|
|
|
|
উত্তরের চিঠি |
|
আমরা দলটা গড়েছি, কিন্তু দেশ গড়ব কবে |
|
ভাল নেই স্টিফোর হোরোরা।—নিজস্ব চিত্র। |
কিছু দিন আগেও যা ছিল দৃশমান, আজ তা হঠাৎ করে হারিয়ে অন্য পথ বা অন্য আলো। এ পথ কার? আমার-আপনার-আমাদের। কিন্তু দেখার চোখটা সবার নয়। দিনের বেলায় এক টুকরো যাতায়াত অনেক কিছু বদলে দিয়েছে। জীবন, জীবিকা, শিক্ষা, চরিত্র সব। এ সব এলোমেলো যুক্তির উৎসব নেই। আবার উৎসবের যুক্তি থাকতে নেই। ধ্যাঙনপাড়া থেকে এক ছেলে সব বাসে চড়ে বসে। হাতে মাধ্যমিকের রেজিস্ট্রেশন কার্ড। তারিখ, সাল ওভারলুক করলেও এতে কারচুপি ছিল না। আজও নেই। মাধ্যমিক দেব, পড়ব আরও বড় হব। তো! বড় হও। নিজের মতো করে গড়ে নাও ভবিষ্যৎ। অসুবিধে কোথায়? না টাকার দরকার। প্রথমে সবাই দশ কুড়ি পাঁচ দিলেও সময়ের সঙ্গে মানি কালেকশনের দিক স্পষ্ট হয়ে গেল। মাস্টার, কেরানি, অধ্যাপক, মাল্টিপারপাস সবাই জেনে গেল সেই স্টিফেন হোরোকে। একতাল কালো পাথরে গড়া তরুণের স্বপ্ন নাইট বাসেও জ্বলজ্বল করে। আড়ালে প্রশ্ন ওঠে শুকনো নেশা করে। এর পর বাসে চাপলে চড়, গালি, অপমান। না, এর পর ফুল স্টপ দিলেই বাক্যটা শেষ হয় না। সেমিকোলন, কমা, বিস্ময়সূচক চিহ্নের প্রয়োজন হল এক দিন। ড্রপ আউট ছেলেটিকে রিহ্যাবে পাঠানো যেত, হয়নি। ও কী করতে চায়, মাথায় হাত রেখে কোথাও কেউ বলেনি। এর মানে কি এটাই দাঁড়ায় যে, ওর শিক্ষা যথাযথ হয়নি। ছোট থেকেই গোড়ায় ভুল ছিল। সেখানে মিড ডে মিল ছিল, ব্ল্যাকবোর্ড ছিল, হয়তো টিচারও ছিলেন। কিন্তু ফোর বি-র উদ্দাম লাস্ট বেঞ্চ থেকে একটা কষ্ট, ঘেন্না, যন্ত্রণার মানুষ গড়ে নেবে অবৈতনিক বিদ্যালয় কাম্য নয়। ছেলেটির পানিশমেন্ট খুব প্রয়োজন ছিল। হাতের বুধ, শনি, বৃহস্পতি স্পষ্ট না হতেই বেতের বাড়ি অপ্রত্যাশিত রেড লাইন তৈরি করেছে বারবার। যোগে ভুল, শাসন শুরু দন্ত ‘স’ দিয়ে। বড় হলে সামলে নেবে। তিনটেয় স্কুল বেল। তার পর? কেউ জানত না সবাই ঘরে ফিরে যায় কি না। এর দায় শিক্ষকের নয়। এর দায় সমাজের। সবাই বলত, আধুনিক গল্পে সোশাল কমিটমেন্ট হারিয়ে যাচ্ছে। যে ভাবে আমাদের থেকেও বিলীয়মান ফ্যানপথিলিন সামাজিক বোধ, কর্তব্য, দায়িত্ব। গত সপ্তাহে ব্যাগের থেকে চার খানা বই বেরিয়ে এল। হিন্দুদের সংস্কার, ওয়ার্ড বুক, গ্রামার, সঙ্গে তালিবানি রান্নাঘর ফ্রি। আশ্চর্য! সেই স্টিফেন হোরো হকার হয়ে গেল। বিনিময়ে ভোরের আলোর মতো ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে সবার কাছে। হাসি, বিস্ময় এক্কাদোক্কা খেলছে বাসময়। সকলে সাদরে দশ টাকায় কিনে নিচ্ছে ছেলেটির বোধ, দর্শন, আগামী। আর কোনও দিন ওর নামে অ্যাডমিট কার্ড ইস্যু করবে না পর্ষদ। কিন্তু সময়ের গালে, সমাজের শরীরে একটা অদৃশ্য আঘাত চিহ্ন তৈরি করে এ প্রত্যাবর্তন। আমরা কী ভুলেছিলাম মাটি নরম থাকতেই তাতে দাগ পড়ে, শুকোলে তা থেকে যায় জীবনভর। উচ্চশিক্ষায় ইনভেস্ট করেছে সরকার পরিবার। সান, ভাবা, বোস ইনস্টিটিউটে ড্রিম তৈরি হয়েছে সন্তানের। