|
|
|
|
সিবিআই তদন্ত অসাংবিধানিক, বলল আদালত |
নিজস্ব সংবাদদাতা • গুয়াহাটি ও নয়াদিল্লি |
সিবিআইয়ের তদন্ত চালানো, গ্রেফতার করা, চার্জশিট দেওয়ার অধিকার নেই বলে একটি মামলায় রায় দিল গুয়াহাটি হাইকোর্ট। হাইকোর্টের মতে, সিবিআই তদন্ত বা গ্রেফতার করলে, অথবা চার্জশিট দিলে তা সাংবিধানিক অধিকার ভঙ্গের সামিল।
বিচারপতি ইকবাল আহমেদ আনসারি ও বিচারপতি ইন্দিরা শাহের বেঞ্চ জানিয়েছে, ১৯৬৩ সালে কেন্দ্রের এক প্রস্তাবের (রেজোলিউশন) মাধ্যমে সিবিআই তৈরি হয়। তাতে স্বাক্ষর করেছিলেন তদানীন্তন স্বরাষ্ট্রসচিব ভি বিশ্বনাথন। কিন্তু, সিবিআইকে নিয়ে কোনও আইন পাশ করা হয়নি। তাই তাদের তদন্ত চালানো, গ্রেফতার করা বা চার্জশিট দেওয়ার অধিকার নেই।
সারা দেশে অসংখ্য মামলা রয়েছে সিবিআইয়ের হাতে। তাই গতকাল দেওয়া গুয়াহাটি হাইকোর্টের এই রায়ে সুপ্রিম স্থগিতাদেশ না দিলে অভূতপূর্ব আইনি ও সাংবিধানিক সঙ্কট দেখা দেবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্ট সব শিবিরেরই।
বিতর্কের সূত্রপাত কোথায়?
২০০১ সালে শিলচরে কর্মরত বিএসএন এল-এর কর্মচারী নবীন্দ্র কুমারের বিরুদ্ধে সিবিআই তহবিল তছরূপ ও প্রতারণার মামলা দায়ের করে। সিবিআই আদালতে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন। ২০০৫ সালে নবীন্দ্র হাইকোর্টে একটি আর্জিতে (ডব্লিউপি(সি) ৬৮৭৭-২০০৫) বলেন, সিবিআইয়ের গঠন প্রক্রিয়াই অবৈধ। তাই, কারও বিরুদ্ধে তদন্ত চালানোর অধিকার সিবিআইয়ের নেই। ২০০৭ সালে সেই আবেদন খারিজ হয়। ২০০৮ সালে তিনি ফের একই আর্জি দায়ের করেন। সেই মামলাতেই এই রায়।
কী বলা হয়েছে তাতে?
বেঞ্চ জানিয়েছে, ১৯৪৩ সালে ব্রিটিশ-শাসিত ভারতে ঘুষ ও দুর্নীতির মতো অপরাধ রুখতে দিল্লি স্পেশ্যাল পুলিশ এসট্যাবলিশমেন্ট (ডিএসপিই) আইনের প্রস্তাব করা হয়। ১৯৪৬ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে ডিএসপিই কার্যকরী হয়। তখনও তা অর্ডিন্যান্স ছিল। পরে আইন প্রণয়নের সময় একটি বিশেষ বিল ওই আইনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ওই বিলে বলা হয়, বিশেষ পুলিশ বিভাগের অফিসারেরা প্রয়োজনে যে কোনও রাজ্যে তদন্ত চালাতে পারবেন। তবে, এই আইনে কোথাও ‘সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন’-এর (সিবিআই) উল্লেখ ছিল না।
১৯৬৩ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ডিএসপিই-র অধীনে একটি প্রস্তাবের মাধ্যমে সিবিআই গঠন করে। ওই প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রসচিব। কিন্তু, সিবিআই তৈরির পরেও তাদের নিয়ে কোনও আইন পাশ করা হয়নি।
বিচারপতি আনসারি ও বিচারপতি শাহের বেঞ্চের মতে, পুলিশ রাজ্য সরকারের অধীনস্থ। তাই, কোনও রাজ্যের পুলিশের ক্ষমতা (এ ক্ষেত্রে দিল্লি পুলিশ) ধার করে গোটা দেশে তদন্ত চালানো বা গ্রেফতারির অধিকার সিবিআইয়ের নেই। এই প্রসঙ্গে সংবিধান তৈরির সমকালীন একটি বিতর্কের প্রসঙ্গও টানা হয়েছে। তখন স্থির করা হয়, ‘সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনটেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন’ গোটা দেশে অপরাধের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ (এনকোয়ারি) করতে পারলেও তদন্ত (ইনভেস্টিগেশন) করতে পারবে না। তদন্ত ও চার্জশিট দেওয়ার অধিকার থাকবে একমাত্র পুলিশের হাতে।
বিচারপতি আনসারি ও বিচারপতি শাহের রায় অনুযায়ী, ‘যে হেতু সিবিআই কোনও আইনের অধীনে তৈরি হয়নি, তা কেবল একটি প্রস্তাবের ভিত্তিতে গড়া সংস্থা, তাই তারা কোনও তদন্ত চালাতে, কাউকে আটক বা গ্রেফতার করতে অথবা চার্জশিট দিতে পারে না। যদি দেয় তবে তা সংবিধানের ২১ নম্বর ধারা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জীবন ও স্বাধীনতার অধিকার ভঙ্গের সামিল হবে।’
গুয়াহাটি হাইকোর্টে নবীন্দ্রের দাবির বিপক্ষে সিবিআইয়ের কৌঁসুলিরা সওয়াল করেছেন। কিন্তু কেন্দ্র কোনও হলফনামা দেয়নি। গতকালের রায়ের পরে নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয়েছে তারা। কারণ, সিবিআই তদন্তের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে সারা দেশে অসংখ্য মামলার তদন্ত থমকে যেতে বাধ্য। তার মধ্যে রয়েছে টুজি, কয়লা কেলেঙ্কারির মতো গুরুত্বপূর্ণ মামলাও।
সোমবার এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাবে কেন্দ্র ও সিবিআই। গুয়াহাটি হাইকোর্টের রায় খতিয়ে দেখতে আইনজীবীদের একটি দল গঠন করেছেন সিবিআই অধিকর্তা রঞ্জিত সিন্হা। কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রকের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন সিবিআই কর্তারা। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, নানা ঘটনায় রাজ্য পুলিশের উপরে আস্থা না থাকলে সিবিআই তদন্তের আদেশ দিয়েছে বিভিন্ন হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্ট। এই রায় সেই মামলাগুলিতেও সিবিআই তদন্তের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। কয়লা কেলেঙ্কারির মামলায় তদন্তের ক্ষেত্রে সিবিআইয়ের স্বাধীনতার প্রশ্নটির মীমাংসা করতেও উদ্যোগী হয়েছে শীর্ষ আদালত।
অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল পি পি মলহোত্রের কথায়, “সিবিআইয়ের গঠন আইন মেনেই হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টও একাধিক বার সিবিআইকে তদন্তকারী সংস্থা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ১১ নভেম্বর এই রায়ের বিরুদ্ধে কেন্দ্র ও সিবিআই সুপ্রিম কোর্টে যাবে।” এক শীর্ষ সিবিআই কর্তা জানিয়েছেন, আগেও সিবিআইয়ের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। তখন এই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষেই রায় দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। এ বারও সেই শীর্ষ আদালতের দিকে তাকিয়ে আছেন তাঁরা। |
|
|
|
|
|