সন্ধ্যার মুখে কলকাতায় ফের শ্লীলতাহানি। শিকার একই সঙ্গে মা ও মেয়ে। শনিবার ঘটনাটি ঘটেছে গড়িয়াহাট থানা এলাকার ম্যান্ডেভিলা গার্ডেনে। অভিযুক্ত যুবককে ঘটনাস্থল থেকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, ধৃতের নাম সুরেন গুপ্ত। বাড়ি হাওড়ার সীতারাম বোস লেনে।
শহরে মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে বার বারই প্রশ্ন উঠেছে। লালবাজার সূত্রের খবর, প্রায় প্রতিদিনই শহরের কোনও না কোনও এলাকায় শ্লীলতাহানি কিংবা ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। কলকাতা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “পার্ক স্ট্রিট কাণ্ডের সময় পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছিল। তার পর থেকে মহিলাদের উপরে অত্যাচারের ঘটনায় পুলিশকে বেশি মাত্রায় সক্রিয় ও সংবেদনশীল হতে বলা হয়েছে।” এ দিনের ঘটনাতে সেই সক্রিয় ছবিই দেখা গিয়েছে।
কী হয়েছিল এ দিন?
পুলিশ জানায়, অভিযোগকারিণী মহিলার বাড়ি পিকনিক গার্ডেন এলাকায়। এ দিন সাড়ে পাঁচটা নাগাদ বছর চৌত্রিশের ওই মহিলা তাঁর কিশোরী মেয়েকে নিয়ে সুইনহো স্ট্রিটে বাপের বাড়ি যাচ্ছিলেন। তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, বাড়ি থেকে বেরিয়ে বন্ডেল গেট পেরোতেই এক যুবক তাঁদের পিছু নেয়। রাস্তায় চলতে চলতে তাঁকে এবং তাঁর মেয়ের উদ্দেশে অশ্লীল কথাবার্তাও বলতে থাকে সে। সেই সময় রাস্তায় তেমন লোকজন না-থাকায় তিনি প্রতিবাদ করার সাহস দেখাতে পারেননি।
পুলিশকে ওই মহিলা জানান, ফাঁকা রাস্তার কারণেই তিনি প্রথমে বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছিলেন। তা দেখে যুবক আরও উৎসাহ পায়। পথে চলতে চলতে আচমকাই ওই যুবক তাঁর মেয়ের গায়ে হাত দেয়। এর পর ওই মহিলা প্রতিবাদ করলে ম্যান্ডেভিলা গার্ডেনের একটি বেসরকারি স্কুলের সামনে ছেলেটি তাঁর মেয়ের হাত ধরে টানাটানি শুরু করে।
ঘটনার আকস্মিকতায় মহিলা হকচকিয়ে গিয়েছিলেন। এর পরেই তিনি তড়িঘড়ি সুইনহো স্ট্রিটে পৌঁছে পরিচিত এক দোকানদারকে পুরো ঘটনা জানান। সেই সময় অভিযুক্ত যুবক ফের তাঁর পাশে এসে অশ্লীল মন্তব্য করতে থাকে বলে পুলিশের কাছে মহিলার অভিযোগ।
মহিলা জানান, ওই দোকানদারই চিৎকার করে এলাকার লোকজনকে জড়ো করেন। তা দেখে ওই যুবক পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু এলাকার বাসিন্দারাই তাকে হাতেনাতে ধরে ফেলে। শুরু হয় মারধরও। সেই সময়ই গড়িয়াহাট থানার ওসি পার্থসারথি মুখোপাধ্যায় এবং আরও এক অফিসার কালীকিঙ্কর কুণ্ডু ওই এলাকায় টহল দিচ্ছিলেন। চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে তাঁরা ওই যুবককে গ্রেফতার করেন। পুলিশের দাবি, ধৃত যুবক মদ্যপ অবস্থায় ছিল। ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য তাকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়।
এ দিন পুলিশের সক্রিয়তার পরেও অভিযোগকারী মহিলার ভয় কাটেনি। তিনি বলেন, “ওই রাস্তা দিয়ে প্রায়ই মেয়ে একা একা যাতায়াত করে। এ দিন সঙ্গে আমি ছিলাম। তাতেই এই ঘটনা। একা থাকলে কী হত, তা ভাবলে শিউরে উঠছি। ভবিষ্যতে একা ছাড়ব কি না, তা বুঝতে পারছি না।” |