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষাকে ‘ঢেলে’ সাজার অর্থ এখনও বুঝল কেউ? চিন, সিঙ্গাপুর, কোরিয়া স্পেশাল প্যাকেজ দিয়ে শিক্ষক নিয়োগ করছে। মেধাবী, উচ্চশিক্ষিত গবেষককেও এই বর্ণহীন ক্লাসরুমে ফরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। আমরা পারলাম কোথায়? দল গড়েছি বারবার। দেশ গড়ার কথা ভাবিনি। প্রাথমিক শিক্ষকদের দায়িত্ববোধ, যাতায়ত, সুবিধে, মানসিকতা নিয়ে কোথাও আলোচনা, সেমিনার হয়নি। তারাই যে চারাগাছকে গরু ছাগল থেকে আগলে সামাজিক বেড়া হয়ে দাঁড়িয়ে। স্বীকৃতি দেয়নি কেউ। জন্মের পর একটা শিশু তার দ্বিতীয় পিতৃত্ব-মাতৃত্বের সন্ধানে প্রাথমিক স্কুলে ছুটে যায়, আমরা মনে রাখিনি। মাঝে মাঝে গঠনের চিন্তাটা প্রবল ঝড়ে গাছের মতো ঝাঁকি দিয়ে উঠলেও সংগঠন মুখ চেপে ধরেছে। আরও দূরে চলে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সন্ধ্যার বিশেষ বৈঠক। বছর বছর প্রশিক্ষণ চলছে। প্রাথমিক শিক্ষক পাঠ নিয়ে তার সহযোদ্ধাদের গভীরে রোপণ করার চেষ্টা করছেন লেসন প্ল্যান। তাতে কী এই সব হাফ প্যান্ট, ফুলশার্ট, লাল ছোপ ফ্রকের প্রগ্রেস হয়েছে? নইলে কেন সে লিখেছিল, রবিঠাকুরের মায়ের নাম সারদা বিবি। তিনি রোজ নামাজ পড়তেন। হজ করতে গিয়ে নোবেল পান। আর ফিরে আসেননি। কী অদ্ভুত লজিক, আশ্চর্য ফিলসফির মিশেল সে দিন চেপে রাখতে পারেননি মাস্টারমশাই। দুরন্ত বালকের এই বোধকে ফোনে ফোনে চালান করে দিয়েছিলেন তখনই। এক জটিল রোগে আচ্ছন্ন আমাদের এই প্রাথমিক শিক্ষা। চিকিৎসক প্রয়োজন, প্রয়োজন রোগ নিণর্র্য়ক যন্ত্রের। কিন্তু সমস্ত বোধকে বন্ধক দিয়ে এর উত্তরণ অসম্ভব। টিনএজারদের বড় হওয়ার প্রস্তুতি যেখানে শুরু। সেখানেই আরও আকর্ষক প্যাকেজ, ভাল মান, মেধার জোগান জরুরি। হাতে একশো কিলোমিটার বাস, দুই কিলোমিটার সাইকেল, এক কিলোমিটার হেঁটে যাওয়ার পরেও স্কুল, ছাত্রকে দূরের মনে না-হয়। এসএসসি, পিএসসি, সিএসসি অনেক হল। ল্যাবেরেটরি, লাইব্রেরি, পানীয় জল, কম্পিউটার একটু বিশ্রাম নিক। এ বার প্রাথমিক স্কুল, মাস্টার তাদের বেতনক্রম, মেধা, যোগ্যতা, যোগাযোগ নিয়ে একটু সময় খরচ করি। নইলে ল্যাব, লাইব্রেরি, কম্পিউটার রুম ধীরে ধীরে এক দিন লুপ্ত হয়ে যাবে। সে দিন বিস্ময়সূচক শব্দ, কমা, সেমিকোলনও ফালতু হয়ে যাবে। একটা কাল-গ্রহ ঝাঁপ দেবে অবৈতনিক বিদ্যালয়ে। হীরে, চুনি, পান্না, প্রবালেও সে দিন সমাজ, শিশু, মাস্টার, ক্লাস কোনওটাই বাঁচবে না। |
