বিকাল গড়িয়ে পড়তেই গরুর পাল রওনা হয়। বাংলাদেশের পথে তাদের পিছনে পিছনে যায় একদল সশস্ত্র পাচারকারী। রাস্তায় পড়ে একের পর এক ধান ক্ষেত। সে সব মাড়িয়ে চলে যায় তারা। কেউ বাধা দিতে গেলে পাচারকারীদের হুমকির মুখে পড়তে হয় তাঁদের। গত এক মাসে এভাবেই গরু পাচার চলতে থাকায় কোচবিহারের সীমান্ত এলাকা গীতালদহে দেওয়ান বস, ভোরাম পয়েস্তি, দরিবস কলোনি এলাকার প্রায় ১০০ বিঘার ধান খেত নষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই ঘটনায় ক্ষোভ তৈরি হয়েছে তিন গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, সারা দিন ধরেই পাচার চলে সন্ধ্যার দিকে প্রায় এক হাজার গরু একবারে ওই রুট ধরে পাচার করা হয়। সে সময় গরুর দলকে আটকানোর মতো পরিস্থিতি থাকে না। পাচারকারীরা সশস্ত্র অবস্থায় থাকে বিএসএফ জওয়ানরাও তাঁদের পথ আটকাতে সাহস পায় না। দিনহাটার ভারপ্রাপ্ত মহকুমাশাসক সব্যসাচী রায় বলেন, “আমার কাছে কৃষকরা কোনও অভিযোগ জানায়নি। বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” কোচবিহারের বিএসএফের কর্তা বলেন, ওই এলাকায় সীমান্ত উন্মুক্ত আমাদের হাতে যে জওয়ান রয়েছে তা দিয়ে কড়া পাহারা দেওয়া হয়। তার পরেও গরু পাচার হচ্ছে এটা অস্বীকারের জায়গা নেই। বিষয়টি উর্ধবতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
বাংলাদেশ সীমান্তের একদম লাগোয়া গ্রাম পঞ্চায়েত গীতালদহ ওই পঞ্চায়েতের তিনটি গ্রাম দেওয়ানবস, ভোরামপয়েস্তি, দরিবস সেখানকার বাসিন্দারা পুরোপুরি কৃষির উপর নির্ভরশীল। বাসিন্দারা জানান, দেওয়ানবস, ভোরামপয়েস্তি পার হয়ে ধরলা নদী নদীর ওপারে দরিবস তার পরেই বাংলাদেশ চোরাকারবারীরা ওই পথ ধরেই গরু পাচার করে।
নদীপথের কারণে ওই এলাকায় একটি বিশাল অংশ কাঁটাতারের বেড়া নেই। তাতেই সুবিধা হয়েছে চোরা কারবারীদের। ওই পথে কয়েকশ বিঘা জমি পড়ে। কৃসকরা সেখানে ধান চাষ করেন। ওই জমির উপর দিয়ে গরু যাওয়ায় প্রায় ১০০ বিঘার ধান নষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। এলাকার কৃষক প্রাণকৃষ্ণ বর্মন বলেন, “তিন বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। তার মধ্যে এক বিঘার ধান নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কিছু বলতে গেলে আমার বিপদ হতে পারে। তাই চুপ করে থাকতে হয়।”
একই রকম অভিযোগ চন্দন বর্মন, কটকু বর্মন, অনন্ত বর্মন কিংবা জগদীশ বর্মনদের। তাঁরা বলেন, “সবার হাতে অস্ত্র ধরা থাকে। কাকে আর কী বলব। বিএসএফ-এর কয়েক জন জওয়ান পাহারায় থাকেন। তাঁরাও ওই দলকে দেখলে সরে যান। কারণ, তাঁদের সঙ্গে তারাও লড়াই করতে সাহস পান না। আমরা সেখানে যাই কী করে?”
পুলিশ সূত্রের খবর, গীতালদহের দীর্ঘদিন ধরেই চোরাকারবারীরা সক্রিয় স্থানীয় যুবকদের একটি অংশ ওই কারবারের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। তাঁদের জোরেই কারবারিরা সীমান্ত এলাকায় ভয়ের পরিবেশ কায়েম করে রেখেছে বলে অভিযোগ। গীতালদহের বাসিন্দা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত মইনুল হক বলেন, “গরু পাচারের জন্য প্রচুর ধান নষ্ট হয়েছে। এমন হলে বাসিন্দারা অভাবে পড়বেন। বিষয়টি প্রশাসনের দেখা উচিত।” |