এলইডি-র দাপটে দীপ নিভু-নিভু দীপাবলিতে
ছর দশেক আগেও পরিস্থিতিটা দৃশ্যটা এরকম ছিল না। তখনও কালীপুজো-দীপাবলিতে বাড়ির ছাদ, উঠোনে জ্বলজ্বল করত প্রদীপ। মোমবাতি ব্যবহারের রমরমা বাড়ায় পাল্টাতে শুরু করে চিত্র। সেই মোমবাতিও এখন ম্লান এলইডি আলোর দাপটে। উৎসবের মরসুমে তাই শহর জুড়ে নজরে পড়ে বিদ্যুতের নানা রকম আলোর কারসাজি। মাটির প্রদীপ থেকে যায় আঁধারেই।
দুর্গাপুর শহরের মাটির প্রদীপ প্রস্তুকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখ দশক আগেও দীপাবলির কয়েকটা দিন ব্যবসা চলত রমরমিয়ে। কিন্তু এখন তা তলানিতে ঠেকেছে। দুর্গাপুরের সিএমআরআই কলোনির বাড়িতে ছোট জায়গায় প্রদীপ-সহ মাটির নানা জিনিসপত্র তৈরি করেন জগন্নাথ পণ্ডিত। সারা বছর ধরেই তিনি বিভিন্ন চায়ের দোকানে মাটির ভাঁড় সরবরাহ করেন। তিনি জানান, বছর পাঁচেক আগেও দীপাবলিতে ৩০-৪০ হাজার মাটির প্রদীপ বিক্রি করেছেন। কিন্তু এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩-৪ হাজারে। এর কারণ হিসেবে তাঁর দাবি, প্রথমে বাজারে প্রচুর পরিমাণে মোমবাতির বিক্রি প্রদীপের ব্যবসা কিছুটা কেড়ে নেয়। জগন্নাথবাবু বলেন, “বাবার কাছে এই কাজ শিখেছিলাম। প্রথম প্রথম বাড়ির সকলে মিলে তৈরি করেও প্রদীপের চাহিদা মেটাতে পারতাম না। রাতদিন কাজ করতে হত। কিন্তু এখন আর সে রকম পরিস্থিতি হয় না।”
চাহিদা কমলেও চলছে প্রদীপ তৈরি। দুর্গাপুরে ভিড়িঙ্গিতে। —নিজস্ব চিত্র।
জগন্নাথবাবুর পরিবারের আর এক সদস্য কপিল পণ্ডিতের দাবি, “মোমবাতি প্রদীপের বাজারে খানিকটা ভাগ বসিয়েছিল। এখন আবার এলইডি আলো এসে যাওয়ায় প্রদীপের যেটুকু বাজার ছিল তা-ও নষ্ট হয়ে গিয়েছে।” কপিলবাবু বলেন, “সাবেকিয়ানায় বিশ্বাসী কিছু মানুষ এখনও প্রদীপ কেনেন। কিন্তু তাঁদের সংখ্যা বেশ কম।” দুর্গাপুরের চণ্ডীদাস বাজারে প্রদীপ তৈরি করেন দীনেশ পণ্ডিত। তাঁর মতে, প্রদীপের ব্যবহার অনেকের কাছে ব্যয়সাপেক্ষ মনে হওয়ায় সেই জায়গায় মোমবাতি ব্যবহার করেন। কপিলবাবুরা জানান, এ বছর বৃষ্টির জন্যও প্রদীপ তৈরি করতে সমস্যা হয়েছে।
মোমবাতির বাজারও আগের তুলনায় খারাপ হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। তাঁদের দাবি, বছর দুয়েক ধরে মোমবাতির বিক্রি অনেকটা কমেছে। তার একটা অন্যতম কারণ, বিভিন্ন ধরনের এলইডি আলো বাজার ছেয়ে গিয়েছে। আধুনিক সেই সব আলো দেখতেও বেশ ভাল। তাই ক্রেতাদের মধ্যে তার চাহিদা রয়েছে। চণ্ডীদাস বাজারের এক দোকান মালিক নারায়ণ মণ্ডল বলেন, “যাঁদের বাড়িতে এই রকম আলো রয়েছে তাঁদের অনেকে দু’এক প্যাকেট মোমবাতি বাড়িতে জ্বালানোর জন্য নিয়ে যান। কিন্তু আগে যদি ১০ প্যাকেট বিক্রি হত তাহলে এখন তা দাঁড়িয়েছে দু’প্যাকেটে।”
দুর্গাপুরের এক এলইডি আলো বিক্রেতা স্বীকার করেন, গত কয়েক বছর ধরেই এই ধরনের বিভিন্ন আলোর বিক্রি বেড়েছে। এলইডি আলোর চেন, এ রকম আলো লাগানো গাছ, লেসার আলো তো ছিলই, তার সঙ্গে এ বার বেশ বিক্রি হচ্ছে ডিস্কো লাইট। তবে এখটি বিদ্যুতের সরঞ্জামের দোকানের মালিক উদয় দাঁ জানান, গত বছরও এরকম আলো বেশ ভাল বিক্রি হয়েছিল। এ বার সে তুলনায় বিক্রি বাড়েনি। মাসের শেষ দিক হওয়ার জন্য গত সপ্তাহে ক্রেতার ভিড় বিশেষ ছিল না বলে তাঁর অনুমান। এ ছাড়া, অনেকে আগে কেনা আলো দিয়েই এ বারও কাজ সারায় বিক্রি বাড়েনি বলে মনে করছেন বিক্রেতারা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.