সচিন ক্রিকেটের স্কুল, কলেজ...

‘তুমকো দেখা তো ইয়ে খয়াল আয়া/ জিন্দেগি ধূপ তুম ঘনা সায়া’


জগজিৎ সিংহের এই গজলটা অনেক বার শুনেছেন। সচিনের বিদায়লগ্নে তাঁর মনে হচ্ছে ‘জিন্দেগি’ শব্দটাকে বদলে ‘ক্রিকেট’ জুড়ে দিলে বোধহয় বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যানকে নিয়ে তাঁর দর্শনটা সঠিক ভাবে প্রকাশ হবে। “ক্রিকেটে খারাপ কিছু হলে, ক্রিকেট নিয়ে মানুষের মনে অবিশ্বাস জন্মালে, ক্রিকেটে অনীহা এলে গত আড়াই দশক লোকে সচিনকে দেখেছে আর সব ভুলে ফের ক্রিকেটটাকে ভালবেসেছে।” সচিন চলে যাওয়ার পর কার কাছে ছায়ার খোঁজ করবে ক্রিকেট? সেটাই প্রশ্ন আব্দুল কাদিরের। ১৯৮৯ থেকে যত বার সচিনের সঙ্গে কথা হয়েছে, সে সব গল্প এক নিমেষে এখনও বলে দেবেন পাকিস্তানের লেগ স্পিনার। “ব্র্যাডম্যানকে দেখিনি, আমার কাছে সচিনই ব্র্যাডম্যান,” বলছিলেন ১৬ বছর বয়সে সচিনকে প্রথম দেখা কাদির।
“১৯৮৯-এ ওর প্রথম সিরিজে আমার ওভারে চারটে ছয় মারার পর একটুও ভাল লাগেনি ঠিকই, কিন্তু যখনই সচিনের সঙ্গে দেখা হত বলতাম, ‘বেটা তু বহুত আগে বঢ়েগা।’ আমার কথা খুব মন দিয়ে শুনত। পাকিস্তানে যে ম্যাচে আমাকে মারল, ঠিক সেই ওভারে বল করার আগে আমি ওর সামনে গিয়ে বলেছিলাম স্টেপ আউট করে আমাকে মারতে পারলে তোমার খুব নাম হবে। চ্যালেঞ্জটা নিয়ে আমাকে স্টেপ আউট করেই ছয়গুলো মেরেছিল। ঠিক চার বছর পরের ঘটনা।
দুর্দান্ত সব ইনিংস খেলে সচিন তত দিনে ‘সচিন’ হয়ে গিয়েছে। এক বার শারজায় একটা ডাবল উইকেট টুর্নামেন্ট খেলতে গিয়ে দেখা হল। সেলিম মালিকের সঙ্গে খেলছিলাম। মাঠে সে বারও সচিনকে বলেছিলাম, ‘গতবার তো মারলে, পারলে একবার ছক্কা মেরে দেখাও দেখি।’ সচিন সেই ওভারে সপাটে দুটো চার মেরেছিল। ছয় মারতে পারেনি।
সে দিন মনে হয়েছিল লড়াইটায় জিতলাম। পরে ভেবে দেখেছিলাম হয়তো সে দিন ফান ক্রিকেট বলে সম্মান দেখাতেই ও ছয় না মেরে চার মেরেছিল,” আব্দুল কাদির যে ভাবে বলছিলেন মনে হল দু’ দশক আগে নয়, কালই যেন খেলেছেন শারজায় সেই ডাবল উইকেট টুর্নামেন্ট।
সচিনের কোন ব্যাপারটা সব থেকে ভাল লাগে? “সেঞ্চুরি করে যে ভাবে সচিন আকাশের দিকে তাকায়, সেটাই সব চেয়ে ভাল লাগে। রব নে উসকো বনায়া হ্যায় ইয়ে শায়দ উসকো ভি পতা হ্যায়।”
কাদিরের পালটা প্রশ্ন, আপনারা তো ক্রিকেট কভার করেন সাফল্য পাওয়ার পরও এত সারল্য, এত শেখার আগ্রহ, এত নিয়মানুবর্তিতা কারও মধ্যে দেখেছেন? “লারা, মার্টিন ক্রো-কেও আমার খুব ভাল লাগত। কিন্তু সচিন এদের অনেক পিছনে ফেলে দেবে শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে নয়, ক্রিকেটের অ্যাম্বাসাডর হিসেবেও,” বলছেন আব্দুল কাদির।
