থিম নয়, সাবেকি পুজোয় আস্থা কলকাতার
থিম ছাড়াও যে পুজো হয়, মনে করিয়ে দিল কালীপুজোর কলকাতা।
শনিবারের রাত। পেল্লায় সাইজের প্রতিমা দেখার টানে যথারীতি তুমুল ভিড় কলকাতার আমহার্স্ট স্ট্রিটে। প্রকাণ্ড ডাকিনী-যোগিনী, শিবের জটার ফোয়ারা দেখার উৎসাহ প্রবল। নির্ভেজাল আনন্দের নেশায় শহর মশগুল। থিম অবশ্য ঢুকেছে, তবে মূলত শহর লাগোয়া মধ্যমগ্রাম-বারাসতে। আমহার্স্ট স্ট্রিট বা চেতলার মতো কলকাতার সাবেক কালীপুজোর পীঠস্থানগুলোয় কিন্তু কোনও পরিবর্তন নেই।
চেতলা অগ্রণীর পুজো কমিটির সদস্য চন্দন দাস বলছিলেন, “কালীপ্রতিমা নিয়ে থিমের কারিকুরিতে বেশির ভাগ উদ্যোক্তারই একটু বাধো-বাধো ঠেকে। তাই আগেকার সেই বিশাল প্রতিমাই এখনও রয়েছে।” চেতলায় রক্তচামুণ্ডা, হাজার-হাত কালী, ছিন্নমস্তারা সবাই রয়েছেন। আর আছেন কেওড়াতলার শ্মশানকালী। শ্মশানে কাঠের জ্বলন্ত চিতার মুখোমুখি পুজোর পরম্পরায় এখনও ছেদ পড়েনি।
একদা ফাটাকেষ্ট ও সোমেন মিত্রের পুজোর রেষারেষিতে কেঁপে উঠত উত্তর কলকাতা। উত্তমকুমারকে পুজোয় এনে বরাবর টেক্কা দিতেন ফাটাকেষ্টই। দুই হেভিওয়টের দ্বৈরথের সে-ঝাঁঝ এখন নেই। এ বার সীতারাম ঘোষ স্ট্রিটে ফাটাকেষ্টর পুজোয় প্রসেনজিৎ এসেছেন। এখনকার পুজোকর্তা প্রবন্ধ রায় অবশ্য রয়েছেন আরব সাগরের তীরে, পুজোর মুম্বই-সংস্করণ সামলাতে। কলকাতার ব্যবস্থাপনা দেখভাল করছেন গৌতম দত্ত। পাশে আমহার্স্ট স্ট্রিটে সোমেন মিত্রের পুজোও উত্তর কলকাতার বৈঠকী মেজাজ ধরে রেখেছে। পুজোকর্তা প্রিয়াল চৌধুরী বলছিলেন, “থিম কে করবে? এত দিন যা করে আসছি, সেটা ধরে রাখাই লক্ষ্য।”
কিন্তু শহরের সীমানা পেরোলে? বারাসত, মধ্যমগ্রাম কিন্তু থিমের পক্ষেই সায় দিয়েছে। বারাসতে পায়োনিয়ারের পুজোয় চোখ ধাঁধাচ্ছে রাজস্থানি জলমহল। তার সঙ্গে জোর টক্কর কেএমসি রেজিমেন্টের ভ্যাটিকান সিটি-র। নানা কিসিমের ঘণ্টা দিয়ে পুজোর থিম করেছে সন্ধানী। মধ্যমগ্রাম বিধানপল্লি যুবগোষ্ঠীর মণ্ডপে রঙের খেলা। সাবেক মন্দিরের গর্ভগৃহের আদল। সেই গর্ভগৃহে প্রতিমা। পান্নালাল ভট্টাচার্যের শ্যামাসঙ্গীত তো এ দিনটায় শোনা যাবেই! মান্না দে-র প্রয়াণের টাটকা শোকে তাঁর গানও বাজছে মণ্ডপে মণ্ডপে।
তবু এ বারের পুজোর পথে বিস্তর কাঁটাও ছিল। আসলে সে গৌরী সেনও নেই, সে-পুজোও নেই। এ রাজ্যে সারদা-কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পরে অর্থলগ্নি সংস্থাগুলি পুজো থেকে হাত গুটিয়ে নিয়েছে। দুর্গাপুজোর মতো তার প্রভাব পড়েছে কালীপুজোতেও। জনৈক থিম-শিল্পীর এখনও দুশ্চিন্তা, যত টাকার কথা হয়েছিল, তার অর্ধেকও পাবেন তো? দক্ষিণ শহরতলির পুজোগুলোয় স্পনসরদের আনুকূল্যের সেই ঢাউস গেট আর দেখা যাচ্ছে না। কোথাও গত বারের দু’লক্ষ টাকা বাজেটের পুজো এ বার ৫০ হাজারে নমো-নমো করে সারা হচ্ছে। কোথাও তিনলাখি পুজো একলাফে একলাখি।
একেবারে ভাঙা হাট দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুরে সারদা গার্ডেনের কালীপুজোয়। গত বারের বাজেট ছিল প্রায় ৫৫ লক্ষ টাকা। এ বার বাজেট নেমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ২০ হাজারে!
সারদা-কর্তা সুদীপ্ত সেনের পুজো বলেই নামডাক ছিল এই পুজোর। তিন দিন ধরে জমত মেলা। সারদা গার্ডেনে হাজির থাকতেন স্বয়ং সুদীপ্ত সেন, দেবযানী মুখোপাধ্যায়-সহ সংস্থার কর্তা-ব্যক্তিরা। পুজো উদ্বোধনের দিনে প্রায় ১০ লাখ টাকার বাজি পুড়ত। তিন দিন ধরে চলত নাচ-গান-ম্যাজিক শো। সারদা গার্ডেনের এক কর্মচারী বললেন, “বিসর্জনের দিন হাজার চারেক লোক পাত পেড়ে খেতেন। মেনুতে থাকত আমিষ-নিরামিষ নানা পদ মাছ, মাংস, মিষ্টি।” এলাকার বাসিন্দারা খবর দিলেন, ২০০ টাকা দামের মিষ্টির প্যাকেট তৈরি হত হাজার চারেক। রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের কাছে ওই সব প্যাকেট পাঠানো হত। আর তিন দিনই বিশেষ কিছু অতিথির জন্য বসত মদের আসর।
এ বার সারদা গার্ডেনে গিয়ে দেখা গেল, হলুদ প্লাস্টিক দিয়ে ঘিরে ছোট একটি মণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে। স্থানীয়দের বক্তব্য, সারদা গার্ডেনে প্রায় ২০০ আবাসিক রয়েছেন। তাঁদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে পুজো হচ্ছে।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.