বাজারে জোগান এখনও স্বাভাবিক হয়নি। হাড়োয়ার পরে এ বার আলু বিক্রিকে কেন্দ্র করে তেতে উঠল দেগঙ্গা।
শুক্রবার সকালে দেগঙ্গা বাজারে আড়তদার ও খুচরো ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ক্রেতাদের বিবাদ চরমে ওঠে। দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি, ধাক্কাধাক্কি হয়। সেই সুযোগে আলুর বস্তা লুঠের চেষ্টাও হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ যায়। ব্যবসায়ীরা সরকার নির্ধারিত দরে আলু বিক্রি করতে না চাইলেও উত্তেজিত জনতার চাপে শেষমেশ ওই দামেই বিক্রি করেন।
ওই বাজারের খুচরো ব্যবসায়ীদের দাবি, আড়তদারদের কাছ থেকে তাঁরা ১৫ টাকা ৬০ পয়সা দরে আলু কিনেছেন। তা বিক্রি করছেন ১৬-১৮ টাকা কেজি দরে। বেশি দামে আলু কেনায় সরকার নির্ধারিত দামে তাঁরা বিক্রি করতে পারবেন না। তাঁদের সুরেই আড়তদারেরা দাবি করেন, সিঙ্গুরের রতনপুরের একটি হিমঘর থেকে তাঁরা ১৩ টাকা কেজি দরে আলু কিনেছেন। প্রসঙ্গত, রাজ্য সরকার জ্যোতি আলুর পাইকারি দর ১১ টাকা কেজি ও খুচরো ১৩ টাকা কেজিতে বেঁধে দিয়েছে।
এ দিন শুধুমাত্র সিঙ্গুর থানা এলাকা থেকেই ১৬ হাজার ৫৪৫ প্যাকেট আলু কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। হুগলি জেলা প্রশাসনের এক কর্তা অবশ্য বলেন, “হিমঘর থেকে আলু বের করার সময় বেশি দাম দিতে হচ্ছে, এই তথ্য ঠিক নয়। কারণ পুলিশি নজরদারি রয়েছে। যে বা যাঁরা এ সব রটাচ্ছেন, তাঁরা বিশেষ উদ্দেশ্যেই এ সব বলছেন।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, এ দিন সকাল থেকে দেগঙ্গা বাজারে ১৬-১৮ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হচ্ছিল। বেলা ৯টা নাগাদ সিঙ্গুরের রতনপুর থেকে তিন লরি আলু আসে। কিন্তু লরি তিনটিকে বাজারে না ঢুকিয়ে আড়তদারেরা নিয়ে যান আমিনপুরে গুদামে। এ খবর ছড়াতেই খুচরো বিক্রেতা এবং ক্রেতাদের মধ্যে আলুর দাম নিয়ে বচসা থেকে ধাক্কাধাক্কি, হাতাহাতি হয়। তাতে জড়িয়ে পড়েন আড়তদারেরাও। তেতে ওঠে বাজার।
ক্রেতাদের মধ্যে গোলাম ফরিদ এবং মাখন ব্যাপারী বলেন, “সরকার যখন আলুর দাম বেঁধে দিয়েছে, তখন আমরা বেশি দাম দেব কেন? ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাঁরা বেশি দামে আলু কিনছেন। কিন্তু তার কোনও রসিদ দেখাতে পারছেন না।” বাজারের খুচরো ব্যবসায়ী সামাদ মণ্ডল এবং স্মরজিৎ সরকার দাবি করেন, “আড়তদারদের কাছ থেকে আমাদের ১৫ টাকা ৬০ পয়সা দরে আলু কিনতে হচ্ছে। বস্তার মধ্যে পচা আলুও থাকছে। ছোট আলুর দাম কম। এ সব খরচ সামলে কী ভাবে ১৩ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি সম্ভব? এতে আমাদের যথেষ্ট ক্ষতি হচ্ছে।” দেগঙ্গা বাজারের আড়তদার গোপাল সর্দারের দাবি, “রতনপুর থেকে আমরা ১৩টা কেজি দরে আলু কিনেছি। এর পরে আছে গাড়ি ভাড়া, গুদাম ভাড়া, আলু নামানোর খরচ। কী ভাবে সেই আলু ১৩ টাকায় বিক্রি করব?” পুলিশের উপস্থিতিতে এই গোলমালের পরে ১৩ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করা হলেও শীঘ্র পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আলু বিক্রি বন্ধের কথা ভাবতে হবে বলেও জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। পুলিশ জানায়, আড়তদারেরা আলু কেনার কোনও রসিদ দেখাতে পারেননি।
বৃহস্পতিবার হাড়োয়ার পশ্চিম বাজারে আলুর বস্তা লুঠ হয়েছিল। এ দিন ওই বাজার-সহ বসিরহাটের নতুন বাজার, শাঁখচূড়া বাজার, হাসনাবাদ বাজারের মতো এলাকাগুলিতে জ্যোতি আলু ১৬ থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। ব্যবসায়ীদের একাংশের বক্তব্য, আলুর জোগান না বাড়লে দাম কমানো সম্ভব নয়। |