বিসর্জন নিয়ে দুই ক্লাবের গণ্ডগোলে খুন যুবক
লোমেলো বিছানার এক কোণে পড়ে থাকা লাল ব্যাগের ভিতর থেকে নীল রঙের জিন্সের প্যান্ট উঁকি দিচ্ছিল। ভাইকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েই পছন্দ করে কিনে দিয়েছিলেন দিদি। লাল রঙের একটা জামাও দিয়ে ছিলেন। ঘরের এক কোণে স্টিলের প্লেটের উপর রাখা ধান আর দুর্বা ঘাস। ভাইফোঁটার জন্য। কিন্তু কৃষ্ণনগরের মহিশাল পাড়া লেনের ছোট্ট বাড়িটার দম বন্ধ করা পরিবেশটা বারবার জানান দিচ্ছিল, এই বাড়িতে ভাইফোঁটা হবে না। সোমবার রাতে কালীপুজোর ভাসানে দুই ক্লাবের মধ্যে গন্ডগোলের জেরে যে খুন হয়েছেন এই বাড়ির এক মাত্র ছেলে বাপ্পা ঘোষ (২৯)।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার রাত একটা নাগাদ কৃষ্ণনগরের এ ভি হাইস্কুলের পাশে
মৃত বাপ্পা ঘোষ।
আমিনবাজারের কাছে বাপ্পাকে মাটিতে ফেলে ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে খুন করা হয়। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাজবাড়ির দিক থেকে বিসর্জন ঘাটের দিকে যাচ্ছিল চকেরপাড়া এলাকার সেবক সঙ্ঘ ও গেট রোড এলাকার মডার্ন ক্লাব। সামনে ছিল মডার্ন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দু’টো ক্লাবের শোভাযাত্রার মধ্যে দূরত্ব কমে আসছিল। আর তখন কোন প্রতিমা আগে যাবে, তাই নিয়ে শুরু হয়ে যায় রেষারেষি। এ ভাবে আমিনবাজারের কাছে দু’টো ক্লাব খুব কাছাকাছি চলে এলে শুরু হয়ে যায় মারামারি। ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে দু’পক্ষকে হঠিয়ে দেয়। অভিযোগ, সে সময়েই বহু মানুষের ভিড়ের মধ্যেই মাটিতে ফেলে দিয়ে খুন করা হয় বাপ্পাকে। রাস্তায় তখন হাজার হাজার মানুষের ভিড়। এরই মধ্যে পুলিশের তাড়া খেয়ে সবাই পালিয়ে গেলে দেখা যায় রাস্তার উপরে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েআছেন বাপ্পা। তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হলে, সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
সেবক ক্লাবের সদ্যরা জানতেও পারেননি কী হয়েছে। তাঁরা ইতিমধ্যে প্রতিমা নিয়ে চলে গিয়েছে বেশ কিছুটা দূরে। বাপ্পার মৃত্যুর খবর পৌঁছতেই তাঁরা প্রতিমা নিয়ে আবার চৌরাস্তার মোড়ে চলে আসেন। রাস্তার উপর প্রতিমা দাঁড় করিয়ে দিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তাঁরা। দীর্ঘ সময় এ ভাবে থাকার পর পুলিশ দোষীদের গ্রেফতারের প্রতিশ্রুতি দিলে পরিস্থিতি স্বভাবিক হয়। এই ঘটনার পর পুলিশ মডার্ন ক্লাবের চার জনকে গ্রেফতার করেছে। জেলার পুলিশ সুপার সব্যসাচী রমণ মিশ্র বলেন, “দুই ক্লাবের মধ্যে গন্ডগোলের জেরে ইটের আঘাতে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত ক্লাবের চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে মডার্ন ক্লাবের কর্মকর্তারা পলাতক।

বাড়িতে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন মৃতের দিদি মিতালিদেবী।
ধৃতদের মধ্যে রয়েছেন বছর সত্তরের সমরেন্দ্র সিংহ রায়। তিনি বলেন, “আমি শোভাযাত্রায় ছিলাম না। তবে শুনেছি আমাদের শোভাযাত্রায় অনেক অন্য পাড়ার ছেলে ঢুকে পড়েছিল। তারাই কান্ডটা ঘটিয়েছে।” ঘটনার দিন রাতেই কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন সেবক সঙ্ঘের সম্পাদক মনোজ ঘোষ। তিনি বলেন, “আমরা ওদের পিছন পিছন যাচ্ছিলাম। আচমকাই ওরা আমাদের দিকে তেড়ে আসে। পুলিশ এলে সকলে সরে পড়ে। বাপ্পা ওদের দিকে পড়ে যায়। তখন ওকে ধরে বেধরক মারতে থাকে।” খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান বাপ্পার বাবা হারুগোপাল ঘোষ। বাপ্পা পেশায় গাড়ির চালক। নিহত ওই যুবকের দু’টি সন্তান। ছোটটির বয়স আট মাস, বড়টি বছর দু’য়েকের।
গত দু’বছর ভাইফোঁটা দিতে আসতে পারেনি মাত্র সাড়ে তিন বছরের বড় বোন মিতালি। এ বার তাই একদিন আগেই চলে এসেছিলেন। কেনাকাটা করে দুই ভাইবোনে মিলে ফুচকাও খেয়েছিলেন। ভাইয়ের দেওয়া মেটে রঙের শাড়িটা রাত থেকেই আঁকড়ে ধরেছিলেন মিতালি দেবী। এটাই যে ভাইয়ের শেষ স্মৃতি। আর যে কোনো দিন ভাইফোঁটা দেওয়া হবে না তাঁর।

ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.