১৯৯৬-এর আরেকটা ঘটনার কথাও খুব মনে পড়ে পাকিস্তানের স্পিন জাদুকরের। শ্রীলঙ্কায় সে বছর বিশ্ব একাদশের হয়ে একটা ম্যাচ খেলতে গিয়েছেন। ভারতও সে সময় শ্রীলঙ্কায় সিরিজ খেলছে। ভারতের সে সময়কার অধিনায়ক আজহারউদ্দিন বারবার কাদিরকে অনুরোধ করছিলেন অনিল কুম্বলেকে কিছুটা সময় দেওয়ার জন্য। “প্রথমটায় খুব একটা পাত্তা দিইনি। বলেছিলাম সময় হলে ডেকে নেব।” এর পর কাদিরের সঙ্গে কলম্বোয় দেখা সচিনের। সচিনও অনুরোধ করেন কুম্বলেকে সময় দেওয়ার জন্য। কাদিরকে কিছু প্রশ্ন করতে চাইছিলেন কুম্বলে। “সচিনের অনুরোধ ফেলতে পারলাম না। হোটেলে দেখা করার জন্য ডাকলাম কুম্বলেকে। সচিন ও আজহার কুম্বলেকে নিয়ে এল। আমি বসে কাগজ পড়ছিলাম। কুম্বলে এসে দেখি দাঁড়িয়েই আছে। প্রায় মিনিট কুড়ি পর আমি বললাম, ‘আরে ভাই, বসো এ বার। তোমার সমস্যা কী বলো। ডাক্তারকে রোগী যদি না বলে সমস্যা কোথায়, তা হলে সে জানবে কী করে?’ সচিন খুব হাসছিল। আমি কুম্বলেকে বললাম, ‘বলে দিচ্ছি তুমি কী জানতে চাও।’ অনিল অবাক হয়ে বললেন, ‘আপনি কী করে জানলেন?’ বললাম, ‘তোমার এটাই প্রশ্ন তো যে তোমার বল ঘোরে না কেন?’ এ বার সচিন হো হো করে হেসে উঠল। অনিলকে বোঝালাম আম যত দিন খাচ্ছ জানতে চেয়ো না কোন গাছের। উইকেট পাচ্ছ তো চিন্তা কীসের? শুধু টেস্ট ম্যাচের তৃতীয় দিন থেকে হাওয়ায় বলটা একটু আস্তে ছাড়ো, কাজে দেবে। কয়েক বছর পরেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দশ উইকেট পেল অনিল। খুব ভাল লেগেছিল। শ্রীলঙ্কায় সে দিন অনিলের সঙ্গে সচিনের মুখটা এখনও চোখে ভাসে। মনোযোগী ছাত্রের মতো শুনছিল সচিন, যখন আমি কুম্বলেকে বোঝাচ্ছিলাম।”
সে দিনের স্মৃতিটা আজও স্পষ্ট কাদিরের কাছে।
সেই শেষ দেখা। এর পর সচিনের সঙ্গে দেখা হয়নি। টিভিতে খেলা দেখতে দেখতে কখনও দেখেছেন সচিন এই মাইলস্টোন ছুঁলেন, কখনও আরেকটি মাইলস্টোনে লেখা হল তাঁর নাম। সচিনের শেষের কবিতার উপসংহারটা আপনাকে লিখতে দিলে কী ভাবে লিখবেন? “সচিন ক্রিকেটের স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি। সচিন ক্রিকেটের ডিকশনারি। বোধহয় বোঝাতে পারছি না। লিখুন সচিন ক্রিকেটের একটা গল্প, যা বারবার পড়ার পরও মনে হয় আবার শুরু থেকে পড়ি।”
সাক্ষাৎকারের জন্য ধন্যবাদ জানানোর পরও কাদির যোগ করলেন। ১৯৮৯-এ ওঁর প্রথম সিরিজে অনেক গল্প রটেছিল। কেউ কেউ লিখেছিল আমরা নাকি ওঁকে বলেছিলাম তুমি এখনও দুধের শিশু। “ব্যাপারটা সত্যি নয়। বরং ওয়াকারের প্রচণ্ড জোরে একটা বলে সচিনের মারা কভার ড্রাইভের পরই গোটা পাকিস্তান দলটা বুঝে গিয়েছিল বিশ্ব ক্রিকেটে শাসনের দায়িত্ব নিতে কে আসছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.