|
|
|
|
|
সম্মান রেখে ‘রানার্স’
হওয়াই লক্ষ্য বামেদের
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঝাড়গ্রাম |
|
এ যেন সেই ফড়িংয়ের গল্পের পুনরাবৃত্তি!
শরৎকালের সুসময়ে খাবার সঞ্চয় না করে নেচে বেড়িয়েছিল ফড়িংটি। শীতকালে খিদের চোটে বেচারি ফড়িংটি পিঁপড়দের দ্বারস্থ হয়েছিল। পিঁপড়েরাও মুখ ঝামটা দিয়ে জানিয়ে দিয়েছিল, শরৎকালে যখন নেচে বেড়িয়েছ, তখন শীতকালটা কাঁদুনি গেয়ে কাটিয়ে দাও। এ বার ঝাড়গ্রাম পুরভোটে বাম প্রার্থীদের অবস্থা সেই অসহায় ফড়িংয়ের মতো। পানীয় জল, নিকাশি ও রাস্তা নিয়ে জেরবার বামেরা আর ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখতে নারাজ। ভোটের লড়াইয়ে সম্মানজনক ভাবে ‘রানার্স আপ’ হওয়াটাই তাদের লক্ষ্য। আড়ালে-আবডালে এমনই বলছেন বাম নেতা-কর্মীর একাংশ। ঝাড়গ্রাম পুরসভার সিপিএম পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার এবং সিপিআই উপ পুরপ্রধান প্রদীপ মৈত্র-রা অবশ্য প্রকাশ্যে বলছেন, “অবাধ ও সন্ত্রাসমুক্ত নির্বাচন হলে আমরাই ফের ক্ষমতায় আসব।” সিপিএম ও সিপিআই উভয় দলের কর্মীদের একাংশ কিন্তু মানছেন, এবার পরিস্থিতি অন্য রকম। উন্নয়ন-অনুন্নয়নের চুলচেরা মাপকাঠিই এবার নির্বাচনে হারজিত স্থির করবে। আর সেটা আঁচ করে সিঁদুরে মেঘ দেখছে বামেরা। রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল পুলিশ-প্রশাসনকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় আসার ছক কষছে বলে অভিযোগ করতে শুরু করেছে বামেরা। ইতিমধ্যেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে ১, ৩, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাম প্রার্থীদের প্রচার-হোর্ডিং ছিঁড়ে ও ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ করেছে বামেরা।
১৯৮২ সাল থেকে টানা ৩১ বছরের ক্ষমতাও থেকেও বামেরা আজ পর্যন্ত শহরে কাজ চালানো গোছেরও পুর পরিষেবার ব্যবস্থা করতে পারে নি বলে অভিযোগ। ১৯৮২ সালে প্রথম মনোনীত পুর-বোর্ড ছিল বামেদের। এরপর ১৯৮৮, ১৯৯৩, ১৯৯৮, ২০০৩ ও ২০০৮ সালে পর পর পাঁচটি পুর নির্বাচনে পুর বোর্ডের ক্ষমতা দখল করে বামেরা। সিপিএমের নেতৃত্বাধীন বামেদের ইস্তাহারে একাধিক বার পুর-শহরের পানীয় জলের সঙ্কট মেটাতে নদীভিত্তিক জলত্তোলন প্রকল্প গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। সুষ্ঠু নিকাশির জন্য মাস্টার প্ল্যানের প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছিল বিগত পুর নির্বাচন গুলির প্রাক্কালে। বলা বাহুল্য, প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হয়নি। ঝাড়গ্রাম পুর-শহরের প্রায় ৬২ হাজার মানুষের বাস। জন সংখ্যার নিরিখে পানীয় ও নিত্য ব্যবহার্য মিলিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৬ লক্ষ গ্যালন জল প্রয়োজন। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের সহযোগিতায় শহরের বিভিন্ন রাস্তায় ৯৬০ টি টাইম কলের মাধ্যমে দৈনিক মাত্র ২ লক্ষ গ্যালন জল সরবরাহ করে পুর-কর্তৃপক্ষ। যদিও বেশ কয়েকটি টাইম কলে ঠিকমতো জল আসে না। পানীয় জলের মান নিয়েও নানা অভিযোগ রয়েছে।
