রবিবাসরীয় প্রবন্ধ ১
কাট মুন্ডু কাট
মুন্ডুতে কত কী থাকে! চোখ: সাদা চোখ, কাজল, সুরমা, আই-লাইনার, আইশ্যাডো, মাস্কারা, চশমা (ভাল কাচ, কালো কাচ, ভাঙা কাচ, কাচে স্ক্র্যাচ, সাদা ফ্রেম, কালো ফ্রেম...) নাক: ঝিঁক, ফ্যাঁচ, হ্যাঁচ্চো, নাকছাবি, নাকে ফুটো, নাক উঁচু... কান: সোনাদুল, ইমিটেশন, হিরেদুল, হিয়ারিং এড, হেডফোন, কানকাটা... মুখ: রুট ক্যানাল, ফুলো মাড়ি, ফোকলা, বাঁধানো দাঁত, সোনাদাঁত চিকমিক, মুখপোড়া...। চুলোচুলি চুল, করোটিতে ব্রেন বা গোবর। চেতনাঅবচেতনাঅতিচেতনানিশ্চেতনার জন্মভূমি। বোধবুদ্ধির সূতিকাগার। হাহাকার, ধরা পড়লে ধনঞ্জয়, না পড়লে এনজয়, বিজয়, পরাজয়ের উৎস।
এই তো সে দিন, বোধ হয় বছরখানেক আগে, ভরা-ভরতি দিনের বেলা বোনের মুন্ডু তলোয়ার দিয়ে নামাল দাদা। শহরের পথে, বাবা রে! বোনের বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক, তাই পরিবারের সম্মানহানি, তাই দাদার শাস্তি: কচাৎ। তার পর সেই মুন্ডু হাতে নিয়ে রাস্তা দিয়ে দাদার দৌড়। রান লোলা রান। এক বার হাত ফসকে রাস্তায় মুন্ডু। তুলে নিয়ে বোনের মাথার কোঁকড়া চুল দাদা আঙুলে পেঁচাল, যাতে আর না ফসকায়। যে দেখছে তারই দাঁতকপাটি। থানার সামনে পাতাবাহার গাছের পাশে মুন্ডু রেখে থানার দরজা অতিক্রম। উদ্দেশ্য, আত্মসমর্পণ। পাতাবাহার তো পাতাটাতা গুটিয়ে দৌড় দিতে হানটান। যুবকটি থানায় ঢুকে জানাল, বড় ক্লান্ত, জল খাবে। এই ঘটনা থেকে চকিত হাইপার লিঙ্ক। পৌঁছে যান রোমহর্ষক কারবালায়। যেখানে হুসেনকে খুন করতে খঞ্জর হাতে উদ্যত সীমার।
‘...হোসেনের বক্ষ পরিত্যাগ করিয়া সীমার তাঁহার পৃষ্ঠোপরি বসিল। এমামের দুখানি হস্ত দুইদিকে পড়িয়া গেল।— যেন বলিতে লাগিলেন, জগৎ দেখুক, আমি কী অবস্থায় চলিলাম!— নূরনবি মহম্মদের দৌহিত্র,— মদিনার রাজা, মহাবীর আলীর পুত্র হইয়া শূন্যহস্তে সীমারের অস্ত্রাঘাতে কী ভাবে আমি ইহসংসার হইতে বিদায় হইলাম! জগৎ দেখুক! সীমার যেমন তীরবিদ্ধ স্থানে খঞ্জর স্পর্শ করিল, অমনি হোসেনের শির দেহ হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া গেল! আকাশ, পাতাল, অন্তরীক্ষ, অরণ্য, সাগর, পর্বত বায়ু ভেদ করিয়া চতুর্দিক হইতে রব উঠিতে লাগল, হায় হাসান! হায় হাসান! হায় হাসান!...’ (বিষাদ সিন্ধু, মীর মোশারফ হোসেন)। মুন্ডু-কর্তন কাণ্ড এখানে দীর্ঘ। সীমার মহারাজা এজিদ-এর কাছে নিয়ে যাবে এই ছিন্ন মস্তক। কাজেই রাস্তা পেরিয়ে, গ্রাম পেরিয়ে সীমারের দৌড়। হাতে বর্শায় গাঁথা হোসেনের ছিন্ন মাথা। চলুন, কারবালা থেকে এক ক্লিকে কালিকাপুরাণ।
নরেন বলিনা দেবী তৃপ্তিং সহস্র বৎসরাণি।
বিধিদত্তেন চাপ্নোতি তৃপ্তিং লক্ষং ত্রিভির্ণরেঃ॥

একটা বলি দিলে দেবী এক হাজার বছর তৃপ্ত। আর তিনটে বলি দিলে তৃপ্ত এক লক্ষ বছর। তাই কালীর পায়ে নরবলি অগুনতি। কাপালিক বাবাজিরা মানুষ (এমনকী ছোট ছোট বাচ্চাদেরও) চুরি করে দেবীর পায়ে ঘ্যাচাং ফু! আর হ্যাঁ, বলি নিয়ে বঙ্কিমচন্দ্রের ‘কপালকুণ্ডলা’ অবশ্যই স্মর্তব্য: ‘...নবকুমারের বলপ্রকাশ দেখিয়া কাপালিক কহিল, মূর্খ... ভৈরবী পূজায় তোমার এই মাংসপিণ্ড অর্পিত হইবেক, ইহার অধিক তোমার তুল্য লোকের কি আর সৌভাগ্য হইতে পারে?’
কালীঘাট মন্দিরে এক সময়ে বলি কম হয়নিকো। চিৎপুরের চিত্তেশ্বরী মন্দিরেও বহু দফা মানবরক্তের ঢেউ। চিতে ডাকাত (যার নামে চিৎপুর) মন্দিরে নরবলি দিয়ে তবে ডাকাতিতে। আসলে সে-ই আদিতে, মুন্ডু কাটার কাণ্ডের পিছনে স্যাক্রিফাইস। বলিদান। উৎসর্গ। শাখাচারী মানুষ যখন দিল মাটিতে পা, তার পর উন্নতি হুহু। চাষবাস শুরু। নরবলি দিয়ে সেই রক্ত জমিতে, উর্বরাশক্তি পূজিত। রক্ত নিয়ে খেলা অতঃপর। হোলি হে! না, রঙ্গতামাশা না, এই রক্তের উৎসব থেকেই হোলক মোচ্ছব।
কারও দাবি: আর্যরা এ দেশে আসার আগে বলিটলি ছিল না। এশিয়া মাইনর থেকে মেজর এই সভ্যতা এ দেশে এসে নাকি এখানকার এশিরীয়দের দ্বারা এত ইন্সপিরিত যে, বলি আর্যদের মইধ্যে ঢুইক্কা গেল। ঋগ্বেদে বলির কথা না থাকলেও রামায়ণ, মহাভারতে হ্যাজ। রামায়ণে লঙ্কা পর্বে রাম ও লক্ষ্মণকে বন্দি করে