লিগ, নক আউট পর্যায়, কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনালের খেলা হয়ে গিয়েছে। আজ, কালীপুজোর সন্ধ্যায় বাংলা বাজারে শব্দবাজির ফাইনাল ম্যাচ। চলবে মধ্যরাত পর্যন্ত। এক দিকে, রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ও পুলিশ-প্রশাসন এবং অন্য দিকে এক শ্রেণির শব্দবাজি প্রস্তুতকারক, ব্যবসায়ী ও ক্রেতা। প্রথম পক্ষ চাইবে শব্দবাজি আটক করতে, শব্দবাজির ব্যবহার রুখতে এবং শব্দবাজির ফাটলে পত্রপাঠ দোষীদের গ্রেফতার করতে। আর বিরোধী পক্ষ চেষ্টায় থাকবে প্রথম পক্ষের নজরদারি এড়িয়ে কত বেশি পরিমাণ, কত বেশি পিলে চমকানো শব্দবাজি ফাটিয়ে আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে দেওয়া যায়।
যদিও শব্দবাজি নিয়ে আইনি ফয়সালা হওয়ার যেটুকু বাকি ছিল, শুক্রবার, কালীপুজোর ঠিক আগের দিন জাতীয় পরিবেশ আদালতের সেই নির্দেশও গেল পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের পক্ষে। পশ্চিমবঙ্গে ৯০ ডেসিবেলের বেশি শব্দসীমার আতসবাজি অর্থাৎ যাবতীয় শব্দবাজি নিষিদ্ধ করে পর্ষদ যে নির্দেশিকা জারি করেছিল, তাকেই বৈধ বলে এ দিন জাতীয় পরিবেশ আদালত স্বীকৃতি দিয়েছে। পরিবেশমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষদস্তিদার এ দিন বলেন, “বাজির শব্দসীমা ৯০ ডেসিবেলে বেঁধে দিয়ে আমরা যে নির্দেশিকা জারি করেছিলাম, জাতীয় পরিবেশ আদালত তাকেই বহাল রেখেছে।”
বাজি প্রস্তুতকারক ও ব্যবসায়ীরা ৯ অক্টোবর জারি হওয়া ওই নির্দেশিকাকে চ্যালেঞ্জ করে ও তার উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু ওই আবেদন এ দিন পরিবেশ আদালত খারিজ করে দেওয়ায় ফাইনালের ঠিক আগে পর্ষদ ও পুলিশ-প্রশাসন বাড়তি অক্সিজেন পেয়ে গেল।
তার পরেও কিন্তু দুশ্চিন্তা কাটছে না একটুও। |
আইনি আঙিনায়, কাগজে-কলমে এই জয় হয়তো প্রশাসনকে কিছুটা চাঙ্গা করবে, কিন্তু বাস্তবের ময়দানে শব্দবাজির দাপট বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার থেকেই যে পরিমাণে শুরু হয়ে গিয়েছে, তাতে শব্দদানবকে বোতলবন্দি করতে গেলেও কতটা সফল হওয়া যাবে বা আদৌ যাবে কি না, সেটাই প্রশ্ন। শুধু তা-ই নয়, সেই যখন জাতীয় পরিবেশ আদালতে গিয়েই প্রতিটি পর্যায়ে জয় পাওয়া গেল, তখন এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চুপচাপ বসে থাকার কী মানে ছিল, তা নিয়ে এখন প্রশ্ন তুলছেন পর্ষদকর্মীদের একাংশই। আর এই সময়ের মধ্যে ৬ টন শব্দবাজি এই রাজ্যের বাজি প্রস্তুতকারকেরা তৈরি করে ফেলেছেন বলে সারা বাংলা আতসবাজি উন্নয়ন সমিতির দাবি। এর মধ্যে সমিতির হিসেব মতো, প্রস্তুতকারকদের কাছ থেকে বাজারে এসেছে অন্তত এক টন।