সন্দীপন নন্দী। বালুরঘাট, দক্ষিণ দিনাজপুর
|
জলদাপাড়ায় বাড়ছে মহিলা কাঠচোর |
জলদাপাড়াকে জাতীয় উদ্যান হিসাবে ঘোষণার পর থেকে কাঠ চুরি বেড়েই চলেছে। যদিও তার পদ্ধতির পরিবর্তন হয়েছে। নতুন পদ্ধতিতে মহিলাদের রাতে জঙ্গলে পাঠানো হচ্ছে। আর সঙ্গে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছে পুরুষদের দল। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই বিপাকে পড়েছেন বনকর্মীরা। মহিলা চোরদের গ্রেফতার করার মতো পরিকাঠামো বন দফতরের হাতে নেই। জানা গিয়েছে যে, সম্প্রতি জলদাপাড়া-সহ আশেপাশের প্রায় সমস্ত বনাঞ্চলেই এ প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে। এ কাজে রোজ কেবল জলদাপাড়ায় কয়েকশো মহিলা প্রবেশ করছে। পুরুষেরা গাছ কেটে কাঠ তৈরি করে দিচ্ছে আর মহিলারা সেগুলি নিয়ে আসছে। বিশেষ করে জ্বালানি কাঠের জন্যই এই ভাবে অবাধ বৃক্ষনিধন চলছে। এ জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দায়ী রান্নার গ্যাসের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। ফলে জ্বালানি কাঠের কদরও বেড়েছে মারাত্মক ভাবে। এক বিশেষ সূত্রে খবরজলদাপাড়া ও খয়েরবাড়ি অঞ্চলে যেন বৃক্ষনিধনের প্রতিযোগিতা চলছে। সকাল থেকেই শুরু হয়ে যায় মহিলাদের জঙ্গলে যাতায়াত। চলে রাত ৯টা অবধি। বনরক্ষীদের কাছ থেকেই জানা গিয়েছে যে, আগে পুরুষেরাই জঙ্গলে কাঠ সংগ্রহে যেত। কিন্তু তাদের গ্রেফতার করে উপযুক্ত সাজা দেওয়ার ফলে মাঝে কিছু দিনের জন্য বৃক্ষনিধন কমেছিল। কিন্তু সম্প্রতি লক্ষ করা যাচ্ছে যে, পুরুষেরা আর একা জঙ্গলে না গিয়ে বাড়ির মহিলাদের আগে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এই প্রবণতার একটি বড় কারণ হল মহিলা বনরক্ষীর অভাব। এর ফলে সব কিছু দেখেও নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে পুরুষ নিরাপত্তারক্ষীরা তাদের গ্রেফতার করতে পারছেন না। বর্তমানে যে রকম পরিস্থিতি হয়েছে, তাতে এই রকম চলতে থাকলে জলদাপাড়া বনাঞ্চলসহ আশপাশের এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী অরণ্যগুলি ধ্বংস হতে আর খুব বেশি সময় বাকি নেই। বর্তমানে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে প্রবেশ করলে দেখা যায়, জঙ্গল যেন প্রায় গড়ের মাঠ হয়ে গিয়েছে। মূল্যবান নানা গাছ প্রায় নেই বললেই চলে। আর মহিলাদের ব্যবহার করার যে প্রবণতা শুরু হয়েছে, তাতে এখনই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারলে পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে। |
জয়ন্ত ভট্টাচার্য। পান্ডাপাড়া, জলপাইগুড়ি |
|
|
|
|
|