|
|
|
|
ভারতীয় খেদানোর হুমকি নাইজেরিয়ার |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
গোয়া থেকে নাইজেরিয়ার নাগরিকদের ‘তাড়ানো’ বন্ধ না হলে ভারতীয়দের তাড়ানোর হুমকি দিল নাইজেরিয়া সরকার। সম্প্রতি এক দেশবাসী খুন হওয়ার জেরে গোয়া পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন প্রায় ২০০ জন নাইজেরীয়। তার পরেই ভারতে থাকার উপযুক্ত নথিপত্র না থাকলে বিদেশিদের উৎখাত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মনোহর পারিক্করের সরকার।
ভারতে বসবাসকারী নাইজেরীয়দের একটি বড় অংশ থাকেন গোয়ায়। বিভিন্ন সময়ে তাঁদের বিরুদ্ধে অবৈধ ভাবে ভারতে ঢোকা, মাদক ব্যবসায়ে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। গত ৩০ অক্টোবর রাতে পানজিমের কাছেই মাপুসা শহরে উদ্ধার হয় এক নাইজেরীয়ের দেহ। তাঁকে ছুরি মেরে খুন করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গোলমাল শুরু হয় পরের দিন। নিহতর দেহ মাপুসা থেকে গোয়া মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাচ্ছিল পুলিশ। তখনই হামলা করেন প্রায় ২০০ জন নাইজেরীয়। শববাহী গাড়ি ভাঙচুর করে দেহ ছিনিয়ে নেন তাঁরা। পুলিশের হাত থেকে লাঠি কেড়ে নেওয়া হয়। অবরোধ করা হয় মাপুসা-পানজিম জাতীয় সড়ক। জনতাকে হঠাতে লাঠি চার্জ করে পুলিশ। ৫৩ জন নাইজেরীয় গ্রেফতার হন। গোলমালে জড়িয়ে পড়েন কিছু স্থানীয় বাসিন্দাও। কয়েক জন নাইজেরীয়কে প্রচণ্ড মারধর করেন তাঁরা।
এই ঘটনার পরে নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয় মনোহর পারিক্কর সরকার। পারিক্কর দাবি করেন, মাদক ব্যবসায়ী দুই দলের মধ্যে গোলমালের জেরেই মাপুসায় ওই নাইজেরীয় খুন হয়েছেন। পুলিশ যে মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে তাও মেনে নেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে এই ঘটনার দায় চাপিয়ে দেন তাঁর পূর্বসূরি কংগ্রেস সরকারের উপরে। পারিক্করের দাবি, কংগ্রেস জমানায় পুলিশের সোর্স নেটওয়ার্ক একেবারে শেষ হয়ে গিয়েছিল। গত সাত-আট মাসে তা ফের তৈরি করা হয়েছে।
বৈধ কাগজপত্র ছাড়া গোয়ায় বসবাসকারী বিদেশিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরুর প্রতিশ্রুতি দেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই প্রতিশ্রুতি মেনেই অভিযান শুরুও করেছে পুলিশ-প্রশাসন। নাইজেরীয়দের দাবি, কেবল তাঁদেরই উৎখাত করা হচ্ছে। গোয়া সরকারের পাল্টা দাবি, বেশির ভাগ নাইজেরীয়ের কাছেই উপযুক্ত নথিপত্র নেই। অবৈধ ভাবে বসবাসকারীদের সোজা নিজেদের দেশে পাঠানো হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।
অনেক ক্ষেত্রেই পুলিশের চাপে নাইজেরীয় ভাড়াটেদের স্রেফ ঘর থেকে বের করে দেন স্থানীয় মানুষ। তেমনই এক ভাড়াটে ২৪ বছরের চিয়োমা ঘানসোলি। আঞ্জুনায় একটি বাড়িতে থাকতেন চিয়োমা। তাঁর কথায়, “বাড়িওয়ালা সোজা বের করে দিল। বাধ্য হয়ে এখন সমুদ্রের ধারে থাকছি।’’
স্থানীয় সূত্রে খবর, পুলিশি চাপের পাশাপাশি স্থানীয় মানুষেরও নাইজেরিয়ার নাগরিকদের সম্পর্কে বিদ্বেষ তৈরি হয়েছে। কৃষ্ণাঙ্গ বলে তাঁদের বিদ্রুপ করা হচ্ছে।
পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে গোয়ায় আসেন নাইজেরিয়ার কূটনীতিক জ্যাকব ওয়াদাদিয়া। দু’দিন রাজ্যে ঘোরার পরে গত কাল তিনি সাফ জানান, নাইজেরিয়ার নাগরিকদের অন্যায় ভাবে তাড়ানো হচ্ছে। আইনের শাসন বলে কিছু নেই। ভারতে মাত্র ৫০ হাজার নাইজেরীয় থাকেন। কিন্তু নাইজেরিয়ায় থাকেন ১০ লক্ষেরও বেশি ভারতীয়। গোয়ায় নাইজেরীয় খেদানো বন্ধ না হলে নাইজেরিয়ায় ভারতীয় খেদানো শুরু হবে।
ওয়াদাদিয়া দাবি করেন, বেছে বেছে কেবল নাইজেরীয় বা আফ্রিকার মানুষকে হেনস্থা করছে গোয়া সরকার। এমনকী, স্থানীয় এক গ্রামে পঞ্চায়েত নাইজেরীয়দের আসা বন্ধ করে ফতোয়া জারি করেছে। সেই পঞ্চায়েতের প্রধান বিজেপি নেতা মাইকেল লোবোর স্ত্রী।
ওয়াদাদিয়ার পাশাপাশি সক্রিয় হয় দিল্লিতে নাইজেরিয়ার হাইকমিশনও। হাইকমিশনের জনসংযোগ অধিকর্তা টোকুনবো ফালোহুন জানিয়েছেন,“মাপুসায় নাইজেরিয়ার নাগরিক খুনের ঘটনায় দ্রুত মীমাংসা চেয়ে বিদেশ মন্ত্রককে কূটনৈতিক স্তরে বার্তা দেওয়া হয়েছে।” বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তা হাইকমিশনারকে ফোন করেছিলেন বলেও জানান ফালোহুন। ভারতীয় খেদানোর হুমকি নিয়ে অবশ্য কিছুটা সুর নরম করেছে নাইজেরিয়া। ফালোহুন জানান, নাইজেরীয়রা ভারতে সুবিচার পেলে নাইজেরিয়ায় বসবাসকারী ভারতীয়রাও নিশ্চিন্তে থাকবেন। তাঁরা নাইজেরিয়ায় জীবনযাপনের ক্ষেত্রে সব ধরনের স্বাধীনতা ভোগ করেন। নাইজেরীয়দের জন্য ভারতে সেটুকুই চান তাঁরা।
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে খবর, বিষয়টি নিয়ে আজ দুপুরে হাইকমিশনারের সঙ্গে কথা বলেন পশ্চিম আফ্রিকার ভারপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব। মন্ত্রকের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরুদ্দিনের দাবি, “ভারতীয় খেদানোর হুমকি দেয়নি নাইজেরিয়া। আমরা হাইকমিশন এবং সে দেশের রাজধানী আবুজায় সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। কথা হয়েছে গোয়া সরকারের সঙ্গেও। আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি মেটানো হবে।” |
|
|
|
|
|