সামান্য শাস্তিতেই রেহাই, শব্দবাজির রমরমা তাই অব্যাহত
ব্দবাজি ফাটিয়ে ধরা পড়ার শাস্তি কেবল কয়েক ঘণ্টা থানায় আটক থাকা আর বড়জোর ৬০-৭০ টাকা জরিমানা। তা হলেই ছাড়া পেয়ে যাবে আইনভঙ্গকারী ব্যক্তি। কঠোর আইন প্রয়োগ করার ব্যবস্থা থাকলেও হ্যাপা পোহানো থেকে রেহাই পেতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুলিশ শব্দবাজি ফাটানোর অভিযোগে ধৃতদের বিরুদ্ধে মামলাই রুজু করে না। কেবল সাধারণ আইনি ব্যবস্থা হিসেবে কয়েক ঘণ্টা আটকে রেখে জরিমানা আদায় করেই ছেড়ে দেয়। গত কয়েক বছর ধরে দীপাবলীর সময়ে শব্দবাজির বাড়বাড়ন্তের পিছনে এটা একটা অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন পুলিশকর্তাদের একাংশই।
কালীপুজো ও দীপাবলী এই দু’দিনে শব্দবাজি ফাটানোর অভিযোগে এ বছর কলকাতায় প্রায় হাজার জন গ্রেফতার হয়েছে।
কিন্তু ধৃতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা হয়েছে ওইটুকুই। এলাকা ভেদে যা করা হয়েছে কলকাতা পুলিশ অ্যাক্ট বা কলকাতা সাবার্বান পুলিশ অ্যাক্ট অনুযায়ী। যে আইনে রাস্তায় বাজি ফাটানোর জন্য জরিমানার ব্যবস্থা রয়েছে।
অথচ এ বছর শ্যামপুকুরে শব্দবাজি ফাটানোর অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়া পুলিশ অফিসার ও কনস্টেবলদের রাস্তায় ফেলে পেটানো হয়েছে, গায়ে থুতু দেওয়া হয়েছে। শব্দবাজি ফাটানোর প্রতিবাদ করার ‘শাস্তি’ হিসেবে উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরে খুন করা হয়েছে এক যুবককে, একই ‘অপরাধে’ কলকাতার চারু মার্কেট এলাকায় এক প্রতিবন্ধী যুবককে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক পিটিয়ে তাঁর চলাফেরার একমাত্র সম্বল হস্তচালিত ট্রাইসাইকেলটি ভেঙে দিয়েছে দুষ্কৃতীরা।
আসলে এত কাণ্ডের পরেও শব্দবাজি ফাটানোর বিষয়টিকে পুলিশ সাধারণ ভাবে অপরাধ (ক্রাইম) হিসেবে গণ্য না, করে নিছক ‘দুষ্টুমি’ (নুইসেন্স) হিসেবেই ধরে। লালবাজারের এক শীর্ষকর্তার কথায়, “সমস্যা হল, এক শ্রেণির মানুষ ধরেই নিয়েছে, অন্যের যতই অসুবিধে হোক না কেন, কালীপুজো-দীপাবলীর সময়ে এই দুষ্টুমি করার অধিকার তাদের রয়েছে। সেই দুষ্টুমি যতই বেআইনি হোক না কেন, এই ব্যাপারে তাদের ঠেকাতে গেলে পুলিশেরও রেহাই নেই। কাজেই নিছক দুষ্টুমি বলে যাকে আমরা এখনও হাল্কা ভাবে দেখছি, সেই কাজে বাধা দিলে এক শ্রেণির মানুষের মধ্যে শুধু ঔদ্ধত্য নয়, চরম অপরাধ করার স্পর্ধাও দেখা যাচ্ছে। যার প্রতিফলন অশোকনগর, চারু মার্কেট আর শ্যামপুকুরের ঘটনা। এ ব্যাপারে আমাদের হাতে আইনি অস্ত্র থাকলেও সেটা প্রয়োগের অনেক সমস্যা রয়েছে।”
দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের অবসরপ্রাপ্ত মুখ্য আইন আধিকারিক বিশ্বজিত্‌ মুখোপাধ্যায় কিন্তু বলেন, “শব্দবাজি যারা ফাটায়, তাদের বিরুদ্ধে ১৯৮৬ সালের পরিবেশ সুরক্ষা আইন ও ২০০০ সালের শব্দবিধি অনুযায়ী পুলিশ মামলা রুজু করতে পারে। পরিবেশ সুরক্ষা আইনের ১৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী, দোষী প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি পাঁচ বছর জেল কিংবা এক লক্ষ টাকা জরিমানা অথবা দু’টোই।” বিশ্বজিত্‌বাবু জানান, কেবল শব্দের ক্ষেত্রে আইনভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে ডিএসপি, এসডিপিও কিংবা সহকারী কমিশনার অথবা তার অধিক পদমর্যাদার কোনও অফিসার নিজেই মামলা রুজু করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ কিংবা পরিবেশ দফতরের অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না। অথচ পুলিশের এই আইনি ক্ষমতার কথা লালবাজারের অনেক কর্তার জানা নেই।
আবার শব্দবাজি যে ব্যবহার করছে, তার বিরুদ্ধে পুলিশ ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৮৬ নম্বর ধারা অনুযায়ীও মামলা রুজু করতে পারে। কেউ বিস্ফোরক ব্যবহার করে অন্য মানুষের জীবন বিপন্ন করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে বলে ওই ধারায় বলা আছে এবং ওই ধারা অনুযায়ী দোষীর সর্বোচ্চ শাস্তি ছ’মাস জেল কিংবা হাজার টাকা জরিমানা অথবা দু’টোই। ওই ধারায় মামলা রুজু করতে পুলিশের সমস্যা কোথায়?
কলকাতা পুলিশের ডিসি (রিজার্ভ ফোর্স) অশোক বিশ্বাস বলেন, “অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা দেখেছি, এই ব্যাপারে পরবর্তী সময়ে সাক্ষী পাওয়া মুশকিল হয়। কারণ, দীপাবলীর পরে ধীরে ধীরে এই সব ব্যাপারে হইচই থিতিয়ে যায়।
মাঝখান থেকে আমরা, পুলিশরা ফেঁসে যাই। এটা যে দণ্ডনীয় অপরাধ, সেই চেতনা কিন্তু মানুষের মধ্যেও আসা দরকার।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.