বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নেট-জালের বিপদ কোথায়,
বুঝতে গেলেন ‘বুম্বাদা’
স্কুলপড়ুয়া ছেলের সঙ্গে পাল্লা দিতে হিমশিম বাবা।
ন’বছরের পুত্র শুধু যে ঝটপট ই-মেল চালাচালিতে সড়গড় তা-ই নয়, নেটজগতের রহস্যভেদে ইতিমধ্যেই বাবা-মাকে কয়েক যোজন পিছনে ফেলে দিয়েছে সে। অথচ, নেটের ভুবনেই লুকিয়ে থাকতে পারে কত অজানা বিপদ। তাই সটান লালবাজারের কর্তাদের দ্বারস্থ উদ্বিগ্ন পিতা। যাঁর নাম প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। শুক্রবার দুপুরে তাই বাঙালির ‘বুম্বাদা’কে ভরসা দিলেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাপ্রধান পল্লবকান্তি ঘোষ।
প্রসেনজিৎ বলছিলেন, “ঘরে-ঘরে শুধু এক দুশ্চিন্তা! টিভি গেম শো করতে গিয়েও দেখেছি, বড়রা পরিবারের ছোটদের মোবাইল-কম্পিউটারে আসক্তি নিয়ে জেরবার। ওঁরা আমাকেই বলেন, ওই বাচ্চাদের সতর্ক করতে।” শুনে গোয়েন্দাপ্রধান বললেন, “পুলিশের তরফে আমরাও একই কথা বলব। সাবধানে ইন্টারনেট বা সোশ্যাল নেটওয়ার্ক সাইট ব্যবহারের পরামর্শ আপনার মতো তারকার কাছ থেকে এলে, তা ছোট-বড় সবার মগজে বেশি করে ঢুকবে।” সঙ্গে-সঙ্গে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন প্রসেনজিৎ। সাইবার-সচেতনতার কাজে পুলিশ যদি তাঁকে কোনও ভাবে কাজে লাগায়, এক পায়ে খাড়া ‘বুম্বাদা’।
গোয়েন্দাপ্রধান পল্লবকান্তি ঘোষের সঙ্গে প্রসেনজিৎ। শুক্রবার, লালবাজারে। ছবি: দেবাশিস রায়।
সেলুলয়েডে পুলিশের উর্দি পরে বহু বার ‘দুষ্টুলোক’দের পিটিয়েছেন। কিন্তু সাইবার-সমস্যার মোকাবিলা যে পুলিশের কাছে অন্য রকম চ্যালেঞ্জ, তা হালে মালুম হয়েছে প্রসেনজিতের। সম্প্রতি তাঁর ‘হনুমান ডটকম’ ছবিটি করতে গিয়ে সাইবার-দুশমনদের দৌরাত্ম্যের বিষয়ে অনেক কিছু জেনেছেন। শীঘ্রই মুক্তি পাবে ছবিটি। তার ঠিক আগে প্রসেনজিতের সাইবার-সচেতনতার প্রচারে নামার এই তাগিদ অনেকের কাছেই তাৎপর্যপূর্ণ ঠেকছে।
পল্লববাবু এ দিন প্রসেনজিৎকে বলছিলেন, খুনে, গুন্ডাদের ধরপাকড়ের থেকে সাইবার শত্রুদের ঠেকানোটা কম কঠিন নয়! প্রযুক্তির ব্যবহারে সাইবার-অপরাধীরা পুলিশের থেকে কয়েক কাঠি এগিয়ে। আর্থিক জালিয়াতি থেকে জঙ্গিদের আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র— সব কিছুরই মাধ্যম এখন ইন্টারনেট।
