চার জন কনস্টেবল। আর বাচ্চা-ধাড়ি মিলিয়ে ৯৯টি মোষ। ‘বহুত না ইনসাফি হ্যায়’।
ঘোর কৃষ্ণপক্ষের রাত জেগে কোচবিহারের অসম সীমান্তবর্তী মান্তানিতে ওই মোষ পাহারা দিতে গিয়ে ‘শোলে’-র সংলাপ বিড়বিড় করছিলেন বক্সিরহাট থানার এক কনস্টেবল। তাতে ঘাড় নেড়ে সায় দিলেন কার্তিকের হিমে ভিজে কাবু আর এক কনস্টেবল। রবিবার বিকেলে সীমান্তে পাচারের চেষ্টার সময় এতগুলো মোষ ধরে ওই থানারই পুলিশ। সঙ্গে পাচারকারী সন্দেহে ধরা পড়েছিলেন ৩২ জন। পুলিশ জানিয়েছে, তাঁদের নিয়ে সমস্যা নেই, আদালত জামিন খারিজ করে দেওয়ার পরে জেলে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এই এতগুলো মোষ রাখা হবে কোথায়?
অনেক ভেবেচিন্তে থানা থেকে দেড় কিলোমিটার মতো দূরে মান্তানি গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে কাঁচা রাস্তার দু’পাশে কাদা প্যাচপেচে খোলা মাঠে রাখা হয়েছে ওই মোষ। কিছু মোষ রাখা হয়েছে স্থানীয় বাসিন্দা কনৌজ বর্মনের উঠোনেও। গ্রামের মনোরঞ্জন বর্মন বলেন, “কয়েকটা মোষ খুবই বদমেজাজি। সন্ধ্যে হলেই খেপে যাচ্ছে। যখন তখন ঢুঁসিয়ে দিতে পারে। সেগুলোকে বেঁধে রাখা হয়েছে। তবে সব ক’টাকে বাঁধা সম্ভব হয়নি।” |
অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য। |
আর তাই বেশ উদ্বিগ্ন পুলিশও। এক পুলিশ কর্তার কথায়, “কতগুলো মোষ ধরা হয়েছে তার সিজার লিস্ট আদালতে জমা পড়ে গিয়েছে। এ বার দু’একটা পালালেই সমস্যা।” কিন্তু বেশ ঠান্ডা পড়ে গিয়েছে। এর মধ্যে এত ছাড়া মোষ রাতভর চোখে চোখে রাখা প্রায় অসম্ভব। দিনের বেলা অবশ্য গ্রামের পাঁচ জনকেই মোষ দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু পুলিশকেই জোগাড় করতে হচ্ছে ৫০টি শাবক আর ৪৯ টি প্রাপ্তবয়স্ক মোষের খোরাকি। সাতসকালে উঠে ওসি জয়দেব ঘোষ নিজেই মোবাইল নিয়ে একে-তাঁকে ফোন করে অনুরোধ করছেন, যে ভাবেই হোক কেজি কেজি তাজা ঘাস চাই। অন্তত ১ হাজার বান্ডিল খড় লাগবে। চাই ভুষিও। কিন্তু গাঁ-গঞ্জে এক লপ্তে এত খাবারের ব্যবস্থা করা তো চাট্টিখানি কথা নয়। কনৌজ জানান, থানার ‘বড়বাবু’র অনুরোধে দোরে ঘুরে জোগাড় করতে হয়েছে এতগুলি মোষের খাবার।
একরাতেই স্থানীয় এক বাসিন্দার জমির প্রায় পাঁচশ কেজি খড় তারা সাবাড় করেছে। সোমবার সকাল হতেই তাই ফের খড়ের খোঁজ শুরু। ব্রেকফাস্টে খড় না হলে যে অতিথিদের মুখে রুচবে না। কোচবিহারের পুলিশ সুপার অনুপ জয়সওয়াল বলেন, “মোষগুলিকে অসম হয়ে বাংলাদেশে পাচারের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল বলে প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে। আটক ৯৯টি মোষকে ভাল ভাবে রাখার চেষ্টা হচ্ছে।”
হাজির প্রাণিবন্ধু বসন্ত বর্মাও। মোষগুলিকে পরীক্ষাও করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, “মোষগুলির শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকই আছে। চিন্তার কিছু নেই। তবে শাবকগুলির আর না ভিজলেই ভাল হয়।” মোষেদের মুখে খড়ের আঁটি জুগিয়ে দেওