যৌনপল্লির আঁধার মুছে দুর্গতিনাশিনীর আরাধনা
ঘোর অমানিশায় যেন একাকার মা কালী ও মা দুর্গা। দুর্গার দশ ও কালীর চার হাত মিলিয়ে ১৪ হাতের ‘দুগর্তিনাশিনী’ মাতৃশক্তির আরাধনা ঘিরে এখন সাজো সাজো রব কাঁথির বাগবাজারের যৌনপল্লিতে।
১০০ বছর আগে প্রাচীন এই পুজোর প্রচলন করেছিলেন বাগবাজারের জমিদার রাজেন্দ্রনাথ বাগ। কথিত আছে, দুই রক্ষিতার আবদার মেনে এই আয়োজন। জমিদার আর জমিদারিকালের গর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে কবে। কিন্তু আজও রয়ে গিয়েছে বাগবাজারের সেই যৌনপল্লি আর এই পুজো। রাজেন্দ্রনাথ বাগের উত্তরসূরি আর যৌনকর্মীরা সম্মিলিত ভাবে আজও এই পুজো করেন। অন্য সময় যে পল্লি সমাজের কাছে নিষিদ্ধ, সেখানেই দুর্গতিনাশিনীর আরাধনায় সামিল হন আশপাশের লোকজনও।

বাগবাজারের দুর্গতিনাশিনী।—নিজস্ব চিত্র।
দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির কো-অর্ডিনেটার ইলা মান্না বছরভর এই পল্লি ও তার বাসিন্দাদের উন্নয়নে কাজ করেন। তিনি বলেন, “কোনও রকম চাঁদা না তুলে জমিদার পরিবারের উত্তরসূরি আর যৌনকর্মীদের টাকাতেই এই পুজো হয়। রীতিমতো জাঁকজমক করে পুজো হয়। আলোকমালায় সেজে ওঠে গোটা পল্লি। বিভিন্ন শ্রেণির লোকজন আসেন মায়ের পুজো দেখতে। প্রসাদ ভোগ খান সকলে। সব মিলিয়ে পল্লির চেহারাটাই আচমকা বদলে যায়।”
যৌনপল্লিতেই একটি আটচালা মন্দিরে দুগর্তিনাশিনী মায়ের মূর্তি রয়েছে। এখানে প্রতিমার বিসর্জন হয় না। শুধু মাত্র ঘট বিসর্জন হয়। প্রতি বছর পুজোর বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই আটচালা মন্দির ও প্রতিমায় নতুন করে রঙের কাজ শুরু হয়। এ বারও রং করার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। যৌনপল্লিতে যেন উৎসবের মেজাজ। পল্লীর লাগোয়া পাড়ার বাসিন্দা দিলীপ সেন, লক্ষ্মীনারায়ণ পাত্র, সবের্শ্বর জানা, কানু কামিল্যারা জানান, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা-কচি-কাঁচা নির্বিশেষে এলাকার সকলেই পুজোতে অংশ নেন। মন্দিরে আলপনা দেওয়া থেকে পুজোর প্রসাদের ফল কাটা, এমনকী মায়ের ভোগের রান্নার ব্যবস্থাও করেন যৌনকর্মী কমলা, লতা, আরতি, সীতারা। তাঁরা জানান, দুর্গা নয়, দুগর্তিনাশিনী পুজোর দিকেই তাকিয়ে কাটে তাঁদের বছর। পুজোর দিন সকাল থেকে উপোস করেন আচার মেনে। স্নান করে নতুন শাড়ি পড়ে মায়ের কাছে অঞ্জলি দেন নিষ্ঠা সহকারে। সারারাত মায়ের আরাধনার পর ভোর বেলা ঘট বিসর্জন হয়।
যৌনকর্মী দুর্গা বেরা, সন্ধ্যা দাসের কথায়, “সারা বছরের লাঞ্ছনা, গঞ্জনা উপেক্ষা করে এই একটি দিন মুক্তির স্বাদ পাওয়ার জন্য আমরা সবাই মুখিয়ে থাকি। হোক না এক রাতের জন্য, ভাল লাগার এই অনুভূতি বোঝানো কঠিন।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.