চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১...
তরবারি হাতে ছুটন্ত ঘোড়ার সঙ্গে দীপ্ত মানবীমূর্তি
প্রতি বছরের মতো এ বছরেও স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে গ্যালারি লা মেরে-তে অনুষ্ঠিত হল ‘ফ্রিডম ২০১৩’ শিরোনামে সম্মেলক প্রদর্শনী। এই দিনটি ঋষি শ্রীঅরবিন্দেরও জন্মদিন। ‘স্বাধীনতা’ এই প্রদর্শনীর শিরোনাম হলেও খুব কম কাজেই তার প্রত্যক্ষ প্রতিফলন ছিল। অধিকাংশ শিল্পীই নিজস্ব আঙ্গিকে কাজ করেছেন। প্রদর্শনীর কেন্দ্রীয় ভাবনা অনেককেই তেমন ভাবায়নি। তা নইলে এই সময়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে মানবিক পরিস্থিতির যে টালমাটাল চলছে, ‘স্বাধীনতা’র অনেক জটিল মাত্রা তো তার মধ্যে বিধৃত। তার কিছু প্রতিফলন যদি এই প্রদর্শনীতে থাকত, তা হলে প্রদর্শনীটি আরও অভিনিবেশযোগ্য হতে পারত। কিন্তু এখনকার অনেক প্রদর্শনীতেই ‘কিউরেশন’ কথাটির তেমন কোনও তাৎপর্য থাকে না। আলোচ্য প্রদর্শনীটিও ব্যতিক্রম নয়। তা ছাড়া ‘ডকুমেন্টেশন’ বা তথ্য পঞ্জীকরণের দিক থেকেও অনেক অসম্পূর্ণতা প্রদর্শনীটিকে ভারাক্রান্ত করেছে।
তবু বিষয়ের কথা না ভেবে যদি প্রদর্শনীটি দেখা যায়, তা হলে সদর্থক কিছু উঠে আসতেও পারে। ৩৮ জন শিল্পী অংশগ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে মাত্র দু’জন ভাস্কর।
নিরঞ্জন প্রধানের ব্রোঞ্জে করা সত্যজিৎ রায়ের মুখাবয়বটি স্বাভাবিকতাবাদী ভাস্কর্যের অসামান্য দৃষ্টান্ত। মৃণালকান্তি গায়েনের ব্রোঞ্জ ‘প্লে-থিং’ আঙ্গিকের দিক থেকে নতুন ভাবনায় সঞ্জীবিত।
শিল্পী: দেবব্রত চক্রবর্তী
ছবিতে স্বাধীনতার ভাবনা নিয়ে অল্প যে ক’জন শিল্পী কাজ করেছেন তাঁদের মধ্যে দেবব্রত চক্রবর্তী অন্যতম। তাঁর অ্যাক্রিলিকের ক্যানভাসটির শিরোনাম ‘ঝাঁসির রানি’। ছুটন্ত ঘোড়ার সঙ্গে তরবারি হস্তে যুদ্ধযাত্রায় দীপ্ত মানবীমূর্তির উপস্থাপনা ছবিটির কেন্দ্রীয় বিষয়। প্রেক্ষাপটে অন্ধকার। সামনে বিদ্যুৎ ঝলকের মতো আলোর উদ্ভাস লক্ষ্মীবাঈয়ের মুখে ও ঘোড়ার শরীরে। মানবী এখানে যেন দেবী দুর্গায় অভিষিক্ত হয়েছেন।
হিরণ মিত্র ও পুষ্পল সরকার দু’জনের ছবিরই শিরোনাম ‘ফ্রিডম’। দু’জনেই বিমূর্ত ছবি এঁকেছেন। দৃশ্যমান বাস্তবতার সঙ্গে তার বিশেষ সম্পর্ক নেই। প্রদর্শনীটির অন্যতম শ্রেষ্ঠ ছবি অনিমেষ নন্দীর ‘গ্লোয়িং’ শিরোনামে তেলরঙের ক্যানভাস। মূর্ত ও বিমূর্তের সম্মিলন এই রচনাটিতে। পার্থপ্রতিম দেবের ‘ইমেজ’ শীর্ষক ক্যানভাসটিতেও বিমূর্তেরই প্রাধান্য। তমসার আবরণ ভেদ করে জেগে উঠছে যে আলোর আভাস, স্বাধীনতার পরোক্ষ ইঙ্গিত থাকে তাতেও। অসিত পোদ্দার, তপন মিত্র, প্রদীপ মৈত্র, অতনু ভট্টাচার্য ও গৌতম শর্মা যে বিমূর্তায়িত নিসর্গ এঁকেছেন, তাতে অন্ধকার থেকে আলো উত্তরণের প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত রয়েছে।
বাস্তবতার অন্তর্লীন তমসার প্রতীকী অভিক্ষেপ কয়েকটি ছবিকে তাৎপর্যপূর্ণ করেছে। সমীর সাহার অভিব্যক্তিদীর্ণ মুখাবয়বটি তার অন্যতম। রবীন রায়ের ড্রয়িংধর্মী ছবিটির শিরোনাম ‘ডেড ফিশ অ্যান্ড দ্য অ্যান্টস’। চিত্রপটে পড়ে আছে একটি মৃত মাছের সম্মুখভাগ। কিছু পিঁপড়ে ধাবিত হচ্ছে সে দিকে। নষ্ট হয়ে যাওয়ার প্রতীকী আভাসের ভিতর এই সময়ের স্বাধীনতা ভাবনার কিছু ইঙ্গিত থাকে। মল্লিকা দাস সুতারের অনামা রচনাটিতে চিংড়ি মুখে বিড়ালের উপস্থাপনাও স্বাধীনতা ও হিংসার প্রচ্ছন্ন সম্পর্কের ইঙ্গিতবাহী। প্রমথেশ চন্দ্রের অ্যাক্রিলিকের রচনাটির শিরোনাম ‘কাপ’। পিছন ফিরে থাকা একটি মুখের উপস্থাপনা। তার স্বচ্ছতার ভিতর দিয়ে মূর্তিটির হাতে ধরা একটি চায়ের কাপ দৃশ্যমান। প্রতিবাদী চেতনা ও চিত্রগত গাঠনিকতার বাঁধুনিতে ছবিটি তাৎপর্যপূর্ণ। মলয় সাহার ‘কম্পেনিয়ন’ একটি ঘরের অভ্যন্তরের দৃশ্য। জ্যামিতিক বিন্যাসের ঋজু ছন্দ বিশেষ অভিনিবেশযোগ্য। হারীৎ বসুর ‘ইনভোক’ শীর্ষক রচনাটিও উল্লেখযোগ্য। ঐতিহ্যগত আঙ্গিক নিয়ে যাঁরা দীপ্ত কাজ করেছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়, কৃষ্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়, অমিত সরকার গণেশ হালুই-র বিমূর্তায়িত নিসর্গও এ দিক থেকে তাৎপর্যপূণ অমলনাথ চাকলাদার, শুক্তিশুভ্রা প্রধান, সোহিনী ধর ও গৌতম বসু। সুহাস রায় ও ব্রতীন খানের মুখাবয়ব রচনাও এই পর্যায়েরই অন্তর্গত। আমাদের ঐতিহ্যগত আঙ্গিক কেমন করে প্রসারিত হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে, এই রচনাগুলি তারই দৃষ্টান্ত।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.