তিনি ছিলেন না। কিন্তু মঙ্গলবার দিনভর সতীশ ধবন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র তাঁর পরোক্ষ উপস্থিতি এড়াতেও পারল না। তাঁর তোলা প্রশ্ন সংবাদমাধ্যমের মুখ দিয়ে ধেয়ে এল ইসরোর সাংবাদিক বৈঠকেও।
ইসরোর প্রাক্তন চেয়ারম্যান জি মাধবন নায়ার। তাঁর আমলেই মঙ্গল অভিযানের পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল। এ দিন উৎক্ষেপণ দেখতে কে কস্তুরীরঙ্গন, ইউ রাওয়ের মতো প্রাক্তন অধিকর্তা কিংবা যশপালের মতো বিজ্ঞানীকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও মাধবন নায়ারের দেখা মেলেনি।
কেন আসেননি মাধবন? মুখে কুলুপ এঁটেছেন ইসরো কর্তারা। তবে একটি সূত্রের খবর, স্যাটেলাইট স্পেকট্রাম দুর্নীতি কিংবা মঙ্গলযান নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্কে জড়ানোর পর থেকেই তাঁর থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে চাইছেন ইসরো কর্তারা। পদ ছাড়ার পরে নায়ারের বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে স্যাটেলাইট স্পেকট্রাম বন্টনের অভিযোগ উঠেছিল। যদিও সেই অভিযোগ প্রমাণ হয়নি। কিন্তু তার পর থেকে ইসরোর সঙ্গে সম্পর্ক আর সহজ হয়নি মাধবনের। দূরত্ব এতটাই বেড়েছে যে, মাধবন সম্প্রতি নিজে মঙ্গলযানের সমালোচনা করে মুখও খুলেছেন।
কী বলেছেন মাধবন? তাঁর অভিযোগ, মঙ্গলযান পাঠানোর ব্যাপারে ইসরো খুবই তাড়াহুড়ো করছে। মঙ্গল অভিযানের উদ্দেশ্য সফল করতে হলে মঙ্গলযানের যন্ত্রপাতি আরও অনেক বেশি উন্নত হওয়া দরকার ছিল। তার জন্য আরও অনেক সময় প্রয়োজন ছিল। মাধবনের দাবি, তিনি মঙ্গল অভিযানের বিরোধী নন। কিন্তু ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশ যোগাযোগ প্রযুক্তির আরও উন্নতি না ঘটিয়ে ভিন্ গ্রহে অভিযান করবে কেন? তাঁর প্রশ্ন, উন্নত দেশগুলির সঙ্গে মহাকাশ দৌড়ে নামতে গিয়েই কি এই তাড়াহুড়ো করা হচ্ছে?
এ দিন মাধবন না থাকলেও তাঁর তোলা এই সব প্রশ্ন কিন্তু থেকে গেল। এই নিয়েই সাংবাদিক বৈঠকে জেরবার হলেন ইসরোর বর্তমান চেয়ারম্যান কে রাধাকৃষ্ণন। সংবাদমাধ্যম তাঁকে মনে করিয়ে দিল ইসরো শুরু হওয়ার আগেই ষাটের দশকে প্রতিষ্ঠাতা-অধিকর্তা বিক্রম সারাভাই বলেছিলেন, “উন্নত দেশগুলির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মহাকাশে বা চাঁদে অভিযান চালানোর কথা স্বপ্নেও ভাবছি না। মহাকাশ প্রযুক্তি আপাতত সমাজের উন্নতিতেই লাগানো হবে।” রাধাকৃষ্ণনের কাছে প্রশ্ন ছিল, তা হলে কি এখন সেই পরিস্থিতি পেরিয়ে এসেছে ভারত? রাধাকৃষ্ণনের জবাব, “ভারত কারও সঙ্গে মহাকাশ দৌড়ে নেই। এত দিন সমাজের উন্নতির লক্ষ্যেই মহাকাশ গবেষণা করেছে ইসরো। এ বার তার থেকে কিছুটা এগোনোর চেষ্টা করছে।” ইসরো চেয়ারম্যানের দাবি, মহাকাশ প্রযুক্তির সাহায্যে কৃষি, আবহাওয়া প্রভৃতি ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। ফলে এখন কিছুটা অন্য কাজ করা যেতেই পারে বলে তিনি মনে করেন।
পাশাপাশি, মঙ্গল অভিযানও যে সমাজের কাজেই লাগবে, সে ব্যাপারেও ব্যাখ্যা দিয়েছেন রাধাকৃষ্ণন। কী রকম? তিনি জানান, পিএসএলভি রকেটের মাধ্যমে এ ধরনের উৎক্ষেপণের অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। তা ছাড়া মহাকাশযানটিকে যে ধরনের স্বয়ংক্রিয় ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তা সফল হলে ভবিষ্যতে রিমোট সেন্সিংয়ের উপগ্রহগুলিকেও এই ব্যবস্থার আওতায় আনা যাবে। রাধাকৃষ্ণন বলছেন, “ভবিষ্যতে স্বয়ংক্রিয় রিমোট সেন্সিংয়ের মাধ্যমে অনেক ভাল ভাবে অরণ্য কিংবা সমুদ্রের উপরে নজর রাখা যাবে।” ইসরোর আশা, মঙ্গল অভিযান ভারতীয় প্রযুক্তিকে একটা নয়া উচ্চতায় পৌঁছে দেবে। আগামী দিনে এর উপরে ভিত্তি করে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানো যেতে পারে। “মঙ্গল অভিযানের সাফল্য ভবিষ্যতে বিজ্ঞান গবেষণায় অনুদানের হারও বাড়াবে।”মন্তব্য ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোফিজিক্স-এর বিজ্ঞানী সুজন সেনগুপ্তের।
তা হলে মাধবন কতটা ঠিক? সাংবাদিক বৈঠকে এ বার নামটা সরাসরি উঠতেই রাধাকৃষ্ণনের ঝাঁঝালো উত্তর, “ওঁর ব্যাপারে ওঁকেই জিজ্ঞাসা করুন।”
|