অহীরাবণ। কালিকামূর্তির সামনে বলি হইবেক। হনুমান দুই ভাইকে শেখাল: অহীরাবণ প্রণাম করতে বললে যেন তানানানা করে, এবং বলে, রাজার ছেলে বলে প্রণাম করতে জানেই না। হুবহু তেমনটাই করে দুটি ভাই। এবং অহীরাবণ নিজে তাদের প্রণাম শেখাতে দেবীর সামনে সাষ্টাঙ্গে প্রণিপাত হলে মূর্তির পিছন থেকে বেরিয়ে এসে এক কোপ হনুমানের, অহী-র মুণ্ড ছিটকে দেবীর পায়ে।
আবার বেতাল পঞ্চবিংশতি-র ক্লাইম্যাক্সে এই প্রণামের ছলে মুণ্ড কাটার কাণ্ড। শব নিয়ে এসে যখন ধূর্ত সন্ন্যাসীর কাছে পৌঁছল রাজা, সন্ন্যাসীর ফুর্তি আর ধরে না। বেতালের সামনে রাজাকে বলি দিলেই বিদ্যাধরদের রাজপদ মিলবে। যথাবিহিত শবকে পরিচর্যা সারা, সন্ন্যাসীর নির্দেশ, সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করো রাজা। মানে, যেই প্রণাম, সেই ঘাড়ের উপর ঝপাৎ সন্ন্যাসীর কোপ। কিন্তু শিকারি খুদ ইহাঁ শিকার। কারণ, আগেই বেতাল রাজার উপর দুর্দান্ত খুশি হয়ে শিখিয়ে দিয়েছিল ওই ‘হনুমান-শিক্ষা’। ফলে সন্ন্যাসী প্রণাম শেখাতে গেলে তার মুণ্ড বিক্রমাদিত্যের এক কোপে আলাদা।
এ বার গ্রিক মিথকথায় টুকি দিন: পলিক্সেনার প্রতি অ্যাকিলিসের সে কী প্রেম! ট্রয়ের যুদ্ধের পর তাদের চার হাত এক হওয়ার কথা। কিন্তু প্যারিসের তিরে মৃত্যু অ্যাকিলিসের। অতৃপ্ত অ্যাকিলিসের প্রেতাত্মা হাজির এই বার। ভূতের বক্তব্য, পলিক্সেনাকে চাই-ই চাই। অতঃপর অ্যাকিলিসের সমাধিতে পলিক্সেনার বলি। প্রেতাত্মার তৃপ্তিলাভ।
তার পর ওল্ড টেস্টামেন্ট। আব্রাহামের কাছ থেকে তার এক মাত্র পুত্র নয়নের মণি সাত রাজার ধন এক মানিক ইসাক’কে চায় ঈশ্বর। স্বাভাবিক ভাবে আব্রাহামের মুখে অদ্ভুত অন্ধকার। কিন্তু ঈশ্বরের চাহিদা বইলে কতা! আব্রাহাম কোমর বাঁধে ইসাককে বলি দিতে। এক পর্বতের উপর গিয়ে পুত্রকে কচাৎ করতে যখন খঞ্জর তুলেছে কি তোলেনি, তখন আকাশ থেকে শব্দ, ‘থামো...। ছেড়ে দাও ছেলেটিকে, তুমি ঈশ্বরকে বিশ্বাসভক্তি করো পুরো, বুঝেছি গো।’ বাঁচল ইসাক, বলি হল ভেড়া (ভেড়া বলে কি মানুষ নয়!)
