রাজ্য সরকার জ্যোতি আলুর দর ১৩ টাকা কেজি বেঁধে দেওয়ার পরে উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকার বাজার থেকে তা উধাও হয়ে গিয়েছে। বেশির ভাগ বাজারেই নতুন আলু সাজিয়ে রাখছেন ব্যবসায়ীদের একাংশ। তা ২৮ থেকে ৩০ টাকা কেজি। ভাইফোঁটার প্রাক্কালে বাসিন্দাদের সমস্যার কথা মাথায় রেখে সব জেলা প্রশাসনকেই যথাযথ পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছিল রাজ্য সরকার। সেই অনুযায়ী, উত্তর দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহারে জেলশাসকদের উদ্যোগে সরকারি দরে আলু বিক্রির ব্যবস্থা কমবেশি হয়েছে। কিন্তু, দার্জিলিং, দক্ষিণ দিনাজপুর ও মালদহে সরকারি দরে আলু বিক্রি করাতে জেলা প্রশাসন উদ্যোগী হয়নি। তাই তিন জেলা পারলে অন্যগুলি কেন পারছে না, বাসিন্দাদের মধ্যে সেই প্রশ্ন উঠেছে।
এমতাবস্থায়, বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের কাছেও আর্জি পৌঁছেছে। মন্ত্রী বলেছেন, “আমি সব জেলাশাসক ও অতিরিক্ত জেলাশাসকদের সঙ্গে কথা বলব। কিছু ব্যবস্থা নিশ্চয়ই হবে।” দার্জিলিং, মালদহ ও দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসকরা আলাদা ভাবে হলেও একই সুরে দাবি করেছেন, শীঘ্রই সরকারি দরে আলু বিক্রির ব্যবস্থা করার চেষ্টা হচ্ছে। |
বাসিন্দারা জানান, গত রবিবার থেকে শিলিগুড়ির কোনও বাজারে জ্যোতি আলু প্রায় নেই। যত টুকু রয়েছে তাও পচা-ধসা। বিক্রেতারা নতুন আলু সাজিয়ে তা ৩০ টাকা কেজি দরে ক্রেতাদের কিনতে কার্যত বাধ্য করছেন বলে অভিযোগ। যদিও ব্যবসায়ী সমিতিগুলির একাংশ, শিলিগুড়ি নিয়ন্ত্রিত বাজারের কমিশন এজেন্টদের সংগঠনের দাবি, বর্ধমান থেকে আলু আনা না গেলেও উত্তরবঙ্গের হিমঘরগুলিতে পর্যাপ্ত আলু রয়েছে। প্রশাসন উদ্যোগী হয়ে সেই আলু পাইকারি বাজারে সরবরাহের ব্যবস্থা করলে সমস্যা থাকবে না। অথচ সেই ব্যবস্থা এখনও তারা করতে পারেনি।
ক্ষুদিরামপল্লি বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সুবল সাহা বলেন, “পরিবহণ খরচ দিয়ে দামে কুলচ্ছে না দেখে নিয়ন্ত্রিত বাজারের কমিশন এজেন্টরা বর্ধমান থেকে জ্যোতি আলু আনছেন না। বাসিন্দারাও তাই ১৩ টাকার আলু খুচরো বাজারে পাচ্ছেন না। |
হিমঘরগুলিতে যে আলু রয়েছে তা সরবরাহের ব্যবস্থা করলেই সমস্যা মেটানো সম্ভব। দিন ১৫ পরে স্থানীয় কৃষকদের উৎপাদন নতুন আলু বাজারে আসতে শুরু করলে এমনিতেই সমস্যা থাকবে না।” নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতির কমিশন এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের অন্যতম কর্তা তপনকুমার সাহার দাবি, জলপাইগুড়ি সদর, আলিপুরদুয়ার, ধূপগুড়ি, কোচবিহারের হিমঘরগুলিতে যে আলু রয়েছে তা দিয়ে ২-৩ মাস অনায়াসে চলতে পারে।
এই ব্যাপারে দার্জিলিঙের জেলাশাসক বলেছেন, “দিন চারেক আগে আমি নিয়ন্ত্রিত বাজারে গিয়ে ১৩ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি করতে বলেছি। তখনও সেখানে জ্যোতি আলু ছিল। তার এক দিন পর থেকেই বাজারে ওই মিলছে না বলে অভিযোগ ওঠে। আমাদের জেলায় হিমঘর নেই যেখানে আলু রয়েছে। থাকলে আমরা এর মধ্যেই ব্যবস্থা করতে পারতাম। সমস্যা মেটাতে ইতিমধ্যেই জলপাইগুড়ি জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বলে সেখানকার হিমঘর থেকে আলু আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রেশন দোকান থেকে সেই আলু বাসিন্দারা ১৩ টাকা কেজিতে কিনতে পারবেন। হিমঘরে আলু যে অবস্থায় থাকে সেখান থেকে বার করে বাজারজাত করার আগে শুকনো করতে হয়। মঙ্গলবার সেই কাজ করা হয়েছে। আশা করছি বুধবার বা তার পর দিন থেকেই রেশন দোকানে বাসিন্দারা ওই আলু পাবেন।” |
