সঙ্গে জয়া বচ্চন এবং কমলহাসন।
চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান যে এ বার চাঁদের হাট, সেটা জানাই ছিল। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফেসবুকে লিখেছিলেন, এই সন্ধেটার জন্য মুখিয়ে আছেন তিনি। কিন্তু জানা ছিল না, অতিথি তারকারা সবাই মিলে উৎসব মঞ্চটি এই ভাবে বাংলার গুণগানে ভরিয়ে তুলবেন!
নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের রবি-সন্ধ্যা বলা বাহুল্য, বাংলা বা বাঙালির আত্মশ্লাঘা উস্কে দেওয়ার মতো বেশ কয়েকটি মুহূর্ত তৈরি করেছে। মুখ্যমন্ত্রী এটাই চেয়েছিলেন।
মেজাজটা বেঁধে দিয়েছিলেন জয়াই। মাইকের সামনে তখন প্রসেনজিৎ। বললেন, “আমি জয়াদি আর মিঠুনদাকে ডাকছি। এটা জয়াদিরই প্ল্যান। আমরা তিন জনে একসঙ্গে একটা কথা বলতে চাই।” আলগা খোঁপায় জুঁইফুলের মালা, লাল শাড়ি পরা জয়া এগিয়ে এসে বললেন, “এখানে অনেক বিদেশি অতিথি আছেন, তাই বাংলা বলছি না। কিন্তু আমরা এই তিন জনই সত্যিকারের বাঙালি (ট্রুলি বেঙ্গলি)।” ঘাড় ঘুরিয়ে অমিতাভ-শাহরুখ-কমলদের উদ্দেশ করে খোঁচাও দিলেন, “বাকিরা নট-ট্রুলি বেঙ্গলি!” উপচে-পড়া ইন্ডোর তখন সকৌতুকে দেখছে, মঞ্চ জুড়ে এক ধরনের ‘কে বেশি বাঙালি’ মেজাজ! |
নক্ষত্র সমাবেশ
নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রীর
দু’পাশে অমিতাভ বচ্চন ও শাহরুখ খান। পিছনের সারিতে দেব,
কোয়েল এবং জিৎ।
রবিবার সুদীপ আচার্যের তোলা ছবি।
|
জয়া বলতে লাগলেন, “প্রায় তিরিশ বছর পর অনেক পুরনো লোকজনের সঙ্গে দেখা হল আজ!
খুব ভাল লাগছে!” তার পরেই মঞ্চে বসা সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়কে ডাক, “সাবিত্রীদি, আমি আপনার ধন্যি মেয়ে!”
না, কলকাতা তথা বাঙালির মন জিততে কমলহাসনও হোমওয়ার্কে ফাঁকি দেননি। তিন দশক আগে তাঁর অভিনীত সবেধন নীলমণি বাংলা ছবি ‘কবিতা’য় কমলের লিপেই কিশোরকুমারের হিট গান, ‘শুন, শুন গো সবে, শুন দিয়া মন...!’ এ দিন কমল ‘আমি একটাই বাংলা জানি’, বলে ওই গানের লাইন আউড়েই স্টেডিয়ামের জনতাকে চমকে দিলেন। এ দেশে ফিল্ম সোসাইটি আন্দোলনের পথিকৃৎ কলকাতাকে কুর্নিশ জানিয়ে কমল বললেন, “কবিতা করার সময় থেকেই আমি নিজেকে বাঙালি ভাবি। শুধু জাতীয় সঙ্গীতই নয়, আমার ভালবাসার গানও বাংলায়।”
বাংলার শুভেচ্ছা-দূত শাহরুখ খানও পিছিয়ে থাকার পাত্র নন! কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে এখন তিনি প্রতি বছরই আসেন। পরের বারও আসবেন, বলে রাখলেন। আর সেই সঙ্গে সরস শপথবাক্যও পড়ে নিলেন, “পরের বার বাংলা শিখে আমিও নিজেকে ‘ট্রুলি ট্রুলি বেঙ্গলি’ প্রমাণ করেই ছাড়ব! আর বাংলা শেখবার জন্য জয়াজিকেই পাকড়াও করব।” জয়া তখন ইঙ্গিতে বোঝাচ্ছেন, বাঙালিয়ানাটা ভিতরের ব্যাপার! হৃদয়ের ব্যাপার!
এই হৃদয় দিয়েই তো সকলের মন জিতে নেয় সিটি অব জয়! তারকা-অতিথিরা সকলেই এক বাক্যে কিন্তু সে কথাই বললেন। গত বার অমিতাভ বলেছিলেন, মন খারাপ হলেই কলকাতায় ঘুরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন অভিষেককে! এ বার বিদেশি অভ্যাগতদের উদ্দেশে বললেন, এত প্যাশন আর ভালবাসা পৃথিবীর আর কোনও শহর উপহার দিতে পারে না! শাহরুখ একমত “কলকাতা মন ভাল করে দেওয়ার শহর আর সেখানে আছেন মন ভাল করে দেওয়া এক মুখ্যমন্ত্রী!” কমলহাসন মুগ্ধ, “এত আন্তরিকতা কোথাও দেখিনি। চেয়ারে স্থির হয়ে বসে থাকতে পারেন না, এমন মুখ্যমন্ত্রীও সত্যি কোথাও দেখিনি! বুঝতে পারছি, কেন সবাই ওঁকে দিদি বলেন!”
