পর্যাপ্ত পরিকাঠামো না গড়েই বাম আমলে উদ্বোধন হয়েছিল লোকসংস্কৃতি ও আদিবাসী সংস্কৃতি কেন্দ্র ‘লোকগ্রাম’-এর। ফি মাসে দক্ষিণ কলকাতার এই কেন্দ্রের পিছনে খরচ হচ্ছে প্রায় সাত লক্ষ টাকা। তবে কেন্দ্র গড়াই সার, পরিকাঠামোর অভাবে উদ্দেশ্যসিদ্ধি হয়নি। পর্যটক টানা দূরে থাক, লোকশিল্পীরাও অনেকে জানেন না এমন কেন্দ্রের অস্তিত্বের কথা। প্রায় সাড়ে তিন বছর পরে অবশেষে এটির উন্নয়নে উদ্যোগী হচ্ছে রাজ্য সরকার।
ই এম বাইপাসের কাছে লোকগ্রামে ২৬৫ আসনের একটি প্রেক্ষাগৃহ আছে। চার ঘণ্টার জন্য তার ভাড়া সাড়ে তিন হাজার টাকা। বছরে সেখানে গড়ে দু’টি অনুষ্ঠানও হয় না। আছে একটি গ্রন্থাগার, শহরের অতিথি লোকশিল্পীদের থাকার জায়গা, সংগ্রহশালা প্রভৃতি। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল সুন্দর পরিবেশ অথচ দর্শক নেই। গ্রন্থাগারে পাঠক নেই। সংগ্রহশালা তালাবন্ধ। অনুরোধ করলে অবশ্য কেয়ারটেকার নূর মহম্মদ মোল্লা তা দেখার ব্যবস্থা করে দেন।
লোকগ্রাম সূত্রের খবর, প্রতি বছর কর্মীদের বেতনবাবদ বরাদ্দ হয় প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা। অন্য নানা খরচ লাগে বছরে ৪৫ লক্ষ টাকার মতো। আয় নির্দিষ্ট কিছু প্রকাশনা বিক্রি করে লাখ দুই টাকার মতো। কেন এই হাল? কর্তাদের মতে, এ রকম একটা প্রকল্পের কথা লোকশিল্পীমহলেও অনেকেই জানেন না। বাইপাস থেকে পূর্ব দিকে হেঁটে এই কেন্দ্র প্রায় ২০ মিনিটের পথ। প্রশাসক মতিলাল কিস্কু বলেন, “অব্যবস্থাগুলো দূর করতে একটি প্রস্তাব সম্প্রতি উপরমহলে পাঠানো হয়েছে।”
যাদবপুর বিধানসভা কেন্দ্রের অধীন কালিকাপুর-নিতাইনগরে এক দশক আগে প্রায় ২৬ বিঘা আয়তনের একটি জমিতে এই লোকগ্রাম তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। যাঁরা সেখানে চাষ করতেন, তাঁদের কাছ থেকে পরিবারপিছু বিঘাপ্রতি ২০ হাজার টাকা এবং পাঁচ কাঠা জমির বিনিময়ে ১৯৯৪-৯৫ সালে এলাকাটির দখল নেয় রাজ্য সরকার। জমির পশ্চিমের একাংশের মাটি কেটে পূর্ব দিকে ফেলে উঁচু করে এই কেন্দ্র তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। ২০০৮-এর ১৩ মে কাজ শুরু করে ম্যাকিনটশ বার্ন। তৈরি হয় তিনটি ভবন। পরিকাঠামো সম্পূর্ণ না করেই ২০১০-এর ১৬ এপ্রিল এটির উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণমন্ত্রী যোগেশ বর্মণ, তৎকালীন মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এবং তদানীন্তন তথ্য ও সংস্কৃতি রাষ্ট্রমন্ত্রী সোমেন্দ্রনাথ বেরা। এর কিছু দিন পরেই বিধানসভা ভোটের বাজনা বেজে ওঠে।
পরিকাঠামো কোথায়, কেন অসম্পূর্ণ? মতিলাললাবু বলেন, “২০-২২ জন কর্মী আছেন, কিন্তু সংগ্রহশালা দেখানোর নির্দিষ্ট লোক নেই। তাই ওটা বন্ধ করে রাখতে হয়। শিল্পী-আবাস করা হলেও আসবাব কেনা হয়নি।” তিনি জানান, এ ছাড়াও, প্রচারের জন্য রাস্তার প্রবেশমুখে বাইপাসের পাশে একটা বড় ফলক লাগানোর পরিকল্পনা হয়েছে। লাগোয়া জলাশয়ে নৌকো চালানো, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা, লোকগ্রামে পর্যটক আনা এ সবের জন্যও প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
তথ্য ও সংস্কৃতিসচিব অত্রি ভট্টাচার্য বলেন, “লোকগ্রামের পরিকাঠামো ভাল করা এবং পর্যটক টানার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আশা করছি শীঘ্রই ইতিবাচক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে।” |