হিসেব মতো এই অরণ্য শহরে ৪৪০ কিমি দীর্ঘ নয়ানজুলি থাকা প্রয়োজন। সব মিলিয়ে রয়েছে মাত্র ৩৫ কিমি দীর্ঘ নয়ানজুলি। পরিসংখ্যান বলছে, বেশির ভাগ ওয়ার্ডেই নিকাশির কোনও ব্যবস্থাই নেই। শহরের দক্ষিণ প্রান্তের চেয়ে উত্তর প্রান্ত ৫৫ ফুট নিচু। অতিবৃষ্টিতে শহরের কম বেশি সব ওয়ার্ডেই জল জমে যায়।
ঝাড়গ্রাম পুর-এলাকার আয়তন ২১ বর্গ কিলোমিটার। শহরের মোট ২২০ কিমি রাস্তার মধ্যে মাত্র ৫২ কিমি রাস্তা পিচের। ১২ কিমি রাস্তা কংক্রিটের, ৮১ কিমি রাস্তা মোরামের এবং বাদবাকি ৭৫ কিমি মাটির রাস্তা। বেশ কিছু এলাকায় এখনও পথবাতির ব্যবস্থা নেই।
পুর-কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, মাস্টার প্ল্যান কার্যকর করতে গেলে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন। ‘ডি’ ক্যাটাগরি ভুক্ত ঝাড়গ্রাম পুরসভার পক্ষে ওই বিপুল পরিমাণ অর্থের সংস্থান করা সম্ভব হয়নি। এ জন্য রাজ্য সরকারের বিশেষ অনুমোদন প্রয়োজন। সেই কারণে এলাকা ভিত্তিক নয়ানজুলি ও বড় নর্দমা তৈরি করা হয়েছে এবং সাধ্যমতো ‘নিকাশির উন্নয়ন-কাজ’ হয়েছে বলে পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি।
বামেদের আরও অভিযোগ, “তৃণমূলের সরকার ক্ষমতায় আসার পরে বরাদ্দের ক্ষেত্রে ঝাড়গ্রাম পুরসভাকে ব্রাত্য করে রাখা হয়েছে। কৌশলে বাম পুরবোর্ডকে হেয় করার চেষ্টা হচ্ছে।” তবে এবার বিপদের দিনে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি সম্পন্নদের প্রার্থী করা হয়েছে। ৪ নম্বর ওয়ার্ডে স্থানীয় এক সিপিএম নেতার স্ত্রী মণিদীপা সনগিরি ‘উদীয়মান সূর্য’ প্রতীকে বাম সমর্থিত নির্দল প্রার্থী হয়েছেন। স্বচ্ছ ভাবমূর্তির প্রাক্তন সিপিএম কাউন্সিলর (১৯৯৮-২০০৩) মৈত্রেয়ী চৌধুরীকে এবার ১২ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী করেছে সিপিএম। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী হয়েছেন এলাকার ‘ভাল ছেলে’ প্রাক্তন এসএফআই নেতা সৌমেন মাহাতো। টানা দেড় দশকের সিপিএম পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার (১০ নম্বর ওয়ার্ড) ও বর্তমান সিপিএম পুরমাতা (১৮ নম্বর ওয়ার্ড) পিরিল মুর্মু বাদে বাকি সিপিএম প্রার্থীরাই এ বার নতুন মুখ। ৭নম্বর ওয়ার্ডের সিপিআই প্রার্থী তথা উপ পুরপ্রধান প্রদীপ মৈত্র বাদে সিপিআইয়ের বাকি চার প্রার্থীও নতুন মুখ। তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষের টিপ্পনি, “গত তিন দশকে ঝাড়গ্রাম শহরকে কুৎসিততম করে তুলেছে বামেরা। প্রার্থীদের মুখ বদলালেও ওদের চরিত্র বদল হবে না, সেটা পুরবাসী ভালই বুঝে গিয়েছেন। আর সেই জন্যই ওরা মিথ্যে অভিযোগের গল্প ফাঁদছে।” |
|
|
|
|
|