মেক্সিকো থেকে আমেরিকা, মাদকের পাতাল-সফর
মাটির গভীরে সীমান্ত পার মাদকের।
অন্ধ গলিপথে পা ফেলতেই দু’পাশে ঠেসে ধরে এবড়ো খেবড়ো দেওয়াল। ফুট তিনেক চওড়া। মাথা সোজা করে দাঁড়ানো যায় না। খুব বেশি হলে চার ফুট উচু। আর দৈর্ঘ্য কম করে হলেও চার-চারটে ফুটবল স্টেডিয়ামের সমান। তবে মাটির ৩৫ ফুট গভীরে এই সুড়ঙ্গের মধ্যে কিছুটা এগোলেই চোখে পড়ে বড় আলো। আছে হাওয়া চলাচলের জন্য ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা। রয়েছে রেল লাইনও। যে পথে ছোট ছোট গাড়ি করে পাচার হয়ে যায় মাদক।
পাচারকারীদের প্রাণভোমরা এই সুড়ঙ্গপথের সন্ধান মিলল মেক্সিকোয়। পুলিশ জানিয়েছে, সুড়ঙ্গের এক মাথা মেক্সিকোর এক গুদামঘরে। অন্য প্রান্তটিও একটি গুদাম। তবে সীমান্ত পেরিয়ে সেই ক্যালিফোর্নিয়ায়।
অভিযানে নেমে পুলিশ তিন পাচারকারীকে গ্রেফতার করেছে। উদ্ধার করা হয়েছে ৮ টন মারিজুয়ানা, ৩২৫ পাউন্ড কোকেন। স্বভাবতই উচ্ছ্বসিত পুলিশ। তাদের সন্দেহ, এর পিছনে মেক্সিকোর কুখ্যাত মাদক-গোষ্ঠী ‘সিনালোয়া’ জড়িত।

এই পথেই ছোট গাড়ি করে পাচার হয় মাদক। ছবি: এএফপি।
মেক্সিকোয় এ ভাবে মাদক পাচার নতুন কোনও ঘটনা নয়। তবে এত দীর্ঘ সুড়ঙ্গ অবশ্যই নয়া আবিষ্কার। বিস্মিত প্রশাসনিক কর্তারা তাই নাম দিয়েছেন ‘সুপার টানেল’। এক কর্তা যেমন জানালেন, এত বড় একটা সুড়ঙ্গ তৈরি করতে অন্তত এক বছর সময় লেগেছে। তা ছাড়া অসংখ্য কর্মীরও প্রয়োজন। চোখ এড়িয়ে কী ভাবে এ কাজ সারল পাচারকারীরা, সে নিয়ে বিস্ময় কাটছে না গোয়েন্দাদের। ডেরেক বেনার নামে এক অফিসারের যেমন দাবি, এ রকম সুপরিকল্পিত কাজের পিছনে অবশ্যই ইঞ্জিনিয়ার-আর্কিটেক্টরাও রয়েছেন। খরচও হয়েছে অন্তত ১০ লাখ ডলার। এ পরিমাণ অর্থ ঢালতে পারলে নিশ্চই আড়ালে কোনও বড়সড় মাদক পাচারকারী দল রয়েছে। সে প্রসঙ্গে সিনালোয়ার নাম ওঠাও অমূলক নয়। মেক্সিকোর কুখ্যাত গ্যাং। নেতার নাম ‘এল চ্যাপো’, বাংলায় যার মানে ‘বেঁটে’। চেহারাই প্রমাণ দেয় নামের অর্থ। ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতা নিয়েই অপরাধ জগতের চূড়ায় পা দিয়েছে সে। এক নামী মার্কিন পত্রিকায় তাকে নিয়ে লেখাও বেরিয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল এল চ্যাপো অন্ততপক্ষে ১০০ কোটি ডলারের মালিক।
পুলিশের মতে, বন্দরগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে কড়াকড়ি হয়ে যাওয়ায় এখন সে পথ এড়িয়েই চলে পাচারকারীরা। তাই মাটির গভীরে সুড়ঙ্গ কিংবা জলপথকেই অস্ত্র করছে তারা। সান দিয়েগোর অ্যাটর্নি লরা ডাফির কথায়, “বছরের পর বছর সময় ব্যয় করে, লক্ষ লক্ষ ডলার খরচ করে গোপন সুড়ঙ্গ তৈরি করছে ওরা। উদ্দেশ্যই হল এক সঙ্গে বেশি পরিমাণ মাদক পাচার করা।” ২০১০ থেকে এখনও পর্যন্ত এ রকম পাঁচটি সুড়ঙ্গর সন্ধান পেয়েছে পুলিশ।
অ্যারিজোনাতেও এ ধরনের সুড়ঙ্গের খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল। তবে এ সব ক্ষেত্রে মাদক পাচারকারীদের কাছে সান দিয়েগোই বেশি জনপ্রিয়। জানালেন ডেরেক বেনার। কারণ সান দিয়েগোয় কাদামাটির পথ। মাটি খুঁড়তে সুবিধা হয়। তা ছাড়া সুড়ঙ্গের মাঝপথে ধস নামার আশঙ্কাও কম। এ বারের সফল অভিযানের পর ডেরেকের হুঙ্কার, “ফের সতর্কবার্তা ওদের। পাতালপথেও সাফল্যের টিকিট মিলবে না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.