|
|
|
|
|
|
|
সিনেমা সমালোচনা... |
|
মিয়োনো বারুদ=কৃষ ৩ |
রোশন পরিবারের দিওয়ালি প্যাকেজে একমাত্র রোশনাই হৃত্বিক। লিখছেন আবির চট্টোপাধ্যায়। |
দীর্ঘ ক’বছরের অপেক্ষা সরিয়ে রোশন পরিবার ‘কৃষ ৩’ উপহার দিলেন। দিওয়ালিতে পারিবারিক সুপার হিরো দর্শনের সুযোগ।
প্রথমেই বলে রাখা ভাল, ছেলেবেলায় কমিক স্ট্রিপে মাকড়সা-মানুষ বা বড় বেলায় নোলান অনুরাগী হয়ে বাদুড়-মানুষ পছন্দ হলেও খুব একটা আকর্ষণ করেনি আমায়।
আর সায়েন্স ফিকশন? অনেকটা প্রথম দর্শনের প্রেমের মতো বুদবুদ কেটেই মিলিয়ে গিয়েছে। তাই ‘কৃষ ৩’ নিয়ে বিরাট কিছু চাহিদা ছিল না। কিন্তু গোদা অক্ষরে যেটুকুও বা ছিল, তা’ও কি পূরণ হল?
ছবির শুরুতে কৃতজ্ঞতার তালিকায় পর পর অমিতাভ বচ্চন আর নাসিরুদ্দিন শাহর নাম দেখে বেশ রোমাঞ্চ লাগে। কিন্তু, ওইটুকুই। বচ্চন সাহেব শুধু গলা দিয়েছেন। ওঁর ব্যারিটোন কণ্ঠ যে তেমন সাড়া ফেলেছে, এমনও নয়।
কৃষ্ণ (হৃত্বিক রোশন) ও তার বাবা রোহিত (হৃত্বিক রোশন) এবং বৌ প্রিয়াকে (প্রিয়ঙ্কা চোপড়া) নিয়ে সুখের সংসার। মাঝে মধ্যে কৃষ্ণকে মুখোশ পরে কৃষ হয়ে যেতে হয় তামাম দুনিয়ার (পড়ুন মুম্বইয়ের) নানা সমস্যা সমাধানে।
অন্য দিকে নাম-না-জানা বরফ ঢাকা পাহাড়ে ভিলেন কাল (বিবেক ওবেরয়) ভয়ঙ্কর ডিএনএ পরীক্ষা করে ‘মিউটেন্ট’ বানায়। যা এক ধরনের মারণ বীজ। সঙ্গে তার প্রতিষেধকও। এই দুইয়ের ব্যবহারে সে তার ক্ষমতা বিস্তার করে।
ক্ষমতাবাজ কাল-এর সঙ্গে কৃষ-এর লড়াই এই হল গল্পের ধরতাই। মশলা ছিল। কিন্তু বারুদ জ্বলল কই!
এমনিতেই সাই-ফাই ছবিতে গল্পের গরু গাছে কেন মাল্টিস্টোরিড বিল্ডিং-এর ছাদেও চড়তে পারে। তবে মুম্বই শহরের স্কাইলাইন বলে বার বার যে শহরের কম্পিউটারচালিত ছবি দেখানো হল, তার সঙ্গে চেনা বাণিজ্যনগরীর মিল খোঁজা কষ্টসাধ্য।
ছবির বাজেটের সিংহভাগ খরচা হয়েছে কমপিউটারে তৈরি ভিসুয়াল এফেক্টস্-এ। এবং বাদশা খানের ‘রেড চিলিজ’ তাতে লেটার মার্কস পাবেন। তবে খরচা সংক্ষেপণের জন্য অত্যন্ত মাঝারি মানের সেট বড্ড দৃষ্টিকটু। এমনকী জুনিয়র আর্টিস্টদের ব্যবহারেও ব্যয় সংকোচের সেই দাগড়া দাগটা বয়ে বেড়ায়।
গল্প বলছি সাই-ফাই। অথচ তার ট্রিটমেন্ট মান্ধাতা আমলের, অপেশাদার। সে এরোপ্লেনের সামনের চাকায় উড়ন্ত কৃষ বা গয়না দোকান সামলানোর মারামারির দৃশ্য যাই-ই হোক না কেন।
সারাটা সময় জুড়ে হাজারটা প্রশ্ন ঘা মেরে যায়। শহরতলিতে অত বড় বাড়ি, অথচ কৃষ কেন নিত্য নতুন মামুলি চাকরির খোঁজ করে? শুধু ‘বোর্নভিটা’ খাইয়ে রোহিতের ‘কোই মিল গ্যয়া’র স্মৃতি কেন উসকে দেওয়া হয়? আরিফ জাকারিয়ার মতো ওরকম শক্তিশালী অভিনেতা অমন হাস্যকর পরচুলা পরেন কেন?
