ধূপগুড়ি স্টেশনের কাছে রেল লাইন থেকে এক অজ্ঞাতপরিচয় তরুণীর দেহ উদ্ধারের ৭ দিনের মাথায় রহস্যের কিনারা করল রেল পুলিশ। ওই তরুণীকে শনাক্ত করা শুধু নয়, তাঁকে কী ভাবে বাড়ি থেকে ডেকে বাইকে করে নিয়ে গিয়ে খুন করা হয়েছে, সেই ব্যাপারেও কিছু স্পষ্ট তথ্য পুলিশ পেয়েছে। ওই ঘটনায় তদন্তে নেমে পুলিশ ৪ জনকে সন্দেহের তালিকায় রেখেছে। নিউ ময়নাগুড়ি জিআরপির ওসি-সহ কয়েকজন অফিসার ৪ জনের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছেন। রেল পুলিশের এক কর্তা জানান, শীঘ্রই খুনের ঘটনায় সন্দেহভাজনদের গ্রেফতার করা হবে।
রেল পুলিশ জানিয়েছে, ওই তরুণীর নাম মৌসুমী রায় (১৯)। তাঁর বাড়ি হলদিবাড়ি থানা এলাকায়। তিনি এলাকার একটি স্কুলে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়তেন। একটি বিউটি পার্লারেও প্রশিক্ষণ নিতেন। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের সন্দেহ, বাড়ি থেকে ডেকে বাইকে চাপিয়ে কোথাও নিয়ে গিয়ে ওই তরুণীর মাথায় আঘাত করে খুন করা হয়েছে। পরে প্রমাণ লোপাটের জন্য তরুণীর দেহটি রেল লাইনে রেখে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। কিন্তু, ট্রেন আসার আগেই কর্তব্যরত রেলকর্মী ও বাসিন্দারা দেহটি দেখতে পাওয়ায় তা ছিন্নভিন্ন হয়নি। তরুণীর সঙ্গে থাকা ব্যাগে হলদিবাড়ির একটি দর্জির দোকানের রসিদ মেলে।
রেল পুলিশ জানিয়েছে, গত ২৭ অক্টোবর তরুণীর দেহটি ধূপগুড়ি স্টেশনের কাছে রেললাইনে মেলে। ওই রসিদের সূত্রে তদন্তে নামলেও পুলিশ প্রথমে খালি হাতে ফেরে। কারণ, দর্জির দোকান কিছু জানাতে পারেনি। কিন্তু, জিআরপির অফিসাররা লাগাতার খোঁজখবর করতে নেমে জানতে পারেন, হলদিবাড়ির বাসিন্দা মৌসুমী রায় নামে এক তরুণীর খোঁজ মিলছে না। এর পরে মৌসুমীর বাড়ির লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরা দেহটি শনাক্ত করেন। পুলিশ অফিসাররা তাঁদের জানিয়ে দেন, তরুণীর মাথার পিছনে যে আঘাত রয়েছে, তা থেকেই মৃত্যু হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে খুনের আশঙ্কাই বেশি। প্রমাণ লোপাটের জন্য দেহটি লাইনে রেখে দেওয়া হয়। তরুণীর চটি ও রক্ত মিলেছে রেললাইন তেকে প্রায় ৫০ মিটার দূরের ধানখেতে। পুলিশের সন্দেহ, ওই এলাকা থেকে দেহটি রেল লাইনে নিতে একাধিক ব্যক্তি থাকা দরকার। ইতিমধ্যে বাড়ির লোকজন পুলিশের কাছে তাঁদের মেয়েকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন।
পুলিশ সূত্রের খবর, ওই তরুণী ২৬ অক্টোবর দুপুরে বাড়ি থেকে বার হন। এলাকার লোকজন তাঁকে একটি বাইকে চড়ে যেতে দেখেন। বেলা চারটে থেকে তাঁকে মোবাইলে পাওয়া যাচ্ছিল না। এর পরে মোবাইল বন্ধ হয়ে যায়। পর দিন দেহটি মেলে ধূপগুড়িতে। মোবাইল মেলেনি। পুলিশ তদন্তে জেনেছে, ওই তরুণীর সঙ্গে অন্তত ৪ জনের নিয়মিত মোবাইলে দীর্ঘ কথাবার্তা হতো। ঘটনার দিন একটি নম্বর তরুণীর মোবাইলে ৪০ বার ফোন করা হয়েছে। রেল পুলিশের এক কর্তা জানান, শারীরিক নিগ্রহের পরে খুন নাকি প্রেমঘটিত বিবাদের জেরে ওই ঘটনা ঘটানো হয়েছে তা শীঘ্রই স্পষ্ট হয়ে যাবে। |