দিওয়ালিতে অনিলের তুবড়ি
নিল কপূর দিওয়ালিতে এখনও বাজি কেনেননি।
কারণ?
তাঁর মতে উনি তো তুবড়িটা ধরিয়েই দিয়েছেন।
ভারতীয় টেলিভিশনের আকাশ এখন যে তাঁরই জ্বালানো হাজার আতসবাজিতে রঙিন। তাই এখন পায়ের ওপর পা তুলে একটু বিশ্রাম নিচ্ছেন।
ট্যাম রিপোর্টে যা ইচ্ছে সংখ্যা দেওয়া হোক না কেন, ছিদ্রান্বেষীরা যাই বলুন না কেন, অনিল নিজে দারুণ খুশি।
“ইয়েস, আই অ্যাম হ্যাভিং দ্য বিগেস্ট ব্লাস্ট দিস দিওয়ালি,” হাসতে হাসতে বলেন তিনি।
মার্কিন টেলিভিশন সিরিজ ‘টোয়েন্টি ফোর’-এ অভিনয় করেছিলেন অনিল। প্রেসিডেন্ট ওমর হাসানের চরিত্রে। তার পর নিজে ঠিক করেন যে এই সিরিজের স্বত্বটা কিনে নেবেন। ভারতীয় দর্শকের জন্য সিরিজটা হিন্দিতে রূপান্তর করবেন।
যেমন কথা তেমন কাজ। হিন্দি ‘টোয়েন্টি ফোর’-এ অনিল নিজেকে কাস্ট করলেন মুখ্য চরিত্রে। অরিজিনাল সিরিজে এই চরিত্রটিতে অভিনয় করেছিলেন কিয়েফের সাদারল্যান্ড। যিনি পরে এ দেশে এসে মীরা নায়ারের ‘দ্য রিলাকটান্ট ফান্ডামেন্টালিস্ট’ ছবিতে অভিনয় করে গিয়েছেন। কিয়েফেরের জুতোয় পা গলানোটা সহজ ছিল না অনিলের পক্ষে। বলিউড তারকা হয়ে এই ধরনের একটা সিরিয়াল করার কথা তো কেউ ভাবেননি। তারকারা বড়জোর রিয়েলিটি, কুইজ বা গেম শো-তে অ্যাঙ্কর হিসেবে কাজ করেছেন। আমির খান নন-ফিকশন শো-য়ে বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন ‘সত্যমেব জয়তে’র মতো সিরিজ বানিয়ে। কিন্তু সিরিয়ালের দুনিয়াতে এই রকম হলিউডি কায়দায় অনুষ্ঠান তো দেশের দর্শক দেখেননি।
“আমি নিজে সাত-আট নম্বর পর্বগুলোও ফাইনালি দেখিনি। রাফ কাটটা দেখেছিলাম। তবে ফিনিশড সিরিয়ালটা যখন দেখলাম, একদম চমকে গিয়েছি। নিজের সিরিয়াল বলে বলছি না, ছোট পরদা বাদ দিন, এই মাপের কাজ তো হিন্দি সিনেমাতেও হয়নি। আরে যেখানে যাচ্ছি, সেখানেই দেখি সবাই ‘টোয়েন্টি ফোর’ নিয়ে কথা বলছে। মুকেশ অম্বানি থেকে প্রীতীশ নন্দী, সলমন খান থেকে ইমরান খান সবাই আমাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে থাকলে লোক এসে হাত ধরে উষ্ণ অভিনন্দন জানাচ্ছেন,” বলছেন অনিল।
এমনও হয়েছে যে আগেকার দিনের অভিনেতারা এসে অনিলকে বলেছেন যদি সিরিজে তাঁদের জন্য কোনও রোল থাকে, তিনি যেন সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আরও জানান, “যাঁরা বলছেন, তাঁরা কিন্তু এক সময় সিরিয়াল করেছেন। কিন্তু দিন দিন সিরিয়ালের উপাদান, তার বৈচিত্রের অভাবে অভিনেতারা একেবারেই হতাশ। বেগতিক দেখে কেউ কেউ সিরিয়াল করাই ছেড়ে দিয়েছেনা। ‘টোয়েন্টি ফোর’ শুরু হওয়ার পর এঁরা এসে আমাকে ধন্যবাদ জানিয়ে গিয়েছেন।” সেই সব শিল্পী নাকি বলেছেন ‘টোয়েন্টি ফোর’ তাঁদের যেন বাঁধ ভেঙে দিয়েছে। এ বার তাঁরা ভারতীয় টেলিভিশন থেকে অন্য ধরনের কাজ পাওয়ার আশা রাখবেন।
তবে ট্যাম রিপোর্ট অনুযায়ী ‘টোয়েন্টি ফোর’ এখনও দর্শককে সে ভাবে টানতে পারেনি। সে কথা বলতেই অনিল জানালেন যে এই ধরনের একটা শো-এর মূল্যায়ন শুধুমাত্র ট্যাম রিপোর্ট দিয়ে হয় না। “এখন তো সব থেকে ভাল ফিডব্যাক পাওয়া যায় সোশ্যাল মিডিয়া থেকে। যে মুহূর্তে কোনও কিছু দেখানো হয়, সঙ্গে সঙ্গে দর্শক সেটা নিয়ে তাঁদের নিজস্ব মত প্রকাশ করেন। প্রত্যেকের হাতে আজ একটা করে মোবাইল। সোশ্যাল মিডিয়ার ফিডব্যাক দেখেই বুঝতে পারছি ‘টোয়েন্টি ফোর’ কী ধরনের আলোড়ন ফেলেছে,” বলছেন ‘টোয়েন্টি ফোর’-এর জয় সিংহ রাঠোর।
তার পর বলে চলেন যে কেরিয়ারে ঝুঁকি নেওয়াটা তাঁর কাছে কোনও নতুন ব্যাপার নয়। কেরিয়ারের প্রথম বড় ছবি এমএস সাথ্যুর সঙ্গে ‘কঁহা কঁহা সে গুজর গয়া’ ছবির শ্যুটিং হয়েছিল কলকাতায়। “থাকতাম বালিগঞ্জ ইস্ট-য়ে। সে সময় অন্যান্য অভিনেতারা কী ধরনের সিনেমা করেছেন ভেবে দেখুন একবার। ঋষি কপূর করেছেন ‘ববি’। আর আমি সেখানে কলেজ স্ট্রিটে শ্যুটিং করলাম সথ্যুর ছবির জন্য। জ্যোতি বসু মিটিং করছেন আর আমি সেখানে শ্যুটিং করেছি। কত সব স্মৃতি! হ্যান্ডহেল্ড ক্যামেরা। সিঙ্ক সাউন্ডে সেই জমানায় কাজ হয়েছিল,” বলেন তিনি।
ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৮৬-তে। তার পর অনিলের বড় মেনস্ট্রিম ছবি ‘ওহ্ সাত দিন’। “সেখানেও আমি ব্যতিক্রমী ছিলাম। আজকাল লোকে কত ডায়ালেক্ট ইত্যাদি নিয়ে কথা বলে। সেই সময় আমি হরিয়ানাভি ডায়ালেক্টে কথা বলেছিলাম। এমন একটা চরিত্র করেছিলাম যাঁর পাজামার দড়ি খুলে বেরিয়ে আসত। এক ফোঁটাও তো মনে হয়নি যে এ রকম সেজে অভিনয় করলে বলিউডে জায়গা হবে তো! তার পর ‘মিঃ ইন্ডিয়া’ ভাবুন। অর্ধেক ছবিতেই তো আমি অদৃশ্য! লোকে ভাবত পরদায় কত বেশি নায়ককে দেখা যাবে। আর আমি তো ঠিক তার উল্টো!”
‘মিঃ ইন্ডিয়া’ মুক্তি পাওয়ার সময় আরও একটা সিনেমা রিলিজ করেছিল। নাম ‘নাগিনা’। “সবাই বলল ‘নাগিন’ নাকি দারুণ চলেছে। আর ‘মিঃ ইন্ডিয়া’ একদম গায়েব। কিন্তু আজ ভাবুন কোথায় ‘নাগিনা’ আর কোথায় ‘মিঃ ইন্ডিয়া’র কদর! সেই একই ঘটনা ঘটল ‘পরিন্দা’র ক্ষেত্রেও। লোকে বলল ছবিটি শুধুমাত্র মুম্বই আর মহারাষ্ট্রের কিছু থিয়েটারে চলবে। কিন্তু আমি তো মুষড়ে পড়িনি। আজও ‘পরিন্দা’র কথা লোকে বলে,” উত্তেজিত হয়ে বলেন অনিল।
‘১৯৪২-আ লাভ স্টোরি’র ক্ষেত্রেও একই ঘটনা। তখন অনিলকে অনেকেই বলেছিলেন যে ওই ছবিটা নাকি মোটামুটি ব্যবসা করেছে। কিন্তু এখন ফিরে তাকালে এটা বুঝতে অসুবিধে হয় না যে বিধু বিনোদ চোপড়া সিনেমাতে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। “আরে ‘স্লামডগ মিলিয়নেয়ার’ যখন করলাম, তখন লোকে বলল আবার দেশের গরিবি বিক্রি করা হচ্ছে গোরাদের কাছে। কিন্তু আজ বিদেশে যে আমাদের সিনেমা নিয়ে এত কথা হচ্ছে, তার পেছনে ‘স্লামডগ মিলিয়নেয়ার’য়ের অবদান তো অনস্বীকার্য,” মুচকি হেসে বলেন অনিল।
অনিল বলেন
“মুকেশ অম্বানি থেকে প্রীতীশ নন্দী, সলমন খান থেকে ইমরান খান— সবাই আমাকে
শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে থাকলে লোক এসে হাত ধরে উষ্ণ অভিনন্দন জানাচ্ছেন”
“শ্যুটিং শেষে একটা কথা ভেবে আনন্দ পাব যে এমন একটা কাজ করে
দেখালাম যার প্রতিধ্বনি কুড়ি বছর পরেও শোনা যাবে”
আসল সমস্যাটা, অনিলের মতে, হল ‘ব্যান্ডউইথ’ নিয়ে। তিনি বলেন, “অন্ধের মতো অনুকরণ করলেই সাফল্য আসে না। যখন ‘দিল চাহতা হ্যায়’ বানানো হয়েছিল, তখন শুনেছিলাম ছবিটি নাকি শুধুমাত্র শহরে চলবে। আর এখন তো ‘ভাগ মিলখা ভাগ’য়ের মতো সিনেমাও বানানো হচ্ছে,” এক নিশ্বাসে বলে চলেন।
স্বীকার করে নেন আজ থেকে দশ বছর আগে হলে নিজের প্রযোজনা নিয়ে নেতিবাচক কথা শুনলে তিনি মুষড়ে পড়তেন। “আজ কিন্তু আমার কোনও চাপ নেই। যে যাই বলুক, মার্সিডিজ বেঞ্জ কি অন্যের কথা শুনে তাঁদের নিজস্ব ব্র্যান্ড ভ্যালুটা বদলে ফেলে নাকি?” প্রশ্ন ছুড়ে দেন।
ইতিমধ্যে কথা উঠেছে যে তিনি নাকি ‘টোয়েন্টি ফোর’-এর দ্বিতীয় সিরিজ নিয়েও পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছেন। কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে যে তিনি নাকি চান ২৬/১১-র মুম্বই হামলার ওপরেই সিরিজটা বানানো হোক। “না, এখনও ওই সব ঠিক হয়নি। আপাতত আমার দু’এক দিন ছুটি রয়েছে। তার পর প্রথম কাজ হল শ্যুটিংয়ের কাজটা শেষ করা,” তিনি জানান।
আর তার পর? অন্য কোনও সিরিজের আমেরিকান রাইটস কিনবেন ভাবছেন কি? “এখন মনোযোগ ‘টোয়েন্টি ফোর’য়ে। বলতে পারেন নিজেকে আমি দেখি ৯৪-এ ব্যাটিং করছি হিসেবে। সেঞ্চুরি হোক। তার পর কী করব সে নিয়ে এখন ভাবছি না।”
টেলিভিশনে বিপ্লব ঘটানোর বীজটা তিনি পুঁতে দিয়েছেন। এখন শুধু ফলের অপেক্ষা। “শ্যুটিং শেষে এক কাপ কফি আর সিগার নিয়ে বসব। একটা সুখটান দিয়ে ভেবে আনন্দ পাব যে ভারতীয় টেলিভিশনে এমন একটা কাজ করে দেখালাম যার প্রতিধ্বনি কুড়ি বছর পরেও শোনা যাবে!”
বলেছিলাম না অনিল কপূরের দিওয়ালি সত্যিই শুরু হয়ে গিয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.