শুধু মাটি কাটা বা পুকুর খনন নয়, বছরে ১০০ দিন কাজের প্রকল্পে স্থায়ী সম্পদ তৈরির উপরে জোর দেওয়া দরকার, যার সুবাদে বছরের পর বছর গ্রামের মানুষ লাভবান হতে পারবেন। বাঁকুড়ার রবীন্দ্র ভবনে সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের আধিকারিক, জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত সদস্য, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানদের নিয়ে একটি বৈঠকে এই কথা বলেছেন মহাত্মা গাঁধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান সুনিশ্চিতকরণ প্রকল্পের (এমজিএনআরইজিএস) রাজ্য কমিশনার দিব্যেন্দু সরকার।
প্রসঙ্গত, ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে ২০০৮ সাল থেকেই দক্ষিণ বাঁকুড়ার রাইপুর, রানিবাঁধ, সিমলাপাল, সারেঙ্গা-সহ বেশ কিছু ব্লকে আমবাগান গড়তে নামে জেলা প্রশাসন। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, দক্ষিণ বাঁকুড়ার প্রায় ২০০ হেক্টর জমিতে এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৩০টি আমবাগান গড়ে তোলা হয়েছে ওই প্রকল্পের আওতায়। প্রতি বছর আমের মরসুমে ওই বাগানের উত্পাদিত আম বাজারে বিক্রি করে প্রায় ১৬০০ পরিবার গড়ে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় করছে। এই বিষয়টির উপরে ৩০ মিনিটের একটি তথ্যচিত্র তৈরি করেছে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন, যার পোশাকি নাম ‘সবুজে স্বনির্ভর’।
জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, ইতিমধ্যেই তথ্যচিত্রটি কেন্দ্রীয় সরকারের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের নজরে এসেছে। গোটা দেশে ১০০ দিনের প্রকল্পে এই ধরনের কাজ করানোয় উত্সাহ জোগাতে অন্য রাজ্যগুলির সামনে তথ্যচিত্রটি তুলে ধরারও চিন্তা ভাবনা চলছে। এ দিন এই তথ্যচিত্রের আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করেন দিব্যেন্দুবাবু। তিনি বলেন, “শুধু মাটি কাটা বা পুকুর খননের কাজ করিয়ে শ্রমিকদের হাতে টাকা তুলে দিলেই আমাদের কাজ শেষ নয়। যে কাজ একবার করে বছরের পর বছর মানুষ ফল ভোগ করতে পারবে, মানুষ স্বনির্ভর হতে পারবে, ১০০ দিনের প্রকল্পে সেই ধরনের কাজের দিকেই আমাদের বেশি জোর দেওয়া উচিত।”
ঘটনা হল, চলতি আর্থিক বর্ষে রাজ্যে ১০০ দিনের কাজের গতি শ্লথ হয়ে পড়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁর সাম্প্রতিক জেলা সফরে বারবার ১০০ দিনের কাজের গতি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। তাই বছরের শেষ কয়েকটি মাসে এই কাজে গতি আনার বিষয়েও জোর দিতে বলেছেন দিব্যেন্দুবাবু। প্রশাসনিক তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে রাজ্যে ১০০ দিনের কাজে ২৩ কোটি ৪১ লক্ষ কর্মদিবস সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এখনও পর্যন্ত ৩ কোটি ৫৪ লক্ষ কর্মদিবস সৃষ্টি করা গিয়েছে। বাঁকুড়া জেলায় ১ কোটি ৩৮ লক্ষ কর্মদিবসের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এখনও পর্যন্ত মাত্র ১০ লক্ষ কর্মদিবস তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। দিব্যেন্দুবাবুর কথায়, “কাজের গতি শ্লথ হওয়ার একাধিক কারণ রয়েছে। কিন্তু, আমাদের হাতে এখনও পাঁচ মাস সময় রয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণের চেষ্টা করতে হবে।” এ দিনের অনুষ্ঠানে জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী, জেলাশাসক বিজয় ভারতী উপস্থিত ছিলেন। |