ছিল অনড় রুমাল হয়ে গেল চঞ্চল বেড়াল
ব্রিটেনের এক প্রধানমন্ত্রী একবার বলেছিলেন রাজনীতিতে একটা হপ্তা অনেক লম্বা সময়। অথচ আমরা জানি যে ইতিহাসের পাতায় সাত দিন চোখের পলকের মতো। একজন ক্রিকেটারের জীবনে ২৫ বছর একটা অবিশ্বাস্য লম্বা সময়। সচিন তেন্ডুলকর সেই সময়টা অনায়াসে অতিক্রম করে এলেন। উনি প্রথম রঞ্জি খেলেন ১৯৮৮-তে। প্রথম টেস্ট ম্যাচ তার পরের বছর। আর ক’দিন পর উনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেবেন। ভাবতে অবাক লাগে যে সচিন যখন ক্রিকেটজগতে নাম কিনতে শুরু করলেন, তখন কলকাতায় একজন ভাল কেক খেতে চাইলে অবধারিত ভাবে ‘ফ্লুরিজ’য়ে যেত। আজ ভাল কেকের খোঁজে খাদ্যরসিকেরা যান ‘কুকি জার’য়ে।
তখন এখন
১৯৮৮-৮৯’তে নরেন্দ্র মোদী নামে এক যুবক ভারতীয় জনতা পার্টির একজন সাধারণ কর্মী। আজ অনেকেই ভাবছেন, মোদী ভারতের ভাবী প্রধানমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক অগ্নিকন্যা ১৯৮৮-র কয়েক বছর আগে প্রথম নির্বাচন জিতে লোকসভার সদস্য হয়েছেন। আজ তিনি পশ্চিমবঙ্গের স্বনামধন্যা মুখ্যমন্ত্রী।
১৫-১৬ বছরের বাচ্চা ছেলে যখন পাকিস্তানের বোলারদের বল বাউন্ডারির বাইরে পাঠাচ্ছে, তখন ভারতের অর্থনীতির উপর সমাজতন্ত্রের ছায়া বর্তমান। বিশ্বের অর্থনীতিতে ভারত এক শক্তিশালী খেলোয়াড় হবে এ কথা তখন কোনও আনাড়িও ভাবেনি। অর্থনৈতিক উন্নতি হিন্দু রেট অব গ্রোথে স্থগিত। ২০১৩-তে অবস্থা অন্য
রকম। মন্দার বাজারেও ভারতের অর্থনীতি এমার্জিং মার্কেটস-য়ের তালিকাতে অগ্রণী। ১৯৮৮ ছিল লাইসেন্স রাজ-এর যুগ। এখন তা দুঃস্বপ্নের মতো। ১৯৮৯-তে পৃথিবী জুড়ে সমাজতন্ত্রের পতনের সূত্রপাত। কিন্তু তখনও কেউ ভাবেনি সেই সমাজতন্ত্রের আদর্শ স্বপ্নের মতো মিলিয়ে যাবে।আজ সরকারি চাকরি বা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা সংরক্ষণ বাদ দিয়ে ভাবা অসম্ভব। উত্তর ভারতের রাজনীতির জগতে বহুজন সমাজ পার্টি বা সমাজবাদী পার্টির প্রতাপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অথচ আশির দশকের শেষে এদের যাত্রা সবে শুরু হয়। এই যাত্রাকে হাওয়া দিল ১৯৮৮-৮৯ মণ্ডল কমিশনের রিপোর্টকে কাজে রূপায়িত করার প্রয়াস। উত্তর ভারতের রাজনীতির চেহারাটা পালটে গেল। সচিন তখন কিশোর মাত্র, যে কিশোরের ক্রিকেট ব্যাটে দেখা গিয়েছে প্রতিভার চমক।

কোনও শহরেই ১৯৮৮-৮৯তে রঙিন টিভির চল হয়নি। সচিনের অসাধারণ ব্যাটিং সবাই দেখছে সাদা-কালো টিভিতে। টিভি চ্যানেল বলতে খালি দূরদর্শন। ওই অবস্থা আজকের কোনও যুবক-যুবতীর পক্ষে কল্পনা করাও সম্ভব নয়। এখন অজস্র চ্যানেল। কেউ আর বড় একটা দূরদর্শন দেখে না। ক্রিকেট প্রেমিকরা সচিনের ব্যাটিং দেখেন রঙিন পরদায় আর বিভিন্ন রকম ক্যামেরার সাহায্যে যা দিয়ে তাঁর ব্যাটিংয়ের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করা সম্ভব। ক্রিকেট খেলা দেখা, বোঝা, ভাল লাগা এই সবই পালটে গেল আমরা যখন সচিনের ব্যাটিং প্রতিভায় মুগ্ধ। সচিনের শুরুতে ছিল দু’রকমের ক্রিকেট খেলা টেস্ট ম্যাচ আর ওয়ান ডে। তাঁর ক্রিকেট জীবনের শেষের দিকে এল অন্য রকমের ক্রিকেট, টি-টোয়েন্টি।
আজ সেই খেলারই জনপ্রিয়তা বেশি। ধ্রুপদী, পুরনোপন্থী মানুষরাই এখন টেস্ট ম্যাচের কথা ভাবেন খানিকটা যেন নস্টালজিয়ার ঝোঁকে।
সচিন যখন খেলা শুরু করলেন, সেই সময়েই কংগ্রেস এবং রাজীব গাঁধীকে দুর্নীতি তাড়া করতে শুরু করল। বোফর্স কামানের ধোঁয়া রাজীব গাঁধী এড়াতে পারলেন না। সচিনের অবসরের সময় আবার দুর্নীতির কালো ছায়া পড়েছে কংগ্রেসের উপর। এর ফলে নির্বাচনে কংগ্রেসের ভরাডুবি হতে পারে এই রকমই আশঙ্কা করেছেন অনেকে। রাজীব গাঁধীর পুত্র কি কংগ্রেসকে বাঁচাতে পারবেন?
৩০-৩৫ বছরের এক যুবক আশির দশকের শেষে তাঁর চিপকো আন্দোলন নিয়ে গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা শুরু করেছে। আসলে সে ক্রিকেট পাগল। তখন থেকে সে দেখে আসছে সচিন তেন্ডুলকরের ব্যাটিংয়ের মহিমা। তখন সে যদি বলত ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে সচিন সব থেকে বড় ব্যাটসম্যান, তা হলে কেউ তার কথা শুনত না। আজ তিনি যখন ওই কথা লেখেন তার টেলিগ্রাফের কলামে, তখন পাঠকরা সে নিয়ে আলোচনা করেন, লেটার্স টু দ্য এডিটর বিভাগে চিঠি লেখেন। কারণ ওই যুবকের নাম রামচন্দ্র গুহ বর্তমানে আমাদের দেশের সব চেয়ে নামকরা ঐতিহাসিক যিনি তাঁর অন্যান্য কাজের মধ্যে লিখে ফেলেছেন ভারতের ক্রিকেট খেলার প্রামাণ্য ইতিহাস।
কথায় আছে, সময় কারও জন্য থেমে থাকে না। হুতোমকে নকল করে বলা যায় যে বয়স আর যৌবনের মতো মানুষের জীবনও ক্ষণস্থায়ী। সচিন তাই একটা যুগের প্রতীক। যে যুগে ভারতবর্ষ পালটে গেল। ছিল একটা অনড় রুমাল, হয়ে গেল একটা চঞ্চল বেড়াল।

লেখক - সম্পাদক, সম্পাদকীয় পাতা, ‘দ্য টেলিগ্রাফ’



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.