বিনোদন ছোট পর্দা ব্রাত্য নয়,
প্রসেনজিৎ তাই সিরিয়ালেও

কিছুতেই রাজি হননি উত্তমকুমার। কলকাতায় দূরদর্শনের জন্মলগ্নে তাঁকে বহু বার টিভি-র পর্দায় হাজির করার চেষ্টা শেষমেশ সফল হয়নি।
চার দশক বাদে সেই ছবিটা পাল্টে গিয়েছে বেমালুম। বেসরকারি চ্যানেলের মেগা-সিরিয়ালে অংশ নিতে রাজি হয়ে গিয়েছেন টলিউডের এ যুগের সুপারস্টার প্রসেনজিৎ।
সময়টা পাল্টে যাওয়ার চিহ্নটা স্পষ্ট। সে যুগের তারকারা মনে করতেন, টিভি-র মাধ্যমে দর্শকের অন্দরমহলে ঢুকে পড়লে স্টার-ভ্যালুর দফারফা। তারকার রহস্য ফিকে হয়ে গেলে তাঁর আকর্ষণেও ভাটা পড়বে। কিন্তু ডিভিডি-র যুগে তারকারা কবেই পরিবারের এক জন হয়ে উঠেছেন। টিভিও ঘুরে-ফিরে হিট ছবিগুলিকে দেখায়। সুতরাং এখন আর টিভি থেকে দূরে থাকার মানে হয় না বলেই মনে করেন এ কালের তারকারা।
এক যুগ আগে অমিতাভ বচ্চনকে তাঁর প্রৌঢ়ত্বের সীমায় আম ভারতীয়র কাছে নতুন করে আবিষ্কারের মাধ্যম তো সেই টিভি চ্যানেলই। মুম্বইয়ের তিন খান থেকে শুরু করে মিঠুন চক্রবর্তী, অক্ষয় কুমার, অনিল কপূর, শত্রুঘ্ন সিংহেরা ঘুরে-ফিরে সর্বভারতীয় হিন্দি চ্যানেল বা আঞ্চলিক দর্শকের কাছে নানা অবতারে হাজির হয়েছেন। ‘দাদাগিরি’র সুবাদে ক্রিকেটার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তাতেও মাত্রা জুড়েছে টিভি।
শুধু জনপ্রিয় তারকারাই নয়, দেশে-বিদেশে নামজাদা চিত্রপরিচালকদের টিভি-তে আবির্ভাবও বারবার সমৃদ্ধ শিল্পের জন্ম দিয়েছে। ইঙ্গমার বার্গম্যানের ‘সিন্স ফ্রম আ ম্যারেজ’ তাঁর সেরা ছবিগুলোর সঙ্গে এক বন্ধনীতে পড়বে। সত্যজিৎ রায়ও ফরাসি টেলিভিশনের জন্য ‘পিকু’ ও দূরদর্শনের জন্য ‘সদ্গতি’ তৈরি করেছিলেন। পরে তাঁর প্রযোজনায় কয়েকটি গল্পের টিভি-সংস্করণও তৈরি হয়। তবু টালিগঞ্জে টিভি-র গুরুত্ব বুঝতে সময় লেগেছে।
অথচ টিভি থেকে সেলুলয়েডের পর্দায় উত্তরণের নমুনা হাতের কাছে ভূরি-ভূরি মিলবে। সত্যি বলতে, মুষ্টিমেয় ক’জনকে বাদ দিলে নায়ক-নায়িকা কী চরিত্রাভিনেতা— আজকের টলিউডে প্রথম সারির যাঁরা, তাঁরা সকলেই টিভি সিরিয়ালের সেট থেকেই ধারালো হয়ে উঠেছেন। মুম্বইয়ের ছবিটাও আলাদা নয়। দিল্লির অখ্যাত যুবা শাহরুখ খানের প্রথম আবির্ভাবও ‘ফৌজি’ এবং ‘সার্কাস’ সিরিয়ালেই।
প্রসেনজিতের দাবি, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে টিভি ও ফিল্মকে পরস্পরের হাত ধরতেই হবে। কেন? তাঁর ব্যাখ্যা, “ফিল্ম ও টিভি-র সম্পর্কটা আদতে দেওয়া-নেওয়ার। এ-ও এক ধরনের দাম্পত্য। এক দিক দিয়ে সিনেমা এখন গোটা ভারতেই শক্তিশালী টিভি-অভিনেতাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। আবার সফল একটি ছবির স্যাটেলাইট স্বত্ত্ব কিনে নিতে পারলে টিভি চ্যানেলের জন্যও পোয়াবারো।”
