তৃণমূলে যোগ দিলেন রায়গঞ্জের প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির ভাই সত্যরঞ্জন দাশমুন্সি। তবে তাঁর তৃণমূলে যোগ দেওয়ার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না উত্তর দিনাজপুর জেলা কংগ্রেস। শুক্রবার বিকালে কলকাতায় তৃণমূল ভবনে গিয়ে তৃণমূলে যোগ দেন সত্যরঞ্জনবাবু। তাঁর হাতে দলের পতাকা তুলে দেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। সত্যরঞ্জনবাবু তৃণমূলে যোগ দেওয়াতে দল শক্তিশালী হবে বলে মুকুলবাবু দাবি করেন। এদিন রায়গঞ্জে জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা স্থানীয় বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত বলেন, “সত্যরঞ্জনবাবু কোনওদিনও কংগ্রেসের সক্রিয় নেতা বা কর্মী ছিলেন না। প্রিয়দার নির্দেশে তিনি মাঝে মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় নির্বাচনী প্রচার করতেন। ২০০৮ সালে প্রিয়দা অসুস্থ হওয়ার পরে আমি সত্যরঞ্জনবাবুকে একাধিক বার দলে আমন্ত্রণ জানিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু দায়িত্ব নিতে বলি। কিন্তু তিনিই কোনও সাড়া দেননি। সত্যরঞ্জনবাবুর তৃণমূলে যোগ দেওয়াতে কংগ্রেসের কোনও ক্ষতি হবে না।”
এই বিষয়ে প্রিয়রঞ্জনের স্ত্রী তথা রায়গঞ্জের কংগ্রেস সাংসদ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দীপা দাশমুন্সির মতে, যে কোনও মানুষেরই যে কোনও রাজনৈতিক মতামত প্রকাশ করার অধিকার রয়েছে। তাঁর কথায়, “প্রিয়রঞ্জন ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে কংগ্রেসের নাম ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে। প্রিয়বাবু অসুস্থ থাকাকালীন তাঁর ভাইয়ের তৃণমূলে যোগ দেওয়াটা কতটা মানবিক ও যুক্তিসঙ্গত তা সত্যরঞ্জনবাবুর কাছেই জানতে চাইছি।” |
দীপাদেবীর অভিযোগ, “লোকসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল রাজনৈতিক স্বার্থে প্রিয়-পরিবারে ভাঙন ধরিয়ে প্রিয় আবেগকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে।” তাঁর বক্তব্য, “আমি কারও রাজনৈতিক দক্ষতা বা গুরুত্ব নিয়ে মন্তব্য করব না। তবে সত্যরঞ্জনবাবুকে দলে টেনে কোনও লাভ হল কি না তা ভবিষ্যতেই তৃণমূলের নেতা-নেত্রীরা বুঝতে পারবেন।” জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা ইটাহারের বিধায়ক অমল আচার্য বলেন, “কংগ্রেসের নেতা নেত্রীদের কথার কোনও সারবত্তা নেই। সত্যরঞ্জনবাবু তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় আমরা খুব খুশি। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে যোগ্য জায়গায় কাজে লাগাবেন।”
কংগ্রেস সূত্রের খবর, কালিয়াগঞ্জে সত্যরঞ্জনবাবুদের আদি বাড়ি। তবে তিনি গত দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে ব্যবসা সূত্রে পরিবার নিয়ে কলকাতার টালিগঞ্জে রয়েছেন। প্রিয়বাবু ও দীপাদেবী যতবারই নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন ততবারই সত্যরঞ্জনবাবুকে প্রচারের পুরোভাগে দেখা গিয়েছে। ১৯৯৮ সালে প্রথমবার প্রিয়বাবু রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে গেলেও সত্যরঞ্জনবাবু কয়েকটি এলাকায় প্রচার করেন। এরপর ১৯৯৯ ও ২০০৪ সালে রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রে প্রিয়বাবুর হয়ে প্রচারের গুরুদায়িত্ব সামলেছেন তিনি। ২০০১ সালে দীপাদেবী যখন কংগ্রেসের টিকিটে গোয়ালপোখর বিধানসভা কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান সেই সময়েও তাঁকে বৌদির হয়ে প্রচারে দেখা গিয়েছে। এরপর ২০০৬ সালে গোয়ালপোখর বিধানসভা ও ২০০৯ সালে রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রে দীপাদেবীর হয়ে নির্বাচনী প্রচারেও সত্যরঞ্জনবাবু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন।
সত্যরঞ্জনবাবুর অবশ্য দাবি, তাঁর রাজনৈতিক দক্ষতা নিয়ে মোহিতবাবুরা অপপ্রচার করছেন। তাঁর কথায়, “১৯৭২ সাল থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত আমি প্রদেশ কংগ্রেসের সদস্য ছিলাম। তখন মোহিতবাবুদের দেখা যেত না। প্রিয়দার নির্দেশে আমি শুধু নির্বাচনের প্রচারই নয়, কংগ্রেসের একজন সৈনিক হিসেবে সব সময় কাজ করেছি।”
তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কারণ হিসেবে সত্যরঞ্জনবাবুর ব্যাখ্যা, “দাদা অসুস্থ হওয়ার পর গত চার বছর ধরে জেলা কংগ্রেস নেতারা আমার সঙ্গে কোনও যোগাযোগ রাখেননি। জেলা কংগ্রেস নেতাদের একাংশের চাপে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েও বৌদি দীপাদেবী স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারছেন না। তাই কংগ্রেসের প্রতি বিরক্ত হয়েই তৃণমূলে যোগ দিলাম। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আশীর্বাদ নিয়ে উন্নয়নের কাজ করাই আমার এখন প্রধান লক্ষ্য।”
সিপিএমের জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য তথা কালিয়াগঞ্জের বাসিন্দা ভারতেন্দ্র চৌধুরীর কটাক্ষ, “আগামী লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে প্রিয় আবেগের ভোট কাটাকাটিতে দেখাই যাক না কী হয়।” |