এর কয়েক মুহূর্ত আগেই মুখ্যমন্ত্রী নিজে গিয়ে অপর্ণা সেন আর কঙ্কনা সেনশর্মাকে মঞ্চে টেনে তুলেছেন। মুখ্যমন্ত্রী কার পাশে বসবেন, তাই নিয়ে শাহরুখ ও কমলহাসনের মধ্যে মজাদার খুনসুটিও হয়ে গিয়েছে। |
|
|
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রয়েছেন
অমিতাভ ও জয়া বচ্চন, মিঠুন চক্রবর্তী এবং
সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র |
জায়ান্ট স্ক্রিনে
চলচ্চিত্র উৎসব।
রবিবার নেতাজি
ইন্ডোর স্টেডিয়ামের
সামনে। ছবি: রণজিৎ নন্দী |
|
গত বার ছিল ভারতীয় চলচ্চিত্রের শতবর্ষ উদ্যাপনের সূচনাপর্ব। সে বার ভারতীয় চলচ্চিত্রে বাংলার অবদান নিয়ে সবিস্তার বলেছিলেন অমিতাভ। এ বার তিনি কী বলবেন, তা নিয়ে জল্পনায় মেতেছিলেন অনেকেই। অমিতাভ এ বারও চমকে দিতে ছাড়েননি। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য চলচ্চিত্রকে কী ভাবে পুষ্ট করেছে, সেই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে যত খুঁটিনাটি তিনি এ দিন উল্লেখ করেছেন, ফিল্ম স্টাডিজের পড়ুয়ারা পরীক্ষায় লিখলে নির্দ্বিধায় ভাল নম্বর পেতেন।
গত বারও অমিতাভ ‘দেবদাস’-এর দৃষ্টান্ত দিয়ে বলেছিলেন, বাংলা সাহিত্য বরাবরই ভারতীয় ছবির বহু স্মরণীয় চিত্রনাট্যের সুফলা জমি। এ বার বললেন, সেই নির্বাক যুগ থেকেই বাংলা সাহিত্য আর চলচ্চিত্র কী ভাবে হাত ধরাধরি করে চলেছে। মনে করালেন, নিউ থিয়েটার্সের যুগে বাঙালি সাহিত্যিকরা ফিল্মের সঙ্গে জড়িত হওয়ায় সেই সাহিত্যধর্মী মেজাজটা পুষ্ট হয়েছে। পরবর্তী কালে সত্যজিত-ঋত্বিক-মৃণাল-তপন সিংহের ছবি থেকে শুরু করে বক্স-অফিস কাঁপানো ‘সপ্তপদী’ বা ‘সাত পাকে বাঁধা’র উৎসও যে বাংলা সাহিত্য— সেটাও গড়গড়িয়ে বলে গিয়েছেন বাঙালির জামাইবাবু। জয়ার বাবা তরুণ ভাদুড়ির লেখা থেকে মঞ্জু দে-র পরিচালনায় ‘অভিশপ্ত চম্বল’ ছবির কথাও এসেছে। অমিতাভ বলেন, “আশি-নব্বইয়ের দশকে ছবি হিট করানোর প্রচলিত ফর্মুলা মানতে গিয়ে বাংলা ছবি সাহিত্যের আশ্রয় থেকে কিছুটা সরে এসেছিল। কিন্তু তার পরে সদ্যপ্রয়াত ঋতুপর্ণ ঘোষ এবং বর্তমানে এক ঝাঁক নতুন পরিচালক বাংলা ছবিকে তার স্বকীয় চেহারায় ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন অমিতাভ। স্টেডিয়াম ফেটে পড়ে হাততালিতে। |
কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব উপলক্ষে শহরে এসে কমল হাসন ঘুরে দেখলেন
নেতাজি ভবন। সঙ্গে ছিলেন কৃষ্ণা বসু ও সুগত বসু। রবিবার ছবিটি তুলেছেন সুমন বল্লভ। |
অমিতজিকে ‘বিগ থ্যাঙ্ক ইউ’ জানাতে গিয়ে উদ্বেল হয়ে পড়েন মমতাও। মঞ্চ থেকেই তাঁকে পরের বছরের জন্য ‘উইথ ফুল ফ্যামিলি’ নেমন্তন্ন জানিয়ে রেখেছেন তিনি। রাতে ফেসবুকে এ দিনের অনুষ্ঠানের সাফল্যের কথা জানিয়ে আপলোড করেছেন উৎসবের ছবি। শাহরুখ ফেসবুকে আপডেট দিয়েছিলেন বিমানে আসতে আসতেই। রাতে ফের লিখেছেন ‘কলকাতার অভিজ্ঞতা দারুণ! মমতাদির এনার্জির তুলনা নেই!’ সূত্রের খবর, অমিতাভ-জয়া দু’জনেই একান্ত আলাপে মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছেন, বিমানবন্দর থেকে আসার পথে তাঁরা দেখেছেন, কলকাতা অনেক পাল্টে গিয়েছে।
রাতে একের পর এক টুইটেও কলকাতার বদলে যাওয়ার কথা লিখেছেন অমিতাভ। তাঁর প্রথম চাকরির শহর কলকাতার রাস্তা দিয়ে যেতে গিয়ে স্মৃতি ভিড় করে আসছে জানিয়ে লিখেছেন, “কলকাতায় এখন নতুন নতুন বাড়ি। পুরনো অনেক কিছুই নেই। কিন্তু কলকাতার মানুষ আর তাদের ভালবাসা...তার কোনও পরিবর্তন নেই!” |
|
|
|
|
|