কান্না ঠেলে বেরোচ্ছিল বছর পঁয়ত্রিশের সুজিত চক্রবর্তী ওরফে মিঠুর চোখ থেকে। দুর্গাপুজো গেল, কালীপুজো এল। এই প্রথম ক্লাস সিক্সে পড়া মেয়েটাকে কিছু কিনে দিতে পারলেন না। মেয়ের নতুন পোশাক কেনা দূরঅস্ত, দু’বেলা পেট পুরে খাবার জোগাড় করাই তাঁর কাছে চিন্তার বিষয়।
মিঠু কোনও বন্ধ কারখানার শ্রমিক নন। তিনি রিষড়া সেবাসদন হাসপাতালের পিওন। হাসপাতালের পরিচালনা নিয়ে ডামাডোলের জেরে পাঁচ মাস মাইনে পাননি। দুর্গাপুজোর মুখে সরকার একটা তদারকি কমিটি গড়ে দেওয়ায় আশার আলো দেখেছিলেন মিঠু। কাজের কাজ অবশ্য এখনও কিছুই হয়নি। উল্টে বেতন না পেয়ে একে একে হাসপাতাল ছেড়ে গিয়েছেন ডাক্তারবাবুরা। হাসপাতালে এখন রোগী ভর্তিও বন্ধ। দাঁতে দাঁত চেপে যে কর্মীরা পরিষেবা চালিয়ে যাচ্ছিলেন, আকাশ জুড়ে বাজি-পটকা আর আলোর উৎসবের দিনে তাঁদের ভবিষ্যৎ এখন অন্ধকারে। মিঠুর মতো একই পরিস্থিতি আরও অনেক কর্মীর। কেউ ছোট কাজ জুটিয়ে সংসারের জোয়াল টানছেন, কেউ নির্ভর করছেন আত্মীয়-স্বজনের উপরে।
পরিস্থিতি অবশ্য এমনটা ছিল না। দিব্যি চলছিল হাসপাতাল। রাজ্য সরকার এই প্রতিষ্ঠানকে বছরে ২৭ লক্ষ টাকা করে অনুদান দিত। কম হলেও সময়ে বেতন মিলত। গত বছরের নভেম্বর মাসে অনুদানের প্রথম খাতের ১৪ লক্ষ দেয় রাজ্য সরকার। এর পরে অনিয়মের অভিযোগে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেয় তারা। এর জেরেই হাসপাতালের চিকিৎসক এবং কর্মীদের বেতন বাকি পড়ে যায়। কর্মীরা আন্দোলন শুরু করেন। পরিচালন সমিতির সদস্যেরা শর্তসাপেক্ষে পদত্যাগ করেন। অচলাবস্থা চরমে ওঠে।
এই পরিস্থিতিতে সরকারের দরজায় বার বার কড়া নাড়েন কর্মীরা। দুর্গাপুজোর আগে রাজ্য স্বাস্থ্য ভবন একটি তদারকি (অ্যাড হক) কমিটি গড়ে দেয়। সরকারি টাকা দেখভাল করার কথা ওই কমিটির। কমিটির চেয়ারম্যান শ্রীরামপুরের মহকুমাশাসক জয়সি দাশগুপ্ত। সহ-সভাপতি চিকিৎসক-বিধায়ক সুদীপ্ত রায়। দুই সদস্য রিষড়ার পুরপ্রধান এবং জেলাশাসকের প্রতিনিধি। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরেরও প্রতিনিধি হিসেবে আছেন হুগলির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক। তিনি কমিটির সদস্য-আহ্বায়ক। কর্মীরা চেয়েছিলেন রিষড়ার পুরপ্রধানের নেতৃত্বে একটি প্রশাসনিক কমিটি গড়ে হাসপাতাল চালানোর বন্দোবস্ত হোক।
অক্টোবর মাসের শুরুতে অ্যাডহক কমিটি একটি বৈঠক করে। পর দিনই বিধায়ক দলবল নিয়ে হাসপাতালে আসেন। কর্মীদের একাংশের সঙ্গে তাঁর বচসা বাধে। অধিকাংশ কর্মীরই বক্তব্য, কমিটির সদস্যেরা হাসপাতালে এসে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলেই সমস্যা মিটবে। তা না করে বিধায়ক নিজের মতো করে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। কাজের কাজ কিছু হয়নি। সরকারি নির্দেশের পরে এক মাস কেটে গেলেও অনুদানের টাকা আসেনি। বহু অসুবিধা সত্ত্বেও রোগী ভর্তি বন্ধ হয়নি হাসপাতালে। দিন কয়েক হল অবশ্য আর পেরে উঠছেন না তাঁরা। রোগী ভর্তি কমেই আসছিল। এই পরিস্থিতিতে দিন কয়েক হল অন্তর্বিভাগে বন্ধ হয়েছে রোগী ভর্তি। চিকিৎসক না থাকাই কারণ বলে জানানো হয়েছে। বহির্বিভাগেও কাজ কার্যত বন্ধ। পরিষেবা না পেয়ে সমস্যায় পড়ছেন রোগীরাও।
সুদীপ্তবাবু রীতিমতো হতাশ। হাসপাতালের কর্মীদের সঙ্গে বচসার কথা নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি তিনি। তবে বলেন, “বিদ্যুতের বকেয়া বাকি। ডাক্তার নেই। আরও নানা ধারবাকি আছে। এই প্রতিষ্ঠানের পুনরুজ্জীবনের জন্য অনেক কিছু দরকার। দেখছি কী করা যায়।” হুগলির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তনিমা মণ্ডলের কথায় তবু কিছুটা আশা আছে। কিন্তু পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, তার দিশা দেখাতে পারেননি তিনিও। বলেন, “বেশ কিছু সময় লাগবেই। কমিটি যখন গড়া হয়েছে, তখন কিছু ব্যবস্থা নিশ্চয়ই হবে।” চিকিৎসকেরা সকলেই যে চলে গিয়েছে, বৃহস্পতিবারই তা জেনেছেন তনিমাদেবী। পুরপ্রধান শঙ্করপ্রসাদ সাউ অবশ্য ইতিমধ্যেই রাজ্যকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, পুরসভার হাতে হাসপাতালের দায়িত্ব দিলে তাঁরা তা নিতে প্রস্তুত।
|
এডস্ প্রতিরোধে শিবির শহরে
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
এডস্ প্রতিরোধে জেলার বিভিন্ন এলাকায় শিবির করে এইচআইভি শনাক্তকরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। বৃহস্পতিবার গোপীবল্লভপুর- ১ ব্লকের সাসড়ায় এমনই একটি শিবির হয়। সঙ্গে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবিরও হয়। শিবিরে সব মিলিয়ে ৪৫৬ জনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ২৪৯ জন মহিলা এবং ২০৭ জন পুরুষ। ছিলেন উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধান। ৬০ জনের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পশ্চিম মেদিনীপুরে এমন ১০টি শিবির হওয়ার কথা। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত ৬টি শিবির হয়েছে। আগে দাসপুর ১, দাসপুর ২ এবং পিংলা প্রভৃতি এলাকায় শিবির করে এইচআইভি শনাক্তকরণ করা হয়। এলাকার প্রচুর মানুষ কাজের জন্য ভিন্ রাজ্যে যান। কয়েক মাস কাটিয়ে ফিরেন। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, এ ক্ষেত্রে রক্ত সংগ্রহ এবং পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। রক্ত পরীক্ষার পর যাঁদের রক্তে এইচআইভি সংক্রমণ মিলবে, তাঁদের কাউন্সিলিং করে গোপনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। |