পরিবেশ দফতরের এক কর্তার স্বীকারোক্তি, “নেট প্র্যাকটিসেই শব্দবাজির যা দাপট দেখছি, তাতে ফাইনাল ম্যাচের সময়ে কী হবে ভেবে এখনই ভয় হচ্ছে।” দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক শীর্ষকর্তার কথায়, “লুকোচুরি তো চলবেই। এটা তো এই খেলারই অঙ্গ। কিন্তু তার মধ্যে দিয়েই আমাদের জিতে বেরোতে হবে।” কলকাতা পুলিশের ডিসি (রিজার্ভ ফোর্স) অশোক বিশ্বাস বলেন, “এখনও পর্যন্ত পাঁচ টনের বেশি শব্দবাজি কলকাতা থেকে আটক করা হয়েছে। কালীপুজোর সন্ধ্যায় কেউ শব্দবাজি ফাটাতে গিয়ে ধরা পড়লে সঙ্গে সঙ্গে তাকে গ্রেফতার করা হবে।” পরিশেমন্ত্রী জানিয়েছেন, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, কলকাতা ও রাজ্য পুলিশ তিন পক্ষের সমন্বয়ে ২৬টি মোবাইল ভ্যান শনিবার ও রবিবার সন্ধ্যায় টহলদারির কাজ করবে।
শব্দবাজির ফাটানো ও তা ঠেকাতে পাল্টা ব্যবস্থাএই লুকোচুরি খেলা নতুন কিছু নয়। কিন্তু এ বার পর্ষদ ও পুলিশকে এই লুকোচুরি খেলায় অনেকটা পিছিয়ে থেকে শুরু করতে হয়েছে। যেটা অন্যান্য বার হয় না। শব্দবাজি তৈরির ডেরায় গিয়ে হানা দিয়ে বাজি উদ্ধারের বিষয়টি এ বার শুরু হয়েছে কেবল দুর্গাপুজোর পরে। রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষকর্তার কথায়, “যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে যাওয়ার পরে পর্ষদ মাঠে নেমেছে। তার পরে নিয়ম মতো আমরা নেমেছি। একেবারে শেষ প্রহরে পড়াশোনা করে পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট কিন্তু অতি মেধাবী পড়ুয়াও করতে পারে না।”
তা ছাড়া, শেষ মুহূর্তে প্রস্তুতকারকেরাও যে বাজারে আরও বেশি পরিমাণ শব্দবাজি ছড়ানোর চেষ্টা করবেন, সেটা আতসবাজি উন্নয়ন সমিতির কথাতেও পরিষ্কার। সমিতির চেয়ারম্যান বাবলা রায় বলেন, “দরিদ্র বাজি প্রস্তুতকারকেরা দাদন নিয়ে শব্দবাজি তৈরি করেছেন। সেই বাজি বিক্রি করতে না পারলে তাঁদের তো আত্মহত্যা করতে হবে। এই অবস্থায় প্রস্তুতকারকদের একাংশ পুলিশের নজর এড়িয়ে ওই শব্দবাজি বিক্রির চেষ্টা করতেই পারেন।” |
কান বাঁচাতে ফোন করুন |
• দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কন্ট্রোল রুমের টোল-ফ্রি নম্বর:
১৮০০-৩৪৫-৩৩৯ ও ০৩৩-২৩৩৫-৮২১২।
খোলা থাকছে:
১ নভেম্বর বিকেল ৫টা থেকে রাত ১২টা।
২ নভেম্বর বিকেল ৫টা থেকে পরদিন ভোর ৪টে।
৩ নভেম্বর বিকেল ৫টা থেকে পরদিন ভোর ৪টে।
• পরিবেশ নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠনগুলির
কেন্দ্রীয় সংগঠন সবুজ মঞ্চের কন্ট্রোল রুমগুলির নম্বর:
কলকাতা ৯২৩০৫-৬৮৯০২, ৯৮৩০২-৬৮৯০২।
হুগলি ০৩৩-২৬৮৫-৬০৮০।
নদিয়া ৯৬৩৫৪-৯২৭৭৫, ৯১৫৩৫-১৮৫৮৩।
উত্তর ২৪ পরগনা ৯৪৭৪৩-৩০০৯২, ৯৪৩২৬-৮৬৫১০।
খোলা থাকবে:
২ নভেম্বর বিকেল ৫টা থেকে পরদিন ভোর ৪টে।
৩ নভেম্বর বিকেল ৫টা থেকে রাত ১২টা। |
|