মানলাম কৃষ সুপার হিরো। কিন্তু সেটা তার স্ট্যাচুর পায়ের তলায় লিখে বা বার বার হৃত্বিক রোশনের অমানুষিক সিক্স প্যাক ও খোদাই করা চেহারা দেখিয়ে আন্ডারলাইন করা হবে কেন? ছবির মধ্যে কারণে-অকারণে হৃত্বিকের এন্ডোর্স করা বিভিন্ন প্রোডাক্টের ইন-ফিল্ম ব্র্যান্ডিংই বা কী কারণে? |
|
কৃষ ৩
হৃত্বিক, প্রিয়ঙ্কা, কঙ্গনা |
আর বড় বেশি করে ক্লান্তিকর ‘কোই মিল গ্যয়া’ ও ‘কৃষ’-এর সঙ্গে এ ছবির সম্পর্ক ছত্রে ছত্রে মনে করিয়ে দেওয়া। ‘কৃষ’ আমাদের হোম মেড সুপার হিরো। কয়েক বছর পরে ফ্র্যাঞ্চাইজির তৃতীয় ইন্সস্টলমেন্টে দর্শক যেন তাকে ভুলে না যান, এ কি তারই বন্দোবস্ত? এই অনাস্থা কি শুধুই দর্শকের ওপর, না নিজেদের ওপরও?
এরকম আরও অসংখ্য প্রশ্ন।
ছবিতে অতিরিক্ত হৃত্বিক-নিভর্রতাও বড্ড প্রকট। তিনটি ভূমিকায় তিনি। সরল-বিজ্ঞানী বৃদ্ধ রোহিতের মধ্যে এখনও ‘কোই মিল গ্যয়া’-র মাটির টান। যদিও ছবির গল্পের মতো চরিত্রের সরলতাও জোর করে চাপানো। তবে সুপারহিরো কৃষ বা প্রেমিক ও বাধ্য পুত্র কৃষ্ণর চরিত্রে বড্ড ভাল দেখিয়েছে হৃত্বিককে। চিরকালই তিনি পরদায় ‘গ্রিক গড’। এ ছবিতে সিংহভাগ জুড়ে দাপটে অভিনয় করেছেন তিনি। ছবির মার্কশিটে নম্বর অনেকটাই তাঁর জন্য।
ছবির নায়িকা প্রিয়ঙ্কা একটু কৃত্রিম হয়েও মানানসই। অন্য রকম ভূমিকায় কঙ্গনা বেশ চমকপ্রদ ও সাহসী। দুজনেই তাঁদের শরীরী অভিনয়টাও তুখড় করেছেন। অন্য দিকে ছবির ‘ভয়াল ভিলেন’ বিবেক ওবেরয়ের চড়া গ্রামের অভিনয়, উচ্চ হাসি, ভারিক্কি গলা বড্ড সেকেলে। তাতে ভয়ের চেয়ে বেশি ‘মজা’ লাগে।
রাজেশ রোশনের সঙ্গীত আগের দুটো ছবির তুলনায় বেশ দুর্বল। তাই হল থেকে বেরিয়ে গান আর কানে থাকে না। আচ্ছা, জন্মদিনের পার্টিতে সবাই ‘রঘুপতি রাঘব রাজারাম’ গায় কেন? ‘এক্স ম্যান’, ‘উল্ভারিন’, ‘অ্যাভেঞ্জার্স’ দেখা আজকের প্রজন্মের কাছে এ ছবির গল্প হ্যাস্যকর। স্টান্ট ও কমপিউটার গ্রাফিক্সের কাজ চমকপ্রদ হলেও ‘ক্ল্যারিটি’র বড় অভাব। ক্লাইম্যাক্সে বিবেক ওবেরয়ের ইস্পাতের কস্টিউম তো বেশ কৌতুকপ্রদ। তেমনই হতাশাব্যঞ্জক শুধুমাত্র কিছু স্টক শট ব্যবহার করে অনামা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মহামারী দেখানোর চেষ্টা।
তবে ছবির বেশ কিছু সংলাপ চমকে দেওয়ার মতো। ‘ভয়ের ব্যবসাই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও লাভজনক ব্যবসা’ বা ‘ভারতে জনসংখ্যার চেয়েও বেশি হারে বেড়ে চলেছে দেব-দেবীর অস্তিত্ব’। কিংবা ‘আমাদের ভবিষ্যৎটা দাঁড়িয়ে আছে ফিউশনের উপর’।
আজকের দিনে খলনায়কেরা যে শুধু অঙ্গুলিহেলনে আর প্রযুক্তির ব্যবহারেই পৃথিবী শাসন করেন এবং বিজ্ঞানকে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য ব্যবহার করেন, তা’ও দেখানো হয়েছে চমকপ্রদ ভাবে। ভাল মন্দের ডিএনএ গঠন যে একই সময়ে, ফারাক শুধু প্রয়োগে, তার মেসেজটিও এখানে বেশ জোরালো।
নটে গাছটি মুড়নোর আগে বলি, ছবির শেষে পরবর্তী সিক্যুয়েল বানানোর ঘোষণা স্পষ্ট। আশা রাখব, পরের বার আরও পরিণত গল্প ও ট্রিটমেন্ট নিয়ে আসুক ‘কৃষ’।
পুনশ্চ: ছবির নাম ‘কৃষ ৩’। এই ‘৩’-এর ব্যবহারের প্রকৃত কারণটা অজানাই। তা হলে কি ‘কোই মিল গ্যয়া’ এক নম্বর, নাকি এটাও ছবির সব চরিত্রের নাম ‘ক’ দিয়ে শুরু হবার মতোই কাকতালীয় ‘নাম্বার গেম’? |
|
|
|
|
|