|
|
|
|
|
|
|
নাটক সমালোচনা ২... |
|
এক বিরল মণিকাঞ্চন |
মনোজ মিত্রের নাটক, বিভাস চক্রবর্তীর পরিচালনা। কেমন জমেছে ‘ছোট ছোট বাড়ি’? লিখছেন মনসিজ মজুমদার। |
অন্য থিয়েটারের প্রযোজনা ‘ছোট ছোট বাড়ি’, বাংলা থিয়েটারে এক বিরল মণিকাঞ্চন যোগ মনোজ মিত্রের নাটক ও বিভাস চক্রবর্তীর পরিচালনা। পার্টি ও প্রমোটার চক্রের দাপটে নিঃসঙ্গ মধ্যবিত্ত বৃদ্ধ বা বৃদ্ধার বিপন্ন জীবন নিয়ে জটিল কাহিনি। পার্টি-পুষ্ট জমি মাফিয়া চক্রান্তের জালে ছোট ছোট বাড়ির নিঃসঙ্গ মালিককে পাকে পাকে বাঁধে, তাদের নির্বাসিত করে, বাড়ি জমি হাতিয়ে নেয়।
বহু চরিত্রের আসা-যাওয়ায় মঞ্চদৃশ্য সব সময় জমজমাট। কাহিনির নিরঙ্কুশ নাটকীয় অভিঘাত পরিচালক অসাধারণ নৈপুণ্যে নির্মাণ করেছেন একটির পর একটি দৃশ্যে। মধ্য রাত্রে পরিবারের হিতৈষী বলে পরিচিত মধ্য তিরিশের যুবক যখন বৃদ্ধা বিধবাকে প্রেমের সংলাপ আউড়ে হত্যার চেষ্টা করে তখন নাটকের সাসপেন্স চরমে ওঠে। পরিণতি কী তার কিছু ইঙ্গিত নাটকে আগেই পাওয়া গেলেও শেষ পর্যন্ত দর্শককে মজিয়ে রাখে এক টান টান টেনশন। বিষয়ের সামাজিক ও রাজনৈতিক অভিমুখ ছাপিয়ে উঠে দানা বাঁধে ক্রাইমের রোমাঞ্চ, এবং এ নাটক প্রায় ক্রাইম থ্রিলারের মতোই রোমাঞ্চকর। |
|
নাটকের সাবটেক্সটে আছে ছেলে-মেয়ে বিদেশবাসী হওয়ায় বাবা মায়ের বিপন্নতা। আর আছে পার্টি কেমন করে গ্রাম থেকে গরিব এনে শহরে বেআইনি বসিয়ে ভোটার বানায়, গ্রামেও তাদের নামে ফলস ভোট পড়ে। তবে বিধবার পঁচিশ বছরের অতীত প্রাসঙ্গিক হত যদি কাশীতে নয় পশ্চিমবঙ্গে তিনি গণধর্ষিতা হতেন। তেমনই অধিকন্তু বিদেশবাসী ছেলের সঙ্গে তার স্বদেশবাসী ছেলের সঙ্গে তার স্বদেশবাসীর প্রেমিকার টেলিফোন সংলাপ।
কৃষ্ণা দত্তের একা অসহায় নার্ভাস বিধবা কনকচাঁপা, পার্টি ও মাফিয়ার কুকর্মের বশংবদ হাতিয়ার সনৎ চন্দ্রের পাখি এবং যেমন তেমন করে মাকে ভুল বুঝিয়ে বিদেশ যাত্রায় উদ্যোগী কৃতী ছেলে চিরঞ্জীব নাথের বুবাই প্রযোজনার উল্লেখযোগ্য অভিনয়।
কিন্তু সকলকে ম্লান করে দেয় নাটকের মুখ্য সম্পদ সুস্মিতা হাটীর মুখরা, সাহসী, চটপটে, চঞ্চল গ্রামের মেয়ে রাঁধুনী বিন্দি। অন্যান্য চরিত্রগুলির নাটকে কাজ একমাত্রিক, তাই অভিনয়েও কোনও অতিরিক্ত মাত্রা পায়নি।
বলতেই হয়, নাটকটি দেখা এক বিরল অভিজ্ঞতা।
|
শেষ নেই প্রেমের শর্মিষ্ঠা বন্দ্যোপাধ্যায় |
|
বিতর্কিত একটি নভেল থেকে নাটক করা খুব সহজ নয়। ‘পার্টটাইম লাভার্স’ সম্প্রতি মঞ্চস্থ করল ডি এইচ লরেন্সের নভেল অবলম্বনে ‘লেডি চ্যাটারলি’জ লাভার আনডান’। নাট্যকার ও পরিচালক রীজিতা চট্টোপাধ্যায়। কেন্দ্রীয় চরিত্র কোনি। তার স্বামী পঙ্গু। হুইল চেয়ারেই তার চলাফেরা। নিঃসঙ্গ কোনি বাড়ির কর্মচারীর সঙ্গে শারীরিক ও মানসিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়। মূল দ্বন্দ্ব এখানেই। সমাজও মানতে রাজি নয়। কর্মচারীর সঙ্গে কোনির সম্পর্কে সে ভাবে কোনও আলটিমেট প্রেম খুঁজে পাননি নাট্যকার। শেষ দৃশ্যে গ্লাসের অবশিষ্ট খাওয়া জল কোনির মুখে ছুড়ে বেরিয়ে যায় তার প্রেমিক। নাট্যকার দেখাতে চান এই শূন্য হয়ে যাওয়াই মেয়েদের চিরন্তন। ‘সিমোন দ্য বোভেয়াবের সেকেন্ড সেক্স’-এর কথা মনে পড়ে যায়। শরীরে নয়, প্রতিবন্ধকতা আসলে মনে-- নাটকের কোনি এ রকমই ভাবে, তাই হুইল চেয়ারে বসে থাকা তার স্বামী স্বচ্ছন্দে হেঁটে স্টেজে চলে আসেন। নাট্যকার উত্তরটা সম্ভবত নিজেই দিয়েছেন। কোনির চরিত্রে রীজিতা একটু সাবলীল হলে সম্পূর্ণ হত। প্রতিবন্ধী স্বামীর ভূমিকায় জনার্দন ঘোষ ভারসাম্য রক্ষা করেছেন। সৌরভ দাস, মারুয়া আলি শেখ চরিত্রানুযায়ী সফল। পরিচারিকার ভূমিকায় প্রতীক্ষা দাস-এর অভিনয় মনে দাগ কাটে। |
|
|
|
|
|