|
|
|
|
ঠকিয়েছে ফেসবুকের বন্ধু, আত্মঘাতী কিশোরী |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
মাত্র মাস দুয়েকের আলাপ। ফেসবুকে স্কুলপড়ুয়া ১৪ বছরের মেয়েটিকে ‘ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট’ পাঠিয়েছিল বি কম পাঠরত দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
সেই থেকেই গড়ায় সম্পর্ক।
বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তৈরি হয় শারীরিক সম্পর্কও।
তার পর হঠাৎই এক দিন সব রকম যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় বেঙ্গালুরুর ইয়েলাহাঙ্কার শেষাদ্রিপুরম কলেজের ওই ছাত্র মনোজ কুমার। এই ধাক্কা সামলে উঠতে পারেনি মেয়েটি। হতাশা থেকে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিজের জীবন শেষ করে দিয়েছে সে। তিন পাতা লম্বা সুইসাইড নোটে দায়ী করে গিয়েছে মনোজকে। পুলিশ ধর্ষণ ও আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে গ্রেফতার করেছে মনোজকে।
নবম শ্রেণির ছাত্রীটির মা কলেজের লেকচারার। অনলাইনে মেয়ে কী করছে, না করছে সেই ব্যাপারে সম্পূর্ণ অন্ধকারে ছিলেন তিনি। বাড়িতে ইন্টারনেট ব্যবহারের কোনও সুযোগ মেয়েটির ছিল না। তাই সাইবার ক্যাফেতে গিয়ে ফেসবুকে মনোজের সঙ্গে চ্যাট করত মেয়েটি।
ইন্টারনেটে জগৎজোড়া বন্ধু পাতানোর ফাঁদে যে ভাবে পা দিচ্ছে কিশোর-কিশোরীরা, যে ভাবে ক্রমশ আরও অর্গলমুক্ত হচ্ছে নেট-দুনিয়া, তার পরিণামই কি এই? উঠছে প্রশ্ন। সামান্য চ্যাট করার পরেই চটজলদি শারীরিক সম্পর্কে পর্যন্ত জড়িয়ে পড়া এবং শেষমেশ যার জেরে জীবনটাই খোয়ানোর মতো ঘটনা বাড়ছে। মনোবিদ জয়রঞ্জন রাম বলছেন, “সব সময় বাবা-মায়ের পক্ষে নজরদারি চালানো সম্ভব নয় ছেলেমেয়েরা ইন্টারনেটে কী করছে। সেটা ভাল চোখেও দেখা হয় না। তার প্রভাবও ছেলেমেয়ের উপরে পড়ে।” বরং জয়রঞ্জনের পরামর্শ, “বয়ঃসন্ধির অনেক আগে থেকেই ছেলেমেয়েদের বোঝানো উচিত যে ইন্টারনেটে বন্ধুবান্ধবদের চোখ বুজে বিশ্বাস কোরো না। সেখানে যা দেখানো হচ্ছে, বাস্তবে সেটা না-ও হতে পারে।” বাবা-মায়ের পক্ষে এর চেয়ে বেশি কিছু করা হয়তো সম্ভব নয়।
বেঙ্গালুরুর মেয়েটিও মনোজের সঙ্গে আলাপের পরে এতটাই মুগ্ধ হয়ে পড়ে যে শারীরিক সম্পর্কে জড়াতে সময় নেয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, হলিউড তারকার মতো মোটরবাইক চালিয়ে বা ফর্মুলা ওয়ান চালকের মতো গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়াত মনোজ। যা থেকে সহজেই আকৃষ্ট হত মেয়েরা। এই ভাবে দু’মাসেই আলাপ বাড়িয়ে নন্দিনী লেআউটে নিজের আস্তানায় মেয়েটিকে ডেকে আনে মনোজ। অভিযোগ, সেখানেই জোর করে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয় ছেলেটি। বিয়ের প্রতিশ্রুতিও দেয়। মেয়েটির সুইসাইড নোট থেকে পুরো ঘটনাটি জেনেছে পুলিশ।
দু’মাস প্রায় স্বপ্নে ভর করে কেটে গিয়েছিল মেয়েটির। তার পর থেকে সে লক্ষ করে মনোজ তার অন্য বান্ধবীদের সম্পর্কে জানতে চাইছে। তাদের ফোন নম্বর চাইছে। এই সময় থেকেই মেয়েটির সন্দেহ হয়। সে মনোজের কাছে জানতে চায়, তাদের সম্পর্কটা বিয়ে পর্যন্ত গড়াবে কি না। তখনই মনোজের প্রতিক্রিয়ায় চমকে যায় সে। মনোজ হেসে গোটা ব্যাপারটা উড়িয়ে দিয়ে বলে, “সব কিছু তো হয়েছিল মজা করার জন্য।” তার পর মেয়েটিকে বলে, এই সব ঘটনা ভুলে যাও। এর পর থেকে ক্রমশ মুষড়ে পড়ে মেয়েটি। তার মা ভেবেছিলেন মেয়েটি পড়াশোনা নিয়ে চিন্তিত। মঙ্গলবার রাতে মা বাড়ি ফিরে দেখেন সদর দরজা বন্ধ। তিনি মেয়েটির বাবাকে ফোন করে ডাকেন। পরে প্রতিবেশীদের সাহায্যে সবাই মিলে দরজা ভাঙেন। দেখেন সিলিং থেকে ঝুলছে মেয়ের দেহ। কাছেই টেবিলের উপরে রাখা সুইসাইড নোট। বাবা-মা পরে প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, মেয়েটি সেই সন্ধ্যায় নিজের ছোট ভাইয়ের সঙ্গে খানিক ক্ষণ খেলে। তার পরে ভাইকে রেখে আসে রাস্তার পাশেই আর এক আত্মীয়র বাড়িতে। এর পরে বাড়ি ফিরে দরজা বন্ধ করে দেয়। বুধবার পুলিশ মনোজকে গ্রেফতার করে।
তবে ইন্টারনেট বা সোশ্যাল মিডিয়ার বাড়বাড়ন্তে এই ধরনের ঘটনা বাড়ছে তা মানতে নারাজ সমাজতত্ত্ববিদ প্রশান্ত রায়। তিনি বলছেন, “ইন্টারনেট একটা মাধ্যম মাত্র। চটজলদি সম্পর্কে জড়ানোর আরও নানা পথ আছে। বাবা-মার কড়া শাসন সব সময় নেই। তাঁরা কাজে বেরোন। ছেলে মেয়েরা সহজে মেলামেশা করছে। যে সমাজ ক্রমশ আধুনিক হচ্ছে সেখানে এই ধরনের ঘটনা অনিবার্য।” |
|
|
|
|
|