পুলিশ এ বার মাউসের নাগালে
বাঁকুড়ায় কোনও বিপদে পড়লে আর কষ্ট করে থানায় ছুটতে হবে না। বাড়িতে বসেই কম্পিউটারে মাউস ক্লিক করে বা মোবাইল টিপে জেলা পুলিশের ওয়েবসাইটে ঢুকে সরাসরি অভিযোগ জানানো যাবে।
পুলিশকর্তাদের দাবি, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে পুলিশ নিজেই অভিযোগকারী সঙ্গে যোগাযোগ করে ‘কেস ফাইল’ করবে। জেলা পুলিশের পুরনো ওয়েবসাইটই নতুন করে সাজিয়ে এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে র্যাগিং থেকে ইভটিজিং বা নিছক চুরি-ছিনতাইয়ের অভিযোগ যেমন জানানো যাবে, জানানো যাবে মাদক ব্যবসা বা পাচারচক্র সম্পর্কে গোপন খবরও। অপরাধ অনুযায়ী আলাদা করে অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা রয়েছে।
ওয়েবসাইটের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে পুলিশ সুপারের মোবাইলের। যে কোনও অভিযোগ জমা পড়লেই তা তৎক্ষণাৎ ওই মোবাইলে পৌঁছচ্ছে। পুলিশ সুপারই সংশ্লিষ্ট থানাকে ব্যবস্থা নিতে বলছেন। থানায় অভিযোগ দায়ের হলে তারা অভিযোগকারীকে একটি নম্বর দেবে। তা ব্যবহার করেই ভবিষ্যতে তিনি তদন্তের অগ্রগতি, পুলিশি ব্যবস্থা-সহ সমস্ত বিষয়ে জানতে পারবেন। চাইলে কেউ পরিচয় গোপন রেখে অভিযোগ করতে পারেন। পুলিশের কর্মপদ্ধতি নিয়ে পরামর্শও দিতে পারেন।
বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার জানান, ইতিমধ্যেই জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বেশ কিছু অভিযোগ ওয়েবসাইটে এসেছে। সেগুলির ভিত্তিতে তদন্তও শুরু হয়েছে। বিষয়টি জনসাধারণের গোচরে আনতে স্কুল-কলেজের সামনে ও জনবহুল এলাকায় হোর্ডিং বসানো হচ্ছে। বিলি করা হবে লিফলেটও। সুপারের কথায়, “জনসংযোগ বাড়াতেই এই ব্যবস্থা। সাধারণ মানুষ বাড়িতে বসেই নির্ভয়ে এলাকার যে কোনও সমস্যার কথা আমায় জানাতে পারেন।” রাজ্য পুলিশের আইজি (আইনশৃঙ্খলা) অনুজ শর্মা বলেন, “বাঁকুড়া পুলিশের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। আমরা সারা রাজ্যেই আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করব।”
পুলিশের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছেন নাগরিকেরা। বাঁকুড়ার বাসিন্দা তথা ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব দাসের মতে, “অনেক কিছু ঘটে। সব সময় থানায় গিয়ে অভিযোগ জানানো যায় না। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সরাসরি অভিযোগ জানানোর সুযোগ চালু হওয়ায় অনেক সমাজ-সচেতন নাগরিকের পক্ষে সুবিধা হল।” বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজের ছাত্রী চুমকি দত্ত, ঋতুপর্ণা আশ, সুচরিতা ঘোষেরা বলেন, “ইভটিজিংয়ের সমস্যা দিন-দিন বাড়ছে। পরিচয় গোপন রেখে ওয়েবসাইটে সরাসরি পুলিশ সুপারকে জানানোর সুযোগ পেয়ে খুব ভাল হল।” নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিল্পাঞ্চল বড়জোড়ার কিছু বাসিন্দা বলেন, “এলাকায় বহিরাগতদের সংখ্যা বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দুষ্কৃতীদের উপদ্রবও। থানার নজর নেই। এ বার সরাসরি পুলিশ সুপারকে জানাতে পারব।”
রাজ্যের এক পুলিশকর্তা জানান, ক্রাইম অ্যান্ড ক্রিমিনাল ট্র্যাকিং নেটওয়ার্ক অ্যান্ড সিস্টেম (সিসিটিএনএস) প্রকল্পে দেশের প্রায় ১৪ হাজার থানাকে সাইবার জালে জোড়ার জন্য প্রায় ২০০০ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছে কেন্দ্র। দেশের প্রতিটি থানার সঙ্গে ২৪ ঘণ্টা যোগাযোগ রাখতে এই ব্যবস্থা চালু করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, ভবিষ্যতে ইন্টারনেট ব্যবহার করে আরও সর্বাত্মক পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। এখন যে খাতায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) এবং এফআইআর নথিবদ্ধ করা হয়, শিগগির তা বদলে কম্পিউটারে লিপিবদ্ধ করার ব্যবস্থা চালু হবে। সিসিটিএনএস-এ অপরাধীদের নাম, চেহারার বিবরণ, বয়স, ছবি, ঠিকানা-সহ সমস্ত তথ্যও থাকবে। দেশের যে কোনও থানা প্রয়োজনে সেই তথ্য ব্যবহার করতে পারবে। অভিযুক্তকে ধরার জন্য অন্য থানায় বার্তাও পাঠাতে পারবে। বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশ একজোট হয়ে কাজ করতে পারবে।

(সহ-প্রতিবেদন: দিবাকর রায়)



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.