চলুন, এক ক্লিকে গিলোটিন। ফরাসি বিপ্লবের পর গিলোটিন এপিসোড। তার পর সিরিয়াল যেন শেষই হয় না, ইলাস্টিক! ডক্টর জোসেফ ইগন্যাস গিলোটিন তৈরি করেন বলে, এই যন্ত্রের নামও গিলোটিন। আগে নিম্নবর্গের মৃত্যুদণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্তদের জন্য ভয়ানক কষ্টকর হরেকরকমবা পদ্ধতি ছিল চালু। যেমন ষাঁড় বা অশ্ব-সাহায্যে অপরাধীদের টুকরো টুকরো ইত্যাদি। ফরাসি বিপ্লবের পর মৃত্যুদণ্ডে সমতাবিধান ও দেশে। রাজা ষোড়শ লুই রানি আঁতোয়ানেত সহ অসংখ্য মানুষের মুণ্ড কর্তনে গিলোটিন হিরো।
মুন্ডু কাটায় পানিপথ কম নয় মোট্টে। দ্বিতীয় পানিপথের যুদ্ধে হেমুর সঙ্গে আকবরের হল ধুন্ধুমার। পরাক্রমী হেমুর শোকস্তব্ধ ডিফিট। এ বার আসল খেলা। অর্ধমৃত হেমুকে আনা হল আকবর-শিবিরে। বৈরাম খাঁ-র হাতে হেমুর মুন্ডু কচাৎ। সেই মুন্ডু পাঠানো কাবুলে। সেখানে জনসমক্ষে ঝোলানো। দেখ, সবাই... ও কাবুলবাসী, দেখ, আকবর হেরো নয়কো, অপ্রতিদ্বন্দ্বী। আর হেমুর বডি দিল্লির পুরানা কিলার সামনে ঝুলিয়ে ভয়ের বিভীষিকা। তার পর হেমুর অনুগামী, সৈন্য-টৈন্য ইত্যাদিদের কচাৎ-কাণ্ডও জোরকদমে। মুণ্ডের পর মুণ্ড...। সেই মুণ্ড দিয়ে তৈরি বেশ ক’টা মিনার।
এ বার একটা গপ্পো। টমাস মান-এর ভারতীয় উপকথা-নির্ভর ‘মস্তক বিনিময়’। সেখানে দুই যুবক হলায়গলায়। এক জন ব্রাহ্মণ, অন্য জন শূদ্র। শূদ্রের যৌনক্ষমতা অতুল, ব্রাহ্মণের অতি অল্প। শূদ্রের চেষ্টায় সীতা নামে যুবতীর সঙ্গে বিয়ে ব্রাহ্মণের (বিয়ের আগে অবশ্য অজানা ছিল এ অক্ষমতা)। শারীরিক অতৃপ্তির ঘনঘটায় সীতা। শূদ্র যুবকের প্রতি মেয়েটি অনুরক্তও, মানে স্বামীর বন্ধুর বডির প্রতি সীতার শরীরের কী টান! বিয়ের পর পর রথে করে এক অজানা স্থানে তিন জন। সেখান থেকে দুই দোস্ত পাহাড়ের কালীমন্দিরে। অক্ষমতা ও অপরাধবোধের তাড়না, নিজের মুন্ডু কচাৎ ব্রাহ্মণের। দেবীর খড়্গে। শূদ্র গিয়ে যেই না তা দেখল, খুব গিল্ট ফিলিং, ফলে গলা কচাৎ স্বহস্তে। এ বার মেয়েটির মন্দিরে এন্ট্রি। এবং মুহ্যমান। তখন দৈববাণী: ধড়ের সঙ্গে মুণ্ড জুড়লে ফিরবে সাধের প্রাণ। সেটা করতে গিয়ে এক জনের মুণ্ড আর এক জনের ধড়ে (টেনশনে উলটো-পালটা হয়ে গেল, না ফ্রয়েডিয়ান স্লিপ?), কেচ্ছা...। প্রায় একই গল্প বেতাল পঞ্চবিংশতিতে। সেখানে মুণ্ডবদল হলেও, সমাধান সহজ। কারণ, ‘স্বামী কে?’ বেতালের এ হেন প্রশ্নে বিক্রমাদিত্যের এক্কেবারে পষ্ট উত্তর: বডি নহে, মাথা আসল। স্বামীর মাথা যে-ধড়ে, স্বামী সে।
