স্টেশনেই মা হলেন মেট্রোযাত্রী
ছর চুয়াল্লিশের অশোক দে-র ঘোর কাটছে না। এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না, তিনি নিজের হাতে মেট্রো স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে এক মহিলার প্রসব করিয়েছেন!
শুক্রবার দুপুর সওয়া দু’টো। রোজের মতোই গিরিশ পার্ক স্টেশনে ডিউটিতে এসেছিলেন মেট্রোর লাইসেন্সধারী পোর্টার, শ্রীরামপুরের বাসিন্দা অশোকবাবু। স্টেশনে নামতেই দেখলেন, এক মহিলাকে ঘিরে জটলা। প্ল্যাটফর্মে বসে কাতরাচ্ছেন ওই মহিলা। তাঁর সঙ্গী এক ব্যক্তি ও এক জন মহিলা অসহায় ভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। এ দিকে, অন্য মহিলাটির প্রসবের লক্ষণ ততক্ষণে খুবই স্পষ্ট হয়ে দেখা দিতে শুরু করেছে। তার সঙ্গে শারীরিক প্রতিক্রিয়াও।
অশোকবাবুর কথায়, “আমার দুই ছেলে আছে। কিন্তু জীবনে এমন দৃশ্য দেখিনি! হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম! ওই প্রসূতির সঙ্গী দু’জন কাতর হয়ে অনুরোধ করলেন, ‘একটু সাহায্য করুন দয়া করে। বাচ্চাটাকে আমাদের সঙ্গে একটু ধরুন।’ ঠিক তিন মিনিট, আমি ঘড়ি দেখেছি। আমার হাতের উপরে বাচ্চাটা বেরিয়ে এসে কেঁদে উঠল। এখনও ভাবলে গায়ে কাঁটা দিচ্ছে!”
লোকাল ট্রেনে প্রসব-যন্ত্রণা উঠে সন্তানের জন্ম দেওয়ার ঘটনা আগেও ঘটেছে। তবে, মেট্রোরেলের ইতিহাসে এমন ঘটনা এই প্রথম বলে জানান মেট্রোর জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র।
শুক্রবার দুপুরে গিরিশ পার্ক স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে জন্মানো শিশুকন্যার মা-বাবা বাংলাদেশি। তাঁদের নাম মুমতাজ বিবি ও শেখ রফিকুল ইসলাম। রফিকুল পেশায় ভ্যানচালক। ওই দম্পতির বড় ছেলে চোদ্দো বছরের শেখ আশিক রক্তের ক্যানসারে আক্রান্ত। এক সপ্তাহের ভিসা নিয়ে গত বুধবার আশিককে নিয়ে ভারতে আসেন মুমতাজ। উদ্দেশ্য ছিল, ঠাকুরপুকুর ক্যানসার হাসপাতালে ছেলের চিকিৎসা করানো। শুক্রবার হাসপাতাল থেকে উত্তর ২৪ পরগনার গুমায় দেওরের বাড়ি ফেরার পথে প্রসব-বেদনা ওঠে আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা মুমতাজের। দুপুর আড়াইটে নাগাদ গিরিশ পার্ক স্টেশনেই আড়াই কিলো ওজনের ফুটফুটে মেয়ের জন্ম দিয়েছেন তিনি। মেট্রোকর্মী ও পুলিশ দু’জনকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। মা ও শিশু দু’জনেই সুস্থ রয়েছেন।
হাসপাতাল থেকে ফোনে মুমতাজ বলেন, “বাংলাদেশের যশোহর জেলার কেশবপুরে বাড়ি আমাদের। মেয়ে যে কলকাতা শহরে জন্মাবে কস্মিন কালেও ভাবিনি। কলকাতার লোকজন এত ভাল, এত সাহায্য করল কী বলব!”
আরও বললেন, “বড় ছেলে ক্যানসার হাসপাতালে ভর্তি। দু’বছর ধরে ওকে নিয়ে কলকাতায় যাতায়াত করছি। আমার এক মেয়ে ছিল। তিন মাস বয়সে ওরও ক্যানসার ধরা পড়ে। ন’মাসে মারা যায়। মনে হচ্ছে, আল্লা আমার সেই মরা মেয়েকে ফিরিয়ে দিলেন।” সাত দিনের ভিসা নিয়ে এসেছিলেন। ছেলের কেমোথেরাপির তারিখ পিছিয়ে যাওয়ায় সঠিক সময়ে দেশে ফেরা হয়নি। দশ দিন পেরিয়ে গিয়েছে। তা নিয়ে অবশ্য চিন্তা করছেন না মমতাজ। মেয়ে সুস্থ আছে, তাতেই তিনি খুশি। ভারতের মাটিতে জন্মানোর ফলে স্বাভাবিক ভাবেই সদ্যোজাত যে ভারতের নাগরিক হয়ে গেল অতশত অবশ্য এখনও বুঝতে পারেননি।
মুমতাজের দেওর কবীর দফাদার ও তাঁর স্ত্রী শাকিলা বিবি জানান, সকাল থেকেই মুমতাজের পেটে যন্ত্রণা শুরু হয়েছিল। প্রথমে উনি ভেবেছিলেন, বড় ছেলের অসুখের চিন্তায় শরীর খারাপ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যন্ত্রণাও বাড়ে। তখনই বাড়ি ফেরার জন্য তাঁরা মহানায়ক উত্তমকুমার স্টেশন থেকে মেট্রো ধরেন। তার পরেই ঘটে যায় এই ঘটনা।
আর অশোকবাবু বলছেন, “কী সুন্দর দেখতে হয়েছে বাচ্চাটিকে! আমার স্ত্রীও সব শুনে খুশি।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.