বিলে জাল ফেললেই উঠে আসে কাতলা, রুই। কিন্তু চুনো মাছ কই? অথচ বাজারে গেলেই লোকে খোঁজে টাটকা মৌরলা, ময়রা, খোলসে, চাঁদা। খাল-বিলে চুনো মাছ ফেরাতে মৎস্যজীবীরা তাই শুরু করলেন শক্তির আরাধনা। দেবীর ভোগেও মুখ্য হয়ে উঠল চুনো মাছের নানা পদ।
প্রায় ১২ বছর ধরে এই রেওয়াজই চলে আসছে পূর্বস্থলী ১ ব্লকের শ্রীরামপুর পঞ্চায়েতের বড়কোবলা গ্রামে। সমুদ্রগড়ের নিমতলাবাজার থেকে এসটিকেকে রোড ধরে কিছুটা এগিয়েই চোখে পড়ে মোরামের রাস্তা। সেই রাস্তা ধরে কিলোমিটার খানেক গেলেই পড়ে লোহার ব্রিজ। ব্রিজের ধারেই খড়ের ছাউনিতে পুজিত হন চুনো কালী। |
বড়কোবলা গ্রামে চাঁদের বিল এবং বাঁশদহ বিলকে ঘিরে বাস করেন প্রায় দেড়শো ঘর মৎস্যজীবী। তাঁরাই জানান, সারা বছর রুজির টানে মাছ ধরলেও পুজোর দু’দিন সবার ছুটি। পুজোর আগে থেকে শুধু মণ্ডপ নয়, পরিস্কার করা হয় খাল-বিলও। তারপর সবাই মিলে নিজেদের মাছ ধরার জাল, ঘুষি দিয়ে মণ্ডপ সাজান। চুনো মাছের নানা পদ দেওয়া হয় দেবীর ভোগে। স্থানীয় মৎস্যজীবী হরিদাস সরকার বলেন, “দেবীর ভোগে যে চুনো মাছ নিবেদন করা হয়, তা আমরা নিজের হাতে ধরি।”এছাড়া রাস্তার পাশে বড় উনুন জেলে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করেন এলাকাবাসী। সব্জি দিয়ে খিচুড়ি আর পায়েসে জমে ওঠে আড্ডা। রাতে মণ্ডপের পাশে বাঁশের মঞ্চ বেঁধে বসে যাত্রাপালার আসার। পুজোর শুরু থেকেই স্থানীয় মৎস্যজীবীদের সঙ্গে ছিলেন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। এ বছরও সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ছিলেন তিনি। পুজো তদারকি করার পাশাপাশি মৎস্যজীবীদের সঙ্গে বৈঠকও করেন। তিনি বলেন, “নানা ব্যস্ততা থাকলেও চুনো কালীর পুজো ছেড়ে অন্য কোথাও যাই না।” স্থানীয় বাসিন্দা রঞ্জন গাইন, রঞ্জিত বিশ্বাসেরাও বলেন, ফি বছর মায়ের কাছে আমাদের প্রার্থনা একটাই, বছরভর যেন চুনো মাছে বিল ভরে থাকে।
এই প্রার্থনা নিয়েই বিলের জলে কলার ভেলায় প্রদীপ ভাসিয়ে শেষ হয় পুজো। |