প্রসেনজিৎ মনে করালেন, ১৯৯৫ সালে প্রথম আঞ্চলিক টিভি চ্যানেল হিসেবে জি-গোষ্ঠী বাংলায় আসার সময়েও তাঁর বড় ভূমিকা ছিল। প্রসেনজিতের টিভি-তে অভিষেক তারও আগের কথা। বছর পঁচিশ আগে ‘কাগজের বউ’ সিরিয়ালে অভিনয় করেন আনকোরা প্রসেনজিৎ। তখনও কেব্ল টিভি আসেনি। দূরদর্শনের একচ্ছত্র আধিপত্য। সাপ্তাহিক সিরিয়ালের দৌড় বড়জোর ১৩টি পর্বে। এর পরে বেসরকারি চ্যনেলের যুগে বেশ কয়েকটি টিভি-প্রযোজনার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন প্রসেনজিৎ। ঋতুপর্ণ ঘোষকেও দেখা গিয়েছে নিজে টিভি শো-এর সঞ্চালনা করা ছাড়াও টিভি-র জন্য সিরিয়াল তৈরি করছেন। রবীন্দ্র সার্ধশতবর্ষে প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণের যুগলবন্দি ‘গানের ওপারে’ রসিকজনের সমাদর কুড়িয়েছিল। প্রসেনজিৎ নিজেও একটি গেম শোয়ের ‘হোস্ট’ হিসেবে ছোট পর্দায় হাজির হয়েছেন। কিন্তু সিরিয়ালে অভিনয় এত দিন বাদে এই প্রথম। ইন্ডাস্ট্রির এক নম্বর তারকা সিরিয়ালে অভিনয় করছেন, এমন নজির মুম্বই বা কলকাতায় আর মিলবে না।
‘মৌচাক’ সিরিয়ালটি জমে ওঠার এত দিন পরে প্রসেনজিৎকে আনা হল কেন? এটাও আদতে বিপণনের কৌশলবলছেন প্রযোজক শিবাজি পাঁজা। প্রসেনজিৎ অবশ্য থাকছেন দু’টি পর্বে। কালীপুজোর ঠিক এক সপ্তাহ পরের শনিবার, এবং তার দু’দিন বাদে সোমবার এই দু’দিন। সিরিয়ালেও প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের ভূমিকায় তিনি ঢুকে পড়বেন সিরিয়ালের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের বাড়িতে। ঝিমলি, তিতলি, অগ্নিদের সঙ্গে গান গেয়ে নেচে দীপাবলি উদ্যাপনের মধ্যে। ক’দিন আগেই তাঁকে দেখা গিয়েছিল ‘ইষ্টিকুটুম’ ধারাবাহিকে ‘কাকাবাবু’র বেশে। সেটা ছিল ‘মিশর রহস্যে’র প্রচার। কিন্তু এ বার তিনি নিজের চেহারাতেই হাজির হচ্ছেন ‘মৌচাক’-এ।
টিভি-র বিষয়ে তারকাদের দৃষ্টিভঙ্গির বদলটা এতেই স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আজকের ব্যস্ত নায়ক দেবও টিভি-কে সমীহের চোখে দেখেন। তাঁর কথায়, “এখন কোনও ছবির প্রচারই আমরা টিভি-র সাহায্য ছাড়া ভাবতে পারি না।” আপাতত অবশ্য সেলুলয়েডের হিরোগিরিতেই তাঁর ‘ফোকাস’ অটুট রাখতে চান দেব। তবে তাঁর দাবি, ভবিষ্যতে টেলিভিশনেও কোনও চ্যালেঞ্জিং ভূমিকার জন্য তিনি অপেক্ষা করে থাকবেন।
চলচ্চিত্র তথা সংস্কৃতি জগতের একাংশ অবশ্য এখনও মনে করেন, সত্যিকার সৃষ্টিশীল কাজের মাধ্যম হিসেবে ছোট পর্দা যথেষ্ট উপযুক্ত নয়। একদা টিভি প্রযোজক বিভাস চক্রবর্তী ও চিত্রপরিচালক গৌতম ঘোষ এ বিষয়ে একমত। খুব অল্প সময়ে অনেকটা কাজ তোলার বাধ্যবাধ্যকতাই এর প্রধান কারণ বলে তাঁদের অভিমত। বিভাস টিভি-র চাকরি ছেড়েই নাটকে পুরোপুরি মনোযোগ দিয়েছিলেন। গৌতমও আশির দশকে দূরদর্শনের জন্য কয়েকটি এপিসোড করেছিলেন। তাঁর বক্তব্য, “নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জিং কোনও কাজের কথা ভাবতে পারলে তবেই টিভি-তে ফিরব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.