টানা জমিতে জল জমে আলু চাষ মার খাওয়ায় মাথায় হাত পড়েছে মালদহের চাঁচল মহকুমার চাষিদের। কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টিতে আলু চাষ কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে বলে গ্রাম পঞ্চায়েত ও কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। অগ্নিমূল্যের বাজারে তুলনামূলকভাবে কিছুটা সস্তার ছিল আলু। সেই আলুও ১০ টাকা থেকে পৌঁছে গিয়েছে ২০ টাকায়। নতুন আলু উঠলে দাম কিছুটা কমবে বলে অনেকে আশায় ছিলেন। পাশাপাশি আলুর দাম ভালও হওয়ায় আলু চাষকে ঘিরে আশায় ছিলেন চাষিরাও। কিন্তু বৃষ্টি সেই আশায় জল ঢেলে দেওয়ায় তাঁরা মুষড়ে পড়েছেন।
ক্ষতিপূরণের বিষয়টি বিধানসভার আগামী অধিবেশনে বিষয়টি তুলবেন বলে জানান হরিশ্চন্দ্রপুরের ফরওয়ার্ড বিধায়ক তজমূল হোসেন। ক্ষতিপূরণের দাবিতে সরব পঞ্চায়েত কর্তারাও। চাঁচল মহকুমায় আলু চাষে ক্ষতির পরিমাণ কত তার হিসেব এখনও করে উঠতে পারেনি কৃষি দফতর।
দফতরের মালদহের উপ অধিকর্তা সজল ঘোষ বলেন, “আলু-সহ বেশ কিছু চাষে ক্ষতি হয়েছে। তবে ক্ষতির পরিমাণ কত তার চূড়ান্ত হিসাব করা হয়নি। রিপোর্ট তৈরির কাজ চলছে।” হরিশ্চন্দ্রপুরের বিধায়ক বলেন, “এত দিন কেটে গেলেও কৃষি দফতর বলছে এখনও হিসাব করে উঠতে পারেনি। আলু চাষিদের পথে বসতে হয়েছে। ১৮ নভেম্বর বিধানসভার অধিবেশন শুরু হবে। সেখানে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি তুলব।” কৃষি দফতর সূত্রের খবর, পুজোর সময় কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টির সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়ায় মহকুমা জুড়েই কয়েক হাজার মাটির বাড়ি ধসে পড়ে। পাশাপাশি জলে ডুবে যায় খেতের ফসল। ওই বিপর্যয়ের দিন কয়েক আগেই আলু চাষ করেছিলেন চাষিরা। খেতে জল জমে থাকায় গাছ গজানোর আগেই বীজ পচে যায়। শুধু হরিশ্চন্দ্রপুর-১ ব্লকেই জলে ডুবে যায় দেড় হাজার বিঘা আলু, দু হাজার বিঘা ধান ও ৫০০ বিঘার বেশি সব্জি খেত। গাছ পড়ে নষ্ট হয় ৫০০ বিঘারও বেশি কলা চাষের খেত। মহকুমার অন্যান্য ব্লকে আলুর পাশাপাশি অন্য চাষেও এক রকম ক্ষতি হয়েছে। হরিশ্চন্দ্রপুর-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জামিল ফিরদৌস বলেন, “এলাকায় আলু চাষ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতির তরফে বিস্তারিত রিপোর্ট কৃষি দফতরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
চাষিরা জানান, হরিশ্চন্দ্রপুরে সব থেকে বেশি আলু চাষ হয় সুলতাননগর, কুশিদা ও বরুই পঞ্চায়েত এলাকায়। এছাড়া চাঁচলের আশাপুর, মতিহারপুর ও রতুয়ার সামসি, শ্রীপুর এলাকাতেও আলু চাষ হয়। হরিশ্চন্দ্রপুর নন্দিবাটির আলুচাষি কামালুদ্দিন আহমেদ বলেন, “১৫ বিঘার আলু ডুবে সব শেষ।” শিমুলিয়ার শেখ রব্বানি বলেন, “ঋণ নিয়ে চাষ করে পথে বসতে হয়েছে।” |