এই নিজ হস্তে নিজ মুণ্ড কাটা নিয়ে ত্রৈলোক্যনাথের ব্যাপক আখ্যান ‘মুক্তা-মালা’। গল্পের নায়ক সুবল গড়গড়ি পড়েছে দুরন্ত বিপদে। কারণ, ডাকিনী নারকেলমুখীর ভাঁটা খেলার সোনামনা নরমুণ্ডটি গেছে হাইরে। সুবলই এর জন্য দায়ী বলে অভিযোগ। তাই ডাকিনী নারকেলমুখীকে বিয়ে করতে হবে সুবলকে, একেবারে জোরজুলুম, না করলে ডাকিনীর কালা জাদুতে সুবলবাবাজি মানুষ থেকে ব্যা ব্যা ব্ল্যাক শিপ। এ বার বাঁচার একটা সূক্ষ্ম আলো: যদি মুণ্ড এনে দিতে পারো তো মুক্তি...। সম্মুখের মহামায়া মন্দিরে গিয়ে রক্তাক্ত নরমুণ্ড টানাটানি সুবলের। নরমুণ্ড বলল, আগে গল্প, তার পর...(খানিকটা বেতাল পঞ্চবিংশতির খাপে ত্রৈলোক্যের তলোয়ার)। গল্পের পর কিন্তু মুন্ডু রক্তমুক্তায় রূপান্তরিত। এ রকম একের পর এক গল্প, এবং সব ক’টা মুন্ডুর রক্তমুক্তায় রূপান্তর। মুন্ডু না পেয়ে, হাহাকার। দেবীর খড়্গ দিয়ে নিজের গলা নিজে কাটতে উদ্যত সুবল। কিন্তু...‘আমি দেখিলাম যে নিজের মুণ্ড এক কোপে কাটিয়া ফেলিতে পারা যায় না। দুই হাতে খড়্গ ধারণ করিয়া যত বলেই কোপ মারি না কেন, মুণ্ডটি দেহ হইতে সম্পূর্ণ রূপে বিচ্ছিন্ন হইবে না। অবশেষে এই স্থির করিলাম যে, শয়ন করিয়া, দক্ষিণ হস্তে খড়্গ ধরিয়া বাম দিক হইতে নিজের গলদেশ কাটিতে আরম্ভ করি। যতক্ষণ শক্তি থাকবে ততক্ষণ কাটিয়া যাইব, তাহার পর যাহা হয় তাহা হইবে। এই রূপ স্থির করিয়া আমি শয়ন করিলাম ও তাহার পর আমার গলদেশ কাটিতে আরম্ভ করিলাম। কিন্তু এক রতিও কাটিতে পারিলাম না।... বাহিরে ডাকিনীগণ খল খল হাসিয়া উঠিল;...’
ম্যাকবেথ-এও ডাকিনী ছিল, মানে ডাইনি, ম্যাকবেথ দ্বিতীয় বার তাদের কাছে ভবিষ্যদ্বাণী জানতে গেলে তাদের দেখানো ভিশনে কাটা মুন্ডু (সে আবার শিরস্ত্রাণ পরা) কথা কয়েছিল: ম্যাকডাফ হইতে সাবধান! এ বার শুনুন আরব্য রজনীর গল্পে গ্রিক রাজা ও হাকিমের কাহিনি। রাজার কুষ্ঠ হয়েছে, হায় হায়, দিন দিন রোগ বেড়ে চলেছে, কেউ সারাতে পারছে না, রাজা বিশাল ইনাম অ্যানাউন্স করলেন। বিদেশি হাকিম দুবান এসেই কাঠের তৈরি পোলো-স্টিকের গায়ে ওষুধ মাখিয়ে রাজাকে বলল, খেলে যান, যত ক্ষণ না হা-ক্লান্ত, ঘর্মাক্ত। রাজা তা-ই করলেন, হাত ঘেমে ওঠায় স্টিকে লেগে থাকা ওষুধ রাজার শরীরে ঢুকল, পর দিনই, আরিব্বাস, রাজা সুস্থ। হাকিম পেল লাখো হিরে-জহরত। ক’দিন পর এক সভাসদ হিংসেয় জ্বলেপুড়ে হাকিমের নামে রাজার কান বিষোল, রাজা (যেমন রাজারা হয়) স্ট্রেট আদেশ দিলেন, গর্দান লাও! দুবান শেষ ইচ্ছে প্রকাশ করল, তার একটা প্রিয় বই রাজাকে দিয়ে যাবে— তার মুণ্ডচ্ছেদের পর মুন্ডুটা একটা পাত্রের ওপর রাখলেই রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যাবে, আর তখন রাজা ওই বইটার ছ’নম্বর পৃষ্ঠার তিন নম্বর লাইনটা পড়ে হাকিমের কাটা মুন্ডুকে কোনও প্রশ্ন করলেই কাটা মুন্ডু কথা বলে উঠবে। ও মা, পর পর ঠিক তা-ই হল, শুধু বইয়ের পাতাগুলো একটার গায়ে একটা এমন সেঁটে ছিল যে রাজা আঙুল জিভে লাগিয়ে লাগিয়ে পাতাগুলো ছাড়িয়ে ছয়ের পাতায় এলেন, কিন্তু যাব্বাবা, পাতা তো ব্ল্যাংক! অবাক রাজা কাটা মুন্ডুকে সে কথা জানাতেই মুন্ডু খলখলিয়ে হেসে সিক্রেট-প্রকাশ: আসলে বইয়ের পাতায় বিষ মাখানো ছিল, সে বিষ এখন রাজার হাত-জিভ ছুঁয়ে রক্তে ঢুকে গেছে— প্রতিশোধ!
তবে কেটে ফেলা মুন্ডুর মধ্যে সবচেয়ে উদ্ভট মুন্ডু নিঃসন্দেহে মেডুসা-র, যার প্রত্যেকটা চুল ছিল জ্যান্ত হিসহিসে সাপ। আর মুন্ডু কেটে ফেলার পর ফের জোড়া দেওয়ার জন্য আনা বিকল্প মুন্ডুর মধ্যে সবচেয়ে আশ্চর্য নিশ্চয় গণেশের নতুন মুন্ডু, যা হাতির!
এত কথার পিছনে মোদ্দা বাংলাটা হচ্ছে, কাট মুন্ডু... ভোলা যায় না, যাবে না... শিরশ্ছেদের ইন্সটিংট চারিয়েছে মানুষের চরিত্রের চেতনার গভীর গত্তে। রক্তের কণায় কণায় সেঁদিয়ে মুণ্ড কাটার বাসনা ও তৃপ্তি। যখন তখন বেরিয়ে আসে, আসতে পারে। নিষাদ কিরাতদের রেওয়াজরীতি পরাজিতদের মুণ্ডকর্তন, কাটা মুণ্ড নিয়ে উৎসবে মেতে ওঠা, তেমনই, এই টেক-ট্যাবলেট যুগেও, পাক সেনারা ভারতীয় দুই সেনাকে শুধু মেরেই ক্ষান্ত নয়, তাদের মুণ্ড কেটে নিজ ডেরায় প্রত্যাবর্তন। বাসনার বাস সেই আদিমে...আনঅ্যাভয়ডেব্ল সারকামস্ট্যান্সে বাসনা বাসা থেকে বেইরে অস্ত্র ধরে ঝাঁপ ঘাড়ের উপর। অরিজিন অব স্পিশিস-এ প্রবৃত্তিকে এ ভাবে পাত্তা দিয়েছেন মহামহিম ডারউইন সাহেব। আবার সিগমুন্ড ফ্রয়েড-এও দোর্দণ্ড সমর্থন আছে এর। মানে, ঘাড়ের উপর এই যে আপনার মুন্ডুটা, মা কালী ছাড়াও অন্যান্য এক্সটার্নাল-ইন্টার্নাল ফোর্সের খপ্পরে পড়ে, যে-কোনও দিন হড়াস করে মাটিতে, হতেই পারে। তাই নিজের মুন্ডু নিয়ে সতর্ক-বার্তাটি নিজের মুন্ডুর মধ্যে সতত ঘুসিয়ে রাখতে ভুলবেন না!

ছবি: সুমন চৌধুরী।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.