সম্পাদকীয়...
অবসান
চিন তেন্ডুলকর অবসর লইবেন। অন্য কোনও ক্রিকেটার এত সংখ্যক আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলিয়া অকল্পনীয় উৎকর্ষ এবং অবিশ্বাস্য রেকর্ড গড়িবার ক্ষমতা দ্বারা বিশ্বকে স্তম্ভিত রাখিতে পারেন নাই। দীর্ঘ চব্বিশ বৎসর খেলিবার পরে তিনি ব্যাট-প্যাড তুলিয়া রাখিবেন। ক্রিকেটবিশ্ব কিছু দিন বিশ্বাসই করিতে পারিবে না, ভারতীয় ক্রিকেট দল খেলিতেছে কিন্তু তাহাতে সচিন নাই। সেই নিঃস্বতার মোকাবিলা তবু করা সম্ভব, কিন্তু প্রশ্ন হইল, সচিন নিজে অবসর গ্রহণের পরবর্তী প্রাতে কেমন ভাবে জীবনের মুখোমুখি হইবেন? ক্রিকেট ব্যতীত কিছু তিনি ভাবেন নাই, করেন নাই। সাধনার, অভ্যাসের ও সর্বোপরি আজীবনলালিত আকাঙ্ক্ষার তো একটি অপ্রতিরোধ্য গতিজাড্য রহিয়াছে। তিনি নিজেকে বুঝাইবেন কী করিয়া: আজ নেট প্র্যাকটিসে যাইতে হইবে না? অবসরের পর হয়তো তিনি ব্যবসায়ে ব্যাপৃত থাকিবেন, পরিবারকে সময় দিবেন, হয়তো ক্রিকেট লইয়াই বই লিখিবেন বা কমেন্ট্রি করিবেন। যেমন বহু ক্রিকেটারই করিয়া থাকেন। কিন্তু সচিন তো কেবল খেলেন নাই, তিনি তো ক্রিকেটের ঈশ্বর হইয়া বিচরণ করিয়াছেন। যে মানুষটি প্রতিটি ম্যাচে সহস্র কোটি ভক্তের পূজায় অভ্যস্ত, একটি করিয়া অলৌকিক স্ট্রোকে ক্রিকেট-গ্রন্থের একটি করিয়া নূতন অধ্যায় সূচিত করিতে অভ্যস্ত, তাঁহার সাফল্যে সমগ্র ভারতের উল্লাস ও তাঁহার ব্যর্থতায় সমগ্র ভারতের দীর্ঘশ্বাস একযোগে জন্মাইতে দেখিতে অভ্যস্ত, তিনি কেমন করিয়া নিজ রক্তের উতরোল আহ্বানকে বাস্তববোধ দ্বারা প্রশমিত করিবেন? ঈশ্বর কি ছুটি লইয়া বসিয়া থাকিতে পারেন? চল্লিশ বৎসর রূপকথাসদৃশ দিবারাত্রি কাটাইয়া আজ সহসা এক অতিমানব ধীরেসুস্থে বাগান-পরিচর্যায় নিজেকে নিয়োজিত করিবেন ও অন্যান্য নশ্বরের সহিত এক পঙ্ক্তিতে বসিয়া জীবনভোজন সারিবেন?
অবশ্য ভাবিয়া দেখিলে, প্রতিটি সাধারণ মানুষকে এই নিষ্ঠুর লগ্নের মোকাবিলা করিতে হয়: যখন তাহার যৌবন চলিয়া যায়। শৈশব ও কৈশোর কেবল যৌবনের প্রতীক্ষা ব্যতীত কিছুই নহে, আর প্রৌঢ়ত্ব হইতে শুরু যৌবনের জন্য হাহাকারাব্দ। যৌবনের সাপেক্ষেই মনুষ্যজীবন সংজ্ঞায়িত। কিন্তু যৌবন কী ও কেন, ভাল করিয়া বুঝিতে না বুঝিতে, দত্তাপহারক দেবতা হৃদয়টিকে হুবহু একই প্রকার কাঙাল রাখিয়া, দেহটিকে জীর্ণ করিয়া দেন। মানুষ নানা প্রকারে তাহা ঢাকিবার প্রয়াস করে, কিছু দিন কলপ বোটক্স এবং আরোপিত খুশিয়ালি সাহায্যও করে, কিন্তু সম্মুখ দিয়া যখন চলিয়া যায় প্রকৃত যুবকযুবতীর দল, তাহাদের ভঙ্গিমায় ডৌলে মনোভঙ্গিতে যৌবনের অনায়াস লীলা ও অহংকার, তখন মানুষ বুঝিতে পারে, বিশ্বের মালিকানা সে হারাইয়াছে। এখন সিংহাসনে অন্যের আরোহণ মানিয়া লইতে লইতে কাল যাইবে। অথচ সম্মুখে বড় কম সময় পড়িয়া নাই। এই অসহনীয় বাস্তব গিলিয়া সে গলাব্যথায় অভ্যস্ত হয়। সকল কাজই করে, বাজারে যায়, রাজনীতি লইয়া তর্কে শামিল হয়, হয়তো বহু সৃষ্টিকর্ম সে এই সময় উৎপন্ন করে যাহা যৌবনে করিতেই সক্ষম ছিল না। নানা ভাবে সে এই যৌবনোত্তর জীবনকে সার্থক করিয়া তুলিতে পারে। কিন্তু কোনও দিনই ভুলিতে পারে না সেই অনির্বচনীয় অমৃত, কেবল অস্তিত্বের উল্লাসে অমন ফুল্ল হইয়া উঠিবার ক্ষমতা, স্পর্ধা ও আশাবাদে সতত স্নান। স্টেফি গ্রাফ যখন পুরস্কার দিতে মঞ্চে আসেন বা মারাদোনা ফুটবল ম্যাচ-পরবর্তী আলোচনায় কথা বলেন, তাঁহাদের মধ্যে যেমন এখনই কোর্টে বা মাঠে নামিয়া পড়িবার এক অদম্য বাসনা এবং তাহা আর কখনওই হইবার নহে সেই বিষণ্ণ উপলব্ধি যুগপৎ কাজ করে, প্রতিটি যৌবন হইতে অবসর লওয়া মানুষও যথোচিত আত্মমর্যাদার সহিত মৌলিক ক্রন্দন লুকাইয়া রাখে। সচিনের ন্যায় দৃপ্ত রাজ্যপাট তাহারা ভোগ করে নাই বটে, কিন্তু নিজভূমে নৃপতি হইবার এক অলীক লটারি পাইয়াছিল। কেবল, তাহার অবসানের কালে সহ-ক্রন্দনকারী পায় নাই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.