রাজনৈতিক টানাপোড়েনে তালিকা তৈরির দেড় বছর পরও গীতাঞ্জলি প্রকল্পে বাড়ি তৈরির টাকা পেলেন না কৃষ্ণনগর-২ ব্লকের ৮০টি সংখ্যালঘু পরিবার।
২০১২-১৩ আর্থিক বর্ষে জেলার ১৭টি ব্লকের ১১৫৪টি গরিব পরিবারকে পাকা বাড়ি তৈরির জন্য গীতাঞ্জলি প্রকল্পের আওতায় আনা হয়। সমস্ত ব্লকের সুবিধাভোগীরা প্রকল্পের টাকা পেলেও ব্যতিক্রম কৃষ্ণনগর-২ ব্লক। ইতিমধ্যে ২০১৩-১৪ আর্থিক বর্ষে রাজ্য সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতর আরও ২০০০টি পরিবারকে ওই প্রকল্পের আওতায় আনার জন্য চিঠি পাঠিয়েছে জেলা প্রশাসনকে। চলতি আর্থিক বর্ষে সুবিধাভোগীদের নামের তালিকা তৈরি শুরু হলেই এই ৮০টি পরিবারের টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা মাঠে মারা যাবে। ফলে আতান্তরে পড়েছেন তালিকায় নাম থাকা পরিবারগুলি।
সংখ্যালঘু, মৎস্যজীবী, বনের কাঠ-মধু সংগ্রহ করে জীবিকা ধারণ করে এমন পরিবার এই প্রকল্পের আওতায় আসতে পারে। সুবিধাভোগীদের দু’দফায় ১ লক্ষ ৬৭ হাজার টাকা দেওয়ার সংস্থান রয়েছে এই প্রকল্পে। প্রকল্পের আওতাভুক্ত হওয়ার জন্য বিপিএল তালিকাভুক্ত হতে হবে এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। নিজস্ব এক ছটাক জমি রয়েছে অথচ পাকা বাড়ি নেই এমন দরিদ্র পরিবারই প্রকল্পের আওতায় আসার উপযোগী।
কৃষ্ণনগর-২ ব্লকের তৃণমূল ও কংগ্রেস চালিত পঞ্চায়েত সমিতি ২০১২ সালের মাঝামাঝি নাগাদ ৮০টি পরিবারকে গীতাঞ্জলি প্রকল্পের অধীনে নিয়ে আসে। ওই ব্লকের প্রাক্তন সভাপতি কংগ্রেসের আমেনা বিবি বলেন, “সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে স্থায়ী সমিতিতে আলোচনার মাধ্যমে পরিবারগুলির অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তৈরি করা হয় তালিকা। বিডিও সেই তালিকায় স্বাক্ষর করে জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠিয়ে দেন।” |
এরপরই শুরু হয় শাসক দলের আভ্যন্তরীণ কোন্দল। তৃণমূলের একাধিক স্থানীয় নেতা, প্রাক্তন পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যরা বলছেন, কৃষ্ণনগর দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক তথা রাজ্যের কারিগরি শিক্ষা দফতরের মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসের আপত্তিতেই জেলা প্রশাসনের কাছে জমা পড়া তালিকা অনুযায়ী কোনও পরিবার আজ অবধি বাড়ি তৈরির জন্য একটি পয়সাও পায়নি। কৃষ্ণনগর-২ ব্লকের কংগ্রেস সভাপতি রণজিৎ গুহ বলেন, “পঞ্চায়েত সমিতি কংগ্রেস ও তৃণমূল যৌথ ভাবে পরিচালিত ছিল। তৃণমূলের সদস্যদের সঙ্গেও মন্ত্রীর সদ্ভাব ছিল না। তাই তিনি তৈরি তালিকা জেলা প্রশাসনকে খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন।” উজ্জ্বলবাবুর বক্তব্য, “ওই তালিকায় এমন অনেকের নাম ছিল যাঁরা আর্থিক ভাবে সচ্ছল। তাই তদন্তের নির্দেশ দিই।” সভাপতি আমেনা বিবি অবশ্য বলেন, “আমি বেড়ার ঘরে থাকি। পঞ্চায়েত সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেই নাম ঢোকানো হয়।”
নদিয়ার জেলা শাসক পিবি সালিম বলেন, “পঞ্চায়েত সমিতির তৈরি করা তালিকা নিয়ে কোনও কোনও মহলে আপত্তি ছিল। তাই জেলা সংখ্যালঘু বিষয়ক আধিকারিককে বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়।” মাস খানেক আগে জেলা সংখ্যালঘু ভবনের তরফে তালিকাভুক্তদের বাড়ি গিয়ে আর্থিক হাল হকিকত সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া হয়। সংখ্যালঘু বিষয়ক আধিকারিক সৌরভ সেনগুপ্ত বলেন, “দু’একটি পরিবার ছাড়া বাকি সব পরিবারই গীতাঞ্জলি প্রকল্পে গৃহ পাওয়ার উপযোগী। এ ব্যাপারে জেলা শাসককে রিপোর্ট পাঠিয়ে দিয়েছি।” জেলা শাসক তালিকার কিছু রদবদল ঘটিয়ে শীঘ্রই সুবিধাভোগীদের টাকা দেওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু এত দিন ধরে টালবাহানা চলতে থাকায় গরিব পরিবারগুলো গালভরা প্রতিশ্রুতিতে ভরসা রাখতে পারছে না। সোমবার ধুবুলিয়ার বটতলা, ঝিটকেপোতা এলাকার তালিকায় নাম থাকা ২৭টি পরিবার ডিএম-এর কাছে ডেপুটেশন দিয়েছে। মাথার উপর উপযুক্ত ছাউনি নেই, পাটকাঠি বা বেড়ায় ঘেরা শীত কী ভাবে কাটবে সেই আশঙ্কাতেই দিন গুনছে পরিবারগুলি। ধুবুলিয়ার হরিনডাঙার বাসিন্দা নাসির শেখ বলেন, “ভাঙাচোরা ঘর মেরামতি করতে পারিনি। ভেবেছিলাম পাকা ঘর পাব। কিন্তু তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও কিছুই হল না। এই শীতে কী ভাবে দিন কাটবে তা ভাবতেই শিউরে উঠছি।” |