কী বলছেন প্রশাসনের কর্তারা |
গৌতম দেব
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী |
সব জেলাশাসক ও অতিরিক্ত জেলাশাসকদের
নির্দেশ দেব। কী ব্যবস্থা করা যায় তা দেখতে হবে। |
পৃথা সরকার
জেলাশাসক, জলপাইগুড়ি |
পাশাং নরবু ভুটিয়া
জেলাশাসক, উঃ দিনাজপুর |
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়েই কাজে নামা হয়। এখনও ৩টি কেন্দ্র থেকে সরকারি দরে আলু বিক্রির ব্যবস্থা হয়েছে। কৃষি বিপণন দফতর আরও কয়েকটি কেন্দ্র খুলবে। |
ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকের পরে একটি স্টল খোলানো হয়েছে। সেখানে সরকারি দরে আলু মিলছে। কয়েকটি খোলানো হবে। |
পুনীত যাদব
জেলাশাসক, দার্জিলিং |
মোহন গাঁধী
জেলাশাসক, কোচবিহার |
জেলায় আলুর হিমঘর নেই। জলপাইগুড়ি জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বলে আলু আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দু-একদিনের মধ্যে স্টল খোলানোর চেষ্টা করছি। |
ভবানীগঞ্জ বাজারে স্টল খোলানো হয়েছে। শীঘ্রই কোচবিহারের নতুন বাজারেও আরও একটি দোকান চালুর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে মহকুমা স্তরের কথা ভাবা হবে। |
গোদালা কিরণ কুমার
জেলাশাসক, মালদহ |
তাপস চৌধুরী
জেলাশাসক, দঃ দিনাজপুর |
কোথায় হিমঘরে কত আলু রয়েছে তা খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। শীঘ্রই সরকারি দরে আলু বিক্রির কাউন্টার খোলানো হবে। |
আজ বালুরঘাটে আলুর আড়তদারদের নিয়ে বৈঠক। হিমঘরে কত আলু মজুত আছে দেখে ১৩ টাকা কেজি আলু বিক্রির ব্যবস্থা হবে। |
|
এদিকে, সরকারের সঙ্গে কোন বিবাদে না গিয়ে ভিন রাজ্যে আলু পাঠানোর ছাড়পত্র পেতে এবার ১৩ টাকা কিলো দরে আলু বিক্রি করতে শুরু করল উত্তরবঙ্গের আলু উৎপাদনে অন্যতম দুই ব্লক ধূপগুড়ি ও ফালাকাটার পাইকারি ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের দাবি, আগামী ৩০ নভেম্বর ওই স্টল গুলিতে আলু বিক্রি করা চলবে। ধূপগুড়ির এক খুচরো ব্যবসায়ী রণজিৎ দাস বলেন, “রবিবার ১৭ টাকা কিলো দরে আলু কিনেছিলাম। সে জন্য এক টাকা লাভে তা বিক্রি করছি। পাইকারি ব্যবসায়ীরা কম দামে আমাদের কাছে আলু বিক্রি করলে বাজারে দাম কমবে।”
ধূপগুড়ির দুই পাইকারি আলু ব্যবসায়ী তাপস বসু ও আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, তাঁরা মূলত পূর্ব ভারতে আলু পাঠান। তিনি বলেন, “খুচরো ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করি না। তবে খুচরো ব্যবসায়ীরা আমাদের সংগঠনে আবেদন করলে তারাও কম দামে আলু পাবেন। কারণ, সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী আমরা ১৩ টাকা কিলো দরে আলু বিক্রি করছি। যাতে আমাদের বাইরে আলু পাঠানোর ছাড়পত্র মেলে তা রাজ্য সরকারকে দেখতে আবেদন করছি।” এদিন ব্লক প্রশাসন ও আলু ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে সরকার নির্ধারিত মূল্যে আলু বিক্রি শুরু হয়েছে কুমারগ্রামেও। |