শুধু বারাসত নয়, অশোকনগর থেকে বাগদা উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার এই বিস্তীর্ণ এলাকা এখন যেন হয়ে উঠেছে একটা কালীতীর্থ। দুর্গার পাশাপাশি, কালীর আরাধনার যেন ধুম লেগেছে। থিমের মণ্ডপ-প্রতিমার আকর্ষণে রাত জাগছেন মানুষ। কোথাও মণ্ডপ তৈরি হয়েছে মাটির ভাড় দিয়ে, কোথাও বা পাটের। প্রতিমাতেও রয়েছে আধুনিকতার ছাপ। প্রতিমার উপকরণ হিসেবে রয়েছে পয়সা, পোড়ামাটি, ঝিনুক।
অশোকনগরের ১/৩ পশ্চিমপল্লি প্রান্তিক ক্লাবের এ বারের মণ্ডপ তৈরি হয়েছে এক লাখ মাটির ভাঁড় দিয়ে। সঙ্ঘশ্রী ক্লাবের মণ্ডপ আবার তৈরি হয়েছে সোমনাথ মন্দিরের আদলে। আসরাফবাদ মেঠোফুল সঙ্ঘ তাদের ৩৫ বর্ষে থিম করেছে দার্জিলিং। |
প্রতিমা এখানে কাগজ দিয়ে তৈরি। ৮-এর পল্লি অগ্রদূত ক্লাবের পুজোয় আবার উঠে এসেছেন হিন্দু ধর্মের দেব-দেবীরা। শ্রীকৃষ্ণ, চৈতন্যদেব, তিরুপতি বালাজী, শ্রীরামকৃষ্ণ দিয়ে তৈরি হয়েছে বিচিত্র মিলন গাথা। হাবড়ার শ্রীপুর ভারতী সঙ্ঘের মণ্ডপ তৈরি হয়েছে পাট দিয়ে। কলসি হাতে মেয়ে, তালগাছ থেকে শিবমন্দির, সবই পাটের। শ্রীপুর স্পোর্টিং ক্লাবের শ্যামাপুজোয় আবার কালী পূজিত হচ্ছেন বৌদ্ধ মন্দিরে, মণ্ডপের সামনে রয়েছে শিবলিঙ্গ। পিতলের কারুকার্যও রয়েছে তাতে।
শ্রীপুর ইস্টবেঙ্গল বয়েজ ক্লাবের মণ্ডপ এ বার তৈরি হয়েছে মায়াপুরের ইস্কন মন্দিরের আদলে। মছলন্দপুর বয়েজ ক্লাব তাদের ৩৮ তম বর্ষে অসমের তাম্রমন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি করেছে। প্রতিমা তৈরি করেছেন ক্লাব সদস্য সুজিত সাহা। আলোকসজ্জায় রয়েছে টম অ্যান্ড জেরি বা ছোটা ভীমের মতো কার্টুন চিত্র। মূল ফটকে দেখা যাচ্ছে, অর্জুনকে রথে বসিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন কৃষ্ণ। মছলন্দপুরে অগ্নিবীণার এ বারের থিম অস্ট্রেলিয়ার সিডনি। পুজোর ২৩তম বর্ষে গোটা সিডনি শহরটাই তুলে এনেছেন তাঁরা। রয়েছে ১২০ ফুট লম্বা ব্রিজও। দর্শনার্থীদের জন্য মূল আকর্ষণ ক্যাঙারু। গোবরডাঙার খাঁটুরা উত্তরপাড়ার শ্যামাপুজো এ বার সুবর্ণজয়ন্তীতে পড়েছে। ওড়িশার একটা মন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি করেছে তারা। মণ্ডপের দেখা মিলবে জ্যান্ত কঙ্কালদেরও।
গাইঘাটার চাঁদাপাড়া বয়েজ ক্লাব তাদের ৩১ তম বর্ষে আশি হাজার পয়সা দিয়ে প্রতিমা তৈরি করেছে। অচল পয়সা ব্যবহার করা হয়েছে। গৌরবোজ্জ্বল ক্লাবের মণ্ডপ তৈরি হয়েছে মাদুরাইয়ের মন্দিরের আদলে। হোগলাপাতা, বাঁশ, মাদুরকাঠি ব্যবহার করা হয়েছে। আলোতে তুলে ধরা হয়েছে রামায়ণের ঘটনাবলি। মা কালী এখানে রথে এসেছেন। বনগাঁতে নবারুণ সঙ্ঘের পুজোতে বাঁশ দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে কালীর বিভিন্ন রূপ। সেবাটি এগিয়ে চলো নবীন সঙ্ঘের এ বারের থিম টিপু সুলতানের মহীশূর মন্দিরের আদলে মণ্ডপ।
বহু বছর ধরেই কালীপুজো জাঁকজমক ভাবে হচ্ছে সীমান্ত-লাগোয়া ব্লক বাগদাতে। এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। স্থানীয় নবারুণ সঙ্ঘ তাদের ৩৪ তম বর্ষে মহারাষ্ট্রের নাসিকের বিশ্বনাথ মন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি করেছে। প্রতিমা কুমোরটুলির। শিবের জটা থেকে গঙ্গা বয়ে চলেছে। আলোতে দেখা যাচ্ছে, কুমোরপাড়ার গরুর গাড়ি। নাটাবেড়িয়ার আমরা সবাই ক্লাব কাল্পনিক মন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি করেছে। দিঘির পাড় যুব গোষ্ঠীর পুজোর থিম মিশরের পিরামিড। থাকবে মমি, জ্যান্ত চামচিকে, বালির উপরে জ্যান্ত ঘোড়া।
হেলেঞ্চা সবুজ সঙ্ঘের মেদিনীপুরের কাঁথির শিল্পীরা পাট কাঠি দিয়ে মণ্ডপ তৈরি করেছেন। হেলেঞ্চা স্পোর্টিং ক্লাব মণ্ডপ তৈরি করেছে দক্ষিণ ভারতের মন্দিরের আদলে। দক্ষিণ ভারতের মীনাক্ষি মন্দিরের আদলে। ভবানীপুরের বিবেকানন্দ স্পোর্টিং ক্লাবের থিম কৈলাশ। যোগীন্দ্র স্মৃতি সঙ্ঘ মালয়েশিয়ার গণপতি মন্দিরের আদলে মম্ডপ তৈরি করেছে। এছাড়াও নব মিলন সঙ্ঘ, ভবানীপুর ইয়ং ক্লাবের পুজোও উল্লেখযোগ্য। আজ, সোমবারও মণ্ডপে প্রতিমা থাকবেন বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। |