গত কয়েক বছর ধরে রায়গঞ্জের কুলিক পক্ষীনিবাসে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমতে থাকায় উদ্বিগ্ন বন দফতর ও বিভিন্ন পরিবেশ প্রেমী সংগঠন। সম্প্রতি, বন দফতর পক্ষীনিবাসে পাখি গণনার কাজ শেষ করেছে। গণনার তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে গত বছরের তুলনায় পক্ষীনিবাসে প্রায় চার হাজার পাখি কম এসেছে। এই নিয়ে ৩ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে পক্ষীনিবাসে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমছে। কী কারণে পাখি সংখ্যা কমছে, তা জানতে বন দফতরের কর্তারা পক্ষীনিবাসের পরিবেশ ও পরিযায়ী পাখিদের খাবার-সহ নানা বিষয়ে জানতে সমীক্ষা শুরু করেছেন। উত্তর দিনাজপুরের বিভাগীয় বনাধিকারিক দ্বিপর্ণ দত্ত বলেন, “কেনও পর্যায়ক্রমে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমছে তা জানতে ১ মাস ধরে সমীক্ষা চলবে। তবে এবছর দেরিতে বর্ষা শুরু হওয়ায় অনেক পরিযায়ী পাখি পক্ষীনিবাসে আসেনি। দূষণ ও খাবারের অভাবে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমছে কী না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সেরকম হলে কুলিক খালে পর্যাপ্ত মাছ ও শামুক ছাড়া হবে।”
প্রতি বছর জুন-জুলাই মাস নাগাদ দেশের বিভিন্ন রাজ্য-সহ বিভিন্ন দেশ থেকে ওপেন বিলস্টক, নাইট হেরণ, করমোন্যান্ট ও ইগ্রেট প্রজাতির পরিযায়ী পাখি কুলিকে আসে। প্রজননের পর ছানাদের নিয়ে ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাস নাগাদ তারা ফিরে যায়। পাখিদের দেখতে প্রতিবছর বহু দেশি, বিদেশি পর্যটক পক্ষীনিবাসে ভিড় জমান। |
বন দফতরের গণনা অনুযায়ী, ১৯৮৪ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর গড়ে এক লক্ষের কাছাকাছি পরিযায়ী এসেছে। এ বছর ৬৫৩১১টি পরিযায়ী পাখি এসেছে। ২০১২ সালে ৬৯ হাজার, ২০১১ সালে ৬৮১৮৬ ও ২০১০ সালে ৪৫৭৬২টি পাখি পক্ষী নিবাসে এসেছিল। ২০০৯ সালে ১ লক্ষ ১৪০২৪টি পাখি আসায় সে বার পর্যটকদের ভিড় উপচে পড়েছিল।
বিভিন্ন পরিবেশ প্রেমী সংগঠনের সদস্যদের মতে, প্রতিবছর ধীরে ধীরে পক্ষীনিবাসে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমতে থাকলে একদিকে যেমন পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে, তেমনি পর্যটকরাও হতাশ হবেন। পিপল ফর অ্যানিমেলের জেলা সম্পাদক গৌতম তান্তিয়া বলেন, “দূষণ-সহ নানা কারণে পক্ষীনিবাস চত্বরের কুলিক নদীর খালে মাছ, শামুক ও বনাঞ্চলে পোকামাকড়, কীটপতঙ্গ ও সাপের সংখ্যা কমছে। পরিযায়ী পাখিরা এসব খেয়েই বেঁচে থাকে। তাই খাবারের অভাবে ধীরে ধীরে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমছে বলে আমাদের ধারণা। বন দফতরের বিষয়টি দেখা দরকার।”
হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ার্স অ্যান্ড ট্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশন সদস্য তাপস জোয়ারদার মতে, “পক্ষীনিবাস সংলগ্ন ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে যানবাহনের সংখ্যা বাড়তে থাকায় দূষণ বাড়ছে। রাস্তা বেহাল থাকায় গাড়ি চলাচলের সময়ে বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণও বাড়ছে।” তিনি জানান, বন দফতরের বিষয়গুলি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। পক্ষীনিবাসে পরিযায়ী পাখিদের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে গেলে পড়ুয়াদের নিয়ে প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ কিংবা পাখি চেনানোর শিবির বন্ধ হয়ে যাবে। |