|
|
|
|
বাঁধের উপর অবৈধ নির্মাণ, বাড়ি-সহ রাস্তা ধসে বিপত্তি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক |
প্রত্যন্ত এলাকা নয়, খোদ জেলা সদর তমলুক। পুলিশ-প্রশাসনের নাকের ডগায় তমলুক শহরের উত্তরচড়া এলাকায় শঙ্করআড়া খালে সেচ দফতরের বাঁধের মাটি কেটে একের পর এক অবৈধ নির্মাণ হয়েছে গত কয়েক বছরে। দুর্বল হতে-হতে অবশেষে শুক্রবার সকালে ষোলোফুকার গেটের কাছে কয়েকটি বাড়ি ও মন্দির-সহ বাঁধের উপর তৈরি পুরসভার পাকা রাস্তার বেশ কিছু অংশ ধসে যায়। খালের বাঁধ ভেঙে বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে রটে যায় ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে। আতঙ্ক ছড়ায় এলাকায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বেআইনি ওই নির্মাণকারীদের বিরুদ্ধে পুরসভা ও সেচ দফতর কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ার জন্যই এই অবস্থা। পুরসভার অনুমতি না নিয়ে বাড়িগুলি হয়েছে বলে দায় এড়িয়েছেন তৃণমূল পরিচালিত তমলুকের পুরপ্রধান দেবিকা মাইতি। আর সেচ দফতর ব্যবস্থা নেব বলে দায় সেরেছে।
তমলুক শহরের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া রূপনারায়ণে চারটি প্রধান নিকাশিখাল মিশেছে। গঙ্গাখালি, পায়রাটুঙ্গি, শঙ্করআড়া ও প্রতাপখালিএই চারটি খালের মাধ্যমে তমলুক শহর ছাড়াও তমলুক, নন্দকুমার, পাঁশকুড়া ও শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকার বর্ষার জল বেরিয়ে রূপনারায়ণে পড়ে। আবার শীতকালে বোরোধান চাষের সময় রূপনারায়ণের মিষ্টি জল এই সব খালের মাধ্যমে চাষের জমিতে যায়। এই সব খালের দু’পাড় দখল করে বহু বেআইনি বাড়ি-ঘর তৈরি হয়েছে। রেহাই পায়নি খোদ তমলুক শহরের মধ্যে দিয়ে যাওয়া শঙ্করআড়া খালের বাঁধও। রূপনারায়ণে পড়ার আগে ওই খালে রয়েছে ষোলো দরজা বিশিষ্ট লকগেটযা ষোলোফুকার গেট হিসেবে পরিচিত। গেটের কাছেই শঙ্করআড়া খালের দু’পাড় বেআইনি ভাবে দখল করে বাঁধের দু’দিকে বহু বাড়ি, দোকানঘর তৈরি হয়েছে। গত ৫-৬ বছরের মধ্যে বাঁধের উত্তর দিকের প্রায় পুরোটাই বেদখল হয়ে গিয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঁধে যাঁরা বাড়ি বা দোকান ঘর বানিয়েছেন, তাঁদের অনেকেরই কাছাকাছি এলাকায় স্থায়ী বাড়ি রয়েছে। খাল বাঁধের পাড় বেআইনি ভাবে দখল করে অনেকে মোটা টাকার বিনিময়ে তা অন্য ব্যক্তিকে হস্তান্তর করেছে। |
|
তমলুকের উত্তর চড়ায় শঙ্করআড়া খালের বাঁধের রাস্তা ভেঙে পড়ছে এই ভাবেই। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস। |
সম্প্রতি পাঁশকুড়ার রানিহাটিতে কাঁসাইয়ের বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এখন শঙ্করআড়া খাল দিয়ে ওই জল বেরোচ্ছে বলে প্রবল জলস্রোত রয়েছে। শুক্রবার ষোলোফুকার গেটে গিয়ে দেখা যায় খালের উত্তর দিকের বাঁধের ধারে থাকা একাধিক ছোট পাকাবাড়ি, একটি নির্মীয়মাণ দোতলা বাড়ি, পাশেই মন্দির-সহ বাঁধের একাংশ ধসে গিয়েছে। খাল বাঁধের উপর পুরসভার তৈরি পাকা রাস্তার একাংশও ধসে গিয়েছে। ফলে ওই রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, খালবাঁধে গত তিন-চার দিন ধরেই একটু-একটু করে ধস নামছে। বাঁধের পাড়ের মাটি কেটে বেআইনি ভাবে বাড়ি নির্মাণের জেরেই এই ঘটনা বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
কিন্তু পুরসভার মধ্যে থাকা সেচ দফতরের ওই বাঁধের উপর বাড়ি-ঘর নির্মাণ করার অনুমতি দিল কে? স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর তথা প্রাক্তন পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ সেন বলেন, “অনুমতি না নিয়ে বেআইনি ভাবেই ওই সব বাড়ি-ঘর হয়েছে। যখন বাঁধের ওই সব জায়গা বারবার কেনাবেচা ও বাড়ি তৈরির কাজ হচ্ছিল, তখনই আমরা গিয়ে বাধা দিয়েছিলাম কিন্তু ওরা কথা শোনেনি। উল্টে আমার বিরুদ্ধে নানা কথা বলেছে। এবিষয়ে সেচ দফতরকে বলা হলেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। বেআইনি নির্মাণের জেরে মাত্র আড়াই বছর আগে তৈরি পুরসভার পাকা রাস্তাও ধসেছে। অবিলম্বে বাঁধ মেরামতের ব্যবস্থা না করলে বাঁধ ভেঙে বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।” রবীন্দ্রনাথবাবু জানান, ষোলোফুকার গেটের পূর্ব দিকের ডান দিকের বাঁধেও ধস নেমে কিছু বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেচ দফতরের পূর্ব মেদিনীপুর বিভাগের নির্বাহী বাস্তুকার স্বপন পণ্ডিত বলেন, ‘‘শঙ্করআড়া খালের বাঁধে ধস নামার ঘটনা আমাদের নজরে এসেছে। বেআইনি নির্মাণকারীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |
|
|
|
|
|