তাদের জমিতে দীর্ঘ দিন ধরে থাকা বেশ কয়েকটি ক্লাবকে জায়গা ছাড়ার নির্দেশ দিল রেল। অন্ডালে ওই ক্লাবগুলি ছাড়াও বাজারে যাঁরা রেলের জায়গায় ব্যবসা করছেন, তাঁদের উঠে যাওয়ার মৌখিক নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে রেল সূত্রে জানা গিয়েছে।
এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার অন্ডালে রেল কর্তৃপক্ষের কাছে একটি স্মারকলিপি দেন ওই সব ক্লাবের কর্তা-সদস্যেরা। তাঁদের দাবি, প্রয়োজনে রেলকে রাজস্ব দিতে তাঁরা রাজি। কিন্তু উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হোক।
বড় রেল ইয়ার্ড শহর অন্ডালে রেলকর্মীদের আবাসনই রয়েছে প্রায় সাড়ে চার হাজার। সেখানে রেলের জমিতে অনেক দিন ধরেই নানা ক্লাব ও বাজারের কাজকর্ম চলছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান। তাঁরা জানান, ৬৬ বছর আগে অন্ডাল দক্ষিণ কলোনিতে রেলের গার্ডেরা সঙ্ঘশ্রী ক্লাব গঠন করেন। এখন সেখানে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র চলে। শহরের বড় দুর্গাপুজো ছাড়াও সারা বছর নানা ধরনের অনুষ্ঠান করে ক্লাবটি। ১২ নম্বর রেল কলোনির ইউথ ক্লাব প্রায় তিন দশকের পুরনো। |
জায়গা ছাড়ার মৌখিক নির্দেশের প্রতিবাদ ব্যবসায়ীদের। —নিজস্ব চিত্র। |
১৯৮৫ সালে গঠিত ইয়ংস্টার ক্লাব দুঃস্থ ছেলেমেয়েদের কম খরচে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। দামোদর কলোনির মাইট ক্লাবে স্থানীয় পঞ্চায়েতে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র চলছে। ৯ নম্বর কলোনি পোস্ট অফিস মোড়ে ১৯৭৩ সাল থেকে রয়েছে রেজিমেন্ট ক্লাব। সেটি বড় ক্যারম প্রতিযোগিতার জন্য এলাকায় পরিচিত। ট্রাফিক কলোনির জাতীয় সঙ্ঘ ক্লাবও ৬০ বছরের পুরনো। ট্রাফিক জিমন্যাসিয়াম ক্লাব কালীপুজোয় বড় মেলার আয়োজন করে। দামোদর কলোনির ২৫ বছরের পুরনো দামোদর জিমন্যাসিয়াম ক্লাবের ভলিবলের জন্য খ্যাতি রয়েছে। এ ছাড়া দক্ষিণপল্লির ৬০ বছরের ইয়ুথ ক্লাবে সারা বছর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র চলে।
সঙ্ঘশ্রী ক্লাবের শোভন পাল, দামোদর জিমন্যাসিয়ামের কাঞ্চন ভট্টাচার্য, রেজিমেন্ট ক্লাবের দিলীপ মাজি, মাইট ক্লাবের সৌরভ দাসদের দাবি, তাঁরা প্রত্যেকেই রেলকর্মীর ছেলে। তাঁদের ক্লাবে ২১ অক্টোবর রেলের সাদা কাগজে এক সহায়ক বাস্তুকারের স্বাক্ষর করা বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়েছে। তাতে লেখা আছে, সাত দিনের মধ্যে ক্লাব খালি না করে দিলে রেল উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। এ ছাড়া রেলের জমিতে ১২২৬টি দোকান চলছে। দোকানদারেরা জানান, আরপিএফ-এর এক অফিসার তাঁদের দোকানে গিয়ে বলে এসেছেন, সাত দিনের মধ্যে দোকান খালি না করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দোকানদার ও ক্লাব কর্তাদের দাবি, প্রয়োজনে রেল রাজস্ব আদায় করুক। তা না হলে রেল পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হোক। এ ধরনের কোনও ব্যবস্থা ছাড়া উচ্ছেদ করা হলে আন্দোলনে নামবেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা। স্টেশন রোডের হোটেল ব্যবসায়ী প্রবীর দাসের কথায়, “বিকল্প ব্যবস্থা ছাড়া জোর করে উচ্ছেদ করা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।” স্থানীয় বাসিন্দা তথা রামপ্রসাদপুর পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান অভিজিৎ বসুর দাবি, “রামপ্রসাদপুর, অন্ডাল, শ্রীরামপুর এবং মদনপুর পঞ্চায়েতের প্রধান বাজার আচমকা এ ভাবে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঠিক নয়। আসানসোলেও রেলের জায়গায় অনেক কিছু রয়েছে। রেল সেখানে সহযোগিতা করেছে। এখানেও তাই করতে হবে।” এলাকার বাসিন্দা তথা বর্তমান পঞ্চায়েত সদস্য চন্দ্রভানু দত্তের বক্তব্য, “বড় রেল শহর হলেও কর্মীদের জন্য বাজার, ক্লাব কিছুই রেল করে দেয়নি। বাজারের বেশির ভাগ দোকানই রেলকর্মীদের স্বজনের। এ ভাবে বাজার তুলে দিলে অন্ডালে এমন কোনও জায়গা নেই যেখানে ব্যবসা করা যাবে। রেলের গোটা বিষয়টি ভেবে দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।”
পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশনের জনসংযোগ আধিকারিক বিশ্বনাথ মুর্মু বলেন, “শুধু জমি জবরদখল করে রাখা নয়, ওখানে রেলের বিদুত্যের লাইনও অনেকে ব্যবহার করছেন। আগে তাঁদের নোটিস অনুযায়ী জায়গা খালি করতে হবে। তার পরে আলোচনা করার ব্যাপারে রেল রাজি আছে।” |