সম্পাদকীয় ২...
পাঠ সহজ নহে
র্যটকদের সরকারি পর্যটন-আবাসে আকৃষ্ট করিতে কর্মীদের আচরণের সহজ-পাঠ দিতে চাহিতেছেন পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন মন্ত্রক। পর্যটকদের সহিত ভদ্র ব্যবহার, তাঁহাদের বিভিন্ন জিজ্ঞাসার যথাসম্ভব সদুত্তর দেওয়া, আবাসের শয্যা, শয়নকক্ষ, বাথরুম পরিপাটি ও পরিচ্ছন্ন রাখা, পর্যটকদের পরিবেশন করা খাদ্যের গুণমান বৃদ্ধি করা, ইত্যাদির দিকে নজর দিতে চাহে মন্ত্রক। এই সবই কিন্তু ন্যূনতম পর্যটক পরিষেবা, যাহা দেশের অনেক রাজ্যের সরকারি পর্যটন কেন্দ্রেই মিলিয়া থাকে। পশ্চিমবঙ্গ এক ব্যতিক্রম, যেখানে সরকারি পর্যটন কেন্দ্রের নিত্যকর্মগুলিও নিষ্ঠার সহিত পালন করাইতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকে নির্দেশ জারি করিতে হয়। কেন এই রাজ্য দেশের পর্যটন মানচিত্রে স্থান পায় না, বুঝিতে অসুবিধা নাই।
প্রশ্ন হইল, আচরণের সহজ-পাঠ কি অনিচ্ছুক কর্মীদের কর্মসংস্কৃতি বদলাইবার পক্ষে যথেষ্ট? কর্মী-ইউনিয়নের নেতারা পর্যাপ্তসংখ্যক কর্মীর অভাবের অজুহাত তুলিয়াছেন। রাজ্যের ২৮টি পর্যটন আবাসের জন্য তিনশত কর্মী (অর্থাৎ আবাস-পিছু গড়ে ১০ জন) নিতান্ত কম কি? কর্মীবৃদ্ধিতে পর্যটকদের পরিষেবা উন্নত হইবে, এমন নিশ্চয়তা কোথায়? সর্ব স্তরের সরকারি কর্মচারীদের কর্মসংস্কৃতি ধ্বংস করিয়া দিবার যে সচেতন প্রয়াস বিগত কয়েক দশক যাবৎ রাজ্যের রাজনীতিকরা করিয়া আসিয়াছেন, তাহা কাজ করার মানসিকতাই নষ্ট করিয়া দিয়াছে। কাজ করার জন্যই যে কর্মচারীরা বেতন পান, এই ধারণাটিই লোপ পাইয়াছে। কেবল আচরণের সহজ-পাঠ এই মানসিকতা কেমন করিয়া বদলাইবে?
অতিথিকে দেবতা জ্ঞানে যত্ন করার কথা ছাড়িয়াই দেওয়া গেল, তাঁহাদের সহিত নম্র, ভদ্র ব্যবহার করার অভ্যাসও যাহাদের নাই, তাহাদের পর্যটনমন্ত্রী কী শিখাইবেন? ইহার গভীরে হয়তো এক সামাজিক সমস্যাও নিহিত। বিনয় এবং কর্মনিষ্ঠা সম্ভবত বঙ্গবাসীর অভিধান হইতে ক্রমাবলুপ্তির পথে। সেই বাঙালি যদি হয় সরকারি কর্মচারী, তবে তো তাহাকে ঔদ্ধত্য ও অবিনয়ের পরাকাষ্ঠা রচনা করিতেই হইবে। এই অবস্থায় গাঁটের কড়ি গনিয়া কেন খামখা পর্যটকরা রাজ্য সরকারের পর্যটন আবাসে ভিড় জমাইবেন? তাই বঙ্গীয় পর্যটকরা রাজস্থান-হিমাচল ছোটেন। অবশিষ্ট দেশের পর্যটকরাও এ রাজ্যে ভ্রমণে আসিয়া হয়রান হইতে চাহেন না। ভুঁইফোঁড় বেসরকারি পর্যটন সংস্থাগুলিকে দায়িত্বশীল করিয়া তোলা নিশ্চয় জরুরি। কিন্তু সরকারি পর্যটন ব্যবস্থাটির খোল-নলিচা পাল্টানো সর্বাগ্রে প্রয়োজন। একই কর্মীরা সরকারি চাকুরির নিরাপত্তা ছাড়িয়া বেসরকারি পর্যটন আবাসে কাজ লইলে দেখা যাইবে, অনেক নিষ্ঠা ও মনোযোগের সহিত পরিষেবা দিতেছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতেই বৃহত্তর প্রশ্ন হইল, সরকারের লোকসানে-চলা পর্যটন-আবাস চালাইবার দরকার কী? যে-সব রাজ্যে পর্যটনে সরকারি নজরদারি বহাল, সেখানেও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থাকে পর্যটন কেন্দ্র চালাইবার বিভিন্ন দায়িত্ব (যেমন খাদ্য রান্না ও পরিবেশন, পর্যটক-যানের ব্যবস্থা, গাইড সরবরাহ, আবাসের ঘরদোর সাফ করা) ভাগ করিয়া দেওয়া হইয়াছে। কোথাও কোথাও পর্যটন উন্নয়ন নিগমের মতো স্বশাসিত সংস্থা গড়িয়া তাহার হস্তে পর্যটনকেন্দ্র পরিচালনার ভার ছাড়িয়া দেওয়া হইয়াছে। পশ্চিমবঙ্গও সেই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করিতে পারে। অবশ্য সে জন্য পুরানো চিন্তার দাসত্ব ছাড়িতে হইবে। রাষ্ট্রসর্বস্ব নীতিকাররা তাহা পারিবেন কি?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.