ডাকাতের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ, মৃত্যু এসআই-এর
ডাকাতি হচ্ছে খবর পেয়ে দু’জন কনস্টেবল নিয়ে ছুটে গিয়েছিলেন কল্যাণী থানার এক টহলদারি অফিসার। কিন্তু তাঁর হাতে ছিল কেবল একটি ছ’ঘরার রিভলভার। সঙ্গী কনস্টেবলদের হাতে ছিল শুধু লাঠি। ডাকাতেরাও পাল্টা গুলি ছুড়তে শুরু করলে কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই অফিসার বুঝতে পারেন, এই ভাবে বেশিক্ষণ চালানো যাবে না। তিনি আরও বাহিনী চেয়ে খবর দেন থানায়। আই সি তুষার কর তখন আরও দু’জন রাইফেলধারী কনস্টেবল এবং এসআই সুজিত ভৌমিককে (৫৮) নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন। শনিবার কালীপুজোর রাত তিনটে নাগাদ কল্যাণী
সুজিত ভৌমিক
শিল্পাঞ্চলের একটি বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম তৈরির কারখানার সামনে তখন দুষ্কৃতী আর পুলিশের খণ্ডযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। কারখানায় লুঠপাট চালাতে সঙ্গে গাড়ি নিয়ে এসেছিল দুষ্কৃতীরা। পুলিশ দেখে তখন মুড়ি মুড়কির মতো বোমাও ছুড়ছিল তারা। উত্তেজনায় কাহিল হয়ে পড়েন সুজিতবাবু। পরে ব্যারাকে ফিরে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। কল্যাণীর গাঁধী মেমোরিয়াল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। সেখানেই রবিবার ভোরে মারা গিয়েছেন সুজিতবাবু। দুষ্কৃতীদের কাউকেই ধরা যায়নি। তবে তারা কোনও কিছু নিয়ে পালাতে পারেনি।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সুজিতবাবু সেই রাতে থানায় প্রশাসনিক কাজকর্মের দায়িত্বে ছিলেন। কোনও অস্ত্র ছাড়াই তিনি সে সময়ে তড়িঘড়ি বেরিয়ে পড়েছিলেন। নদিয়ার পুলিশ সুপার সব্যসাচী রমণ মিশ্র বলেন, “ওই পরিস্থিতিতে ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌঁছনোটাই জরুরি ছিল। সেই কারণে সুজিতবাবু দ্রুত বেরিয়ে পড়েছিলেন। তারপরে তিনি সাহসের সঙ্গে ঘটনার মোকাবিলাও করেছেন। কিন্তু তাঁর হৃদ্যন্ত্র আগে থেকেই দুর্বল ছিল। তাই ওই উত্তেজনার ধকল সম্ভবত নিতে পারেননি।” পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দুষ্কৃতীরা পুলিশের আক্রমণের মুখে পড়ে কারখানা চত্বর থেকে সরে গিয়ে ঝোপঝাড় থেকে গুলি বোমা ছুড়েছে।
বেশ কয়েকদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন সুজিতবাবু। পুলিশ সুপার বলেন, “তাঁর মৃত্যুতে আমরা সকলেই শোকাহত। একজন কাজের মানুষকে আমরা হারালাম।” পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, দুষ্কৃতীরা সংখ্যায় অনেক বেশি ছিল। তাদের হাতে অস্ত্রও ছিল অনেক। উল্টো দিকে পুলিশকর্মীদের বেশিরভাগই কালীপুজোর রাতে নানা দায়িত্বে নানা জায়গায় ছড়িয়ে ছিলেন। তবু ওই ডাকাতির খবর পেয়ে তাঁরা অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে যথাসম্ভব দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। ওই রাতে কিছুক্ষণ পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান কল্যাণীর মহকুমা পুলিশ আধিকারিক চন্দ্রশেখর বর্ধন। ততক্ষণে অবশ্য গাড়ি ফেলে চম্পট দিয়েছে দুষ্কৃতীরা।
তারা সংখ্যায় অন্তত পনেরো-ষোলো জন ছিল।
কিন্তু অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও কেন সুজিতবাবুকে ডাকাত ধরতে পাঠানো হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। থানাগুলোতে প্রয়োজনের তুলনায় পুলিশকর্মী কম থাকার সমস্যার কথাও ফের উঠে এসেছে এই ঘটনার পরে। পুলিশ সুপার সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, “সব প্রতিকূল পরিস্থিতি মেনেই আমাদের কাজ করতে হয়। ঠিক কী কী সমস্যা হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখা হবে।”
ব্যারাকপুর চাঁদমারির বাসিন্দা সুজিতবাবু মাস ছ’য়েক আগে কল্যাণী থানায় সাব ইন্সপেক্টর পদে যোগ দিয়েছিলেন। দক্ষ ও শান্ত অফিসার হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। তাঁর স্ত্রী মারা গিয়েছেন। একমাত্র ছেলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। বাবার মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না সে। মা-হারা ছেলের জন্য আতশবাজিও কিনেছিলেন সুজিতবাবু। কথা ছিল রবিবার সেই বাজি ফাটানো হবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.