কৌতূহলী বালকের মতোই নানা কিসিমের সাইবার-অপরাধের খোঁজখবর নিচ্ছিলেন টলি-সুপারস্টার। তাঁর বক্তব্য, “কম্পিউটার, স্মার্টফোন— সবই এখন জীবনের অঙ্গ। তার ভাল-খারাপ দু’টো দিকই আছে! অতএব, বিপদ ঘটার আগে তা ঠেকানোর কৌশলগুলো কী করে ভাল ভাবে বোঝা যেতে পারে?” পুলিশকর্তাদের পরামর্শ, অপরিচিতের সঙ্গে বন্ধুত্ব বা চ্যাটের ব্যাপারে ছোটদের অবশ্যই সাবধান করবেন। সব থেকে সহজে ফাঁদে পড়ে অল্পবয়সী মেয়েরা। তাদের ছবি ‘মর্ফিং’ করে নেটে আপত্তিকর ছবি প্রচার বা পর্নোগ্রাফির সাইটে নাম-ঠিকানা দিয়ে দেওয়ার মতো কাণ্ড ঘটেই থাকে। সাইবার ক্রাইম শাখার এক অফিসার বলছিলেন, একটি স্কুলে সমীক্ষা করে তাঁরা জেনেছিলেন, ছোটরা অনেকে নিজেদের মোবাইল নম্বরটাই পাসওয়ার্ড রাখে। ফেসবুকে ব্যক্তিগত তথ্য, ঠিকানা, ফোন নম্বর জানাতেও রাখঢাক নেই। ই-মেল হ্যাকিং ঠেকানো নিয়ে প্রসেনজিৎ জানতে চাইলে, পুলিশকর্তারা বলেন সহজে আঁচ করার মতো পাসওয়ার্ড এড়িয়ে চলার কথা।
প্রসেনজিৎ বলছিলেন, “শুনেছি, অমুক বন্ধু বিদেশে বিপদে পড়েছেন বলে জানিয়ে সাহায্য চেয়েও ই-মেল আসে! কিংবা লটারিতে মোটা টাকা জেতার খবর শুনিয়ে টোপ দেওয়া হয়!” পুলিশকর্তাদের পরামর্শ, এমন মেল এড়িয়ে চলুন। বন্ধুর নাম করে সন্দেহজনক মেল ভাল ভাবে যাচাই করবেন। ব্যাঙ্কের জাল ওয়েবসাইটের ফাঁদ নিয়েও বিস্তর প্রশ্ন প্রসেনজিতের। অফিসারেরা বোঝালেন, গুগ্লে ব্যাঙ্কের নাম লিখে ওয়েবসাইটে ঢুকতে গিয়েও জাল ঠিকানার ফাঁদে পড়তে হতে পারে। কারম আসল ওয়েবসাইটের মতো দেখতে একাধিক ‘ফিশিং’ ওয়েবসাইটও আছে। সুতরাং আসল ওয়েবসাইটের ‘অ্যাড্রেস বার’ মুখস্থ করে তা ব্যবহার করাই ভাল। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত তথ্য নেটে অপরিচিতদের জানানোর ব্যাপারেও সতর্কতা কাম্য। শুনেই প্রসেনজিতের মন্তব্য, “ওরেব্বাবা, আমার অ্যাকাউন্ট সামলাতে যাঁরা সাহায্য করেন, তাঁদের সঙ্গে এখনই গিয়ে কথা বলতে হবে!”
ঘণ্টা দেড়েকে সাইবার-অপরাধের নানা দিক নিয়েই চলল আলোচনা। এই সচেতনতার প্রচারে পরস্পরকে সাহায্য করার আগ্রহ দু’তরফেই। টলি-তারকাদের ইদানীং নানা সচেতনতার প্রচারে দেখা যাচ্ছে। তাতে প্রচার গতি পায়, তারকাদেরও ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে ওঠে। ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত ক্যানসার-সচেতনতা এবং নারী-শিশু পাচার রোধে কাজ করেছেন। প্রসেনজিৎ কলকাতা পুলিসের মাদক-বিরোধী প্রচারের শরিক হয়েছিলেন। রাজ্য সরকারের সাম্প্রতিক ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পের মুখও তিনি।
আপাতত সাইবার-বিপদের দিকগুলো ভাবাচ্ছে ‘বুম্বাদা’কে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.