বাড়ি দেখে হোমে ফিরে খুশি তানজিরা
ঝুপড়ির সামনে দাঁড়িয়ে দিনমজুর বাবা ও সৎমা। বাড়ির সামনে এক ঝাঁক পুলিশ। বছর কুড়ির এক তরুণীর পাশে দাঁড়িয়ে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রুমা পাল। তরুণী তাঁর সৎমাকে বলছেন, “মনে পড়ে মা, এই উঠোনে দাঁড়িয়ে তুমি আমাকে বেদম লাঠিপেটা করেছিলে। সে দিন অনেক কেঁদেছিলাম। বাড়ি থেকে পালিয়ে ছিলাম। তোমার আঘাতটা যেন মঙ্গলদায়ক হয়েছে।” ১৪ বছর বাদে সেই মেয়েকে দেখে আবেগে ভেসে গেলেন তাঁর বাবা ও সৎমা। মেয়েকে জড়িয়ে কেঁদে ফেললেন দুজনেই। কাঁদলেন ওই তরুণীও। বাবা-মা মেয়েকে কাছে রাখতে চান। কিন্তু তা হল না। মেয়ে বললেন, “তোমাদের দেখার খুব ইচ্ছে হত। তাই হোমে বলেছিলাম। দেখা হল। এখন ফিরে যাচ্ছি। আমি লেখাপড়া করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই।” আধ ঘণ্টা বাদে ফিরেও গেলেন ওই তরুণী। মঙ্গলবার দুপুরে এই ঘটনা ঘটল মালদহের রতুয়ার উত্তর মহারাজপুরে। পড়শিদের অনেকেও চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি।
তানজিরা।—নিজস্ব চিত্র।
১৪ বছর আগে বাড়ি থেকে মার খেয়ে পালানো তানজিরা খাতুন নামে ওই তরুণী থাকেন কলকাতার সোনারপুরের একটি হোমে। কিন্তু কেন বাবা-মায়ের সঙ্গে তাঁকে দেখা করাতে নিজে ওই প্রত্যন্ত গ্রামে হাজির হয়েছিলেন প্রাক্তন বিচারপতি রুমা পাল? তরুণীর বাড়ির লোক জানতে পেরেছেন, যে হোমে তানজিরা থাকেন, তার পরিচালন সমিতির সভাপতি প্রাক্তন বিচারপতি রুমাদেবী। সেখানে তানজিরার স্বভাব ব্যবহার দেখে মুগ্ধ হন রুমা দেবী। তানজিরা তাঁর কাছে এক বার বাবা-আর সৎ মাকে দেখার আর্জি পেশ করেছিলেন। সে জন্য তাঁকে নিয়ে এ দিন মালদহে হাজির হন প্রাক্তন বিচারপতি। রুমাদেবী বলেন, “ও কিছু দিন ধরে বলছিল বাবা-মাকে দেখতে চায়। তাই নিয়ে এসেছি। ও যখন আরো পড়াশুনো করতে চায়, সেই ব্যবস্থাই করা হবে।” তবে পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তানজিরা খাতুন নামে ওই তরুণীর ৬ বছর বয়সে তাদের ছেড়ে পৃথক সংসার পাতেন মা রাবিয়া বিবি। বাবা জুল্লুর রহমান ফের দ্বিতীয় বিয়ে করেন রোজিনা বিবিকে। কিন্তু সৎমায়ের অত্যাচারে ৬ বছর বয়সে বাড়ি থেকে মাসির বাড়ি পালিয়ে যায় সে। মাসি গাজলে এক শিক্ষকের বাড়িতে পরিচারিকার কাজে নিযুক্ত করে দেন তাকে। বছরখানেক বাদে গাজলে হাটে গরু বিক্রি করতে গিয়েছিলেন তানজিরার বাবা জুল্লুর রহমান। কাকতালীয় ভাবে তাঁর গরু কেনেন ওই শিক্ষক। টাকা কম পড়ায় তাঁকে বাড়িতে নিয়ে যান ওই শিক্ষক। সেখানেই মেয়েকে দেখতে পেয়ে বাড়ি ফেরার কথা বললেও সে রাজি হয়নি। বাবা ফের আসতে পারে ভেবে সেখান থেকেও পালায় তানজিরা। মালদহ স্টেশনে রেল পুলিশের হাত হয়ে তানজিরার ঠাঁই হয় হোমে। পরে তাঁকে পাঠানো হয় কলকাতার একটি হোমে। সেখানে পড়াশোনা শুরু হয় তার। দেরিতে পড়াশোনা শুরু হওয়ায় ২০ বছর বয়সী তানজিরা এখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। তানজিরার বাবা জুল্লুর রহমান বলেন, “কাজকর্মে ভুল করলে তো বাবা-মা বকতেই পারে। তা বলে ও যে পালিয়ে যাবে ভাবিনি। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পাইনি। কিছুদিন আগে শুনি ও কলকাতায় রয়েছে। ওর মামারা বলেছিল নিয়ে আসবে। কিন্তু তা হয়ে ওঠেনি। আজ ওকে পেয়ে রেখে দিতে চেয়েছিলাম।” সৎমা জানালেন, তিনি নিজের মেয়ে মনে করেই বকাবকি করতেন। তাঁর দাবি, “ও বাড়িতে থাকতে রাজি বলে ভাল হতো। না থাকলেও আশা করি ও অনেক বড় হবে।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.