বাঁ-হাতি হিসেবে ক্রিকেট দুনিয়ায় আবির্ভাব ছাড়া দু’জনের মধ্যে বিশেষ মিল নেই।
প্রথম জন সংহারে বিশ্বাসী। মাঠে নামলে বোলারদের তাঁর ‘খুন’ করতে বেশি পছন্দ। ক্রিকেটদেবতাকে ইনি দেখেছেন, সঙ্গে খেলছেন, তবে তাঁর কেরিয়ারের শেষ দিকে।
দ্বিতীয় জন শিল্পী। খামখেয়ালি। যত দিন বাইশ গজের পৃথিবীতে ছিলেন, বারবার তাঁর সঙ্গে তুলনা চলেছে ক্রিকেটদেবতার। উইলোর যুদ্ধে তিনিও তো কম ছিলেন না, ঐশ্বরিক প্রতিভা তাঁরও যথেষ্ট ছিল।
প্রথম জন শিখর ধবন।
দ্বিতীয় জন ব্রায়ান চার্লস লারা।
কলকাতায় একই হোটেলে, কাছাকাছি সময়ের অবস্থানে দু’জনের মধ্যে আরও একটা মিল পাওয়া গেল। এঁরা দু’জনেই সচিন তেন্ডুলকর নামের সম্মোহনে আপাতত বন্দি। |
সকালে লারা
• গল্ফ কোর্স
• মাদার হাউজ
• স্বামী বিবেকানন্দের বাড়ি
• ইডেন
বিকেলে লারা
• সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে টক শো |
এলেন লারা। শনিবার কলকাতা বিমানবন্দরে। |
|
শনিবার সকালে লারা যখন শহরে পা দিলেন, তার বারো ঘণ্টা আগে মহানায়কের নিষ্ক্রমণ ঘটে গিয়েছে। সচিনের সঙ্গে তাই তাঁর এক সময়ের কড়া প্রতিদ্বন্দ্বীর দেখা হওয়ার কোনও উপায় ছিল না। কারণ, পাঁচের জায়গায় ইডেন টেস্ট তিন দিনে শেষ। আজ ম্যাচ চললে টেস্টের চতুর্থ দিন হত। সচিনের একশো নিরানব্বইতম টেস্টে লারার উপস্থিতি মানে ছিল উৎসবের আবহে নতুন রঙ সংযোজন। কিন্তু সে সব তো কিছু হলই না, উল্টে ক্যারিবিয়ান প্রিন্স সকালে এয়ারপোর্টে পা দিয়েই বলে দিলেন, তিনি প্রবল হতাশ। “ভেবেছিলাম সচিনের টেস্টটা দেখব। তার জন্যই এসেছিলাম। সেটা হল না ভেবে খুব হতাশ লাগছে,” বলে দেন লারা। কথাবার্তা শুনলে মনে হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ টিমের উপর কিছুটা হলেও অসন্তুষ্ট তিনি। “টেস্টে পাঁচ দিন ব্যাট করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটারদের শিখতে হবে। একটা টেস্ট যদি তিন দিনে শেষ হয়ে যায়, তা হলে সেটা খুব ভাল ব্যাপার নয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের উচিত মুম্বইয়ে একটা ভাল টেস্ট ম্যাচ উপহার দেওয়া। যাতে সচিনের অবসর টেস্টটা স্মরণীয় করে রাখা যায়।”
সচিন-লারাদু’জনকে একসঙ্গে ইডেনে রাখার আর উপায় নেই। কিন্তু সিএবি শুধু লারাকে নিয়েই রবিবার দিনভর নানাবিধ অনুষ্ঠানের বন্দোবস্ত করে ফেলেছে। আজ , রবিবার সকালে মাদার হাউজ থেকে শুরু করে স্বামী বিবেকানন্দের বাড়ি, ইডেন গার্ডেন্স, সব জায়গায় যাবেন লারা। সন্ধেয় অভিজাত হোটেলে থাকছে সিএবি আয়োজিত ‘টক শো’। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে। |
|
|
শহর ছাড়ার পথে। কলকাতা বিমানবন্দরে। শনিবার। |
|
ভারতে আসার জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছাড়ার আগেও সচিন নিয়ে লারার মুগ্ধতা বারবার বেরিয়ে এসেছে। একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলে দিয়েছেন, “ষোলো বছর বয়সে ক্রিকেট শুরু করে ও যে জায়গায় পৌঁছল, তাকে সর্বকালের সেরা ক্রিকেট কেরিয়ার বলতে হবে। সচিন যত ম্যাচ খেলেছে, যত রান করেছে, গোটা বিশ্বের উপর ওর যা প্রভাব, সেটা আর কখনও দেখব বলে মনে হয় না। সচিন যে কত মহান সেটা এর থেকেই বোঝা যায়।” সঙ্গে যোগ করেছেন, “সচিনের সঙ্গে আমার নাম যে একই সঙ্গে উচ্চারিত হয়, সেটা আমার কাছে কেন, যে কারও কাছেই গর্বের ব্যাপার।”
আর সচিনের টিমমেট হয়েও তাঁর সই যে কত অমূল্য হতে পারে, সেটা বুঝিয়ে দিলেন শিখর ধবন। জানা গেল, শুক্রবার ম্যাচ শেষ হওয়ার পর হোটেলে ফিরে দুটো ব্যাটের জন্য প্রবল খোঁজাখুঁজি শুরু করে দেন শিখর। সিএবি নিযুক্ত ভারতীয় টিমের স্থানীয় ম্যানেজারকে বলে দেন, যত টাকা লাগে লাগুক। তাঁর এই মুহূর্তে দু’টো ব্যাট চাই, যেখানে সচিনের সই তিনি নেবেন! ব্যাট জোগাড়ের পর শান্ত হন শিখর। |
|
|
|
টেস্ট জিতে শহর ছাড়ছে টিম ইন্ডিয়া। কলকাতা বিমানবন্দরে অশ্বিন,
কোহলি এবং ইডেন টেস্টের অন্যতম নায়ক মহম্মদ সামি। শনিবার। |
|
ঘটনা হচ্ছে, সচিন কলকাতা ছেড়ে চলে যাওয়ার পরেও তাঁকে নিয়ে শহরের ঘোর কাটেনি। সিএবির-ও না। ইডেন ড্রেসিংরুমে সচিন যে নির্দিষ্ট চেয়ারটায় এত দিন বসতেন, সেটা নিয়ে কী করা যায়, তা নিয়ে কর্তাদের ভাবনাচিন্তা চলছে।
আগামী সোমবার রাশি রাশি উপহারসামগ্রী মুম্বইয়ে তাঁর নতুন বাড়িতে পাঠানো হবে। শোনা গেল, কলকাতার আবেগে মোহিত সচিন ফ্লাইটে উঠে যাওয়ার আগে দুঃখপ্রকাশ করেছেন। বলে গিয়েছেন, কলকাতা তাঁকে যা দিল এই ক’দিনে, বদলে তিনি নাকি কিছুই কলকাতাকে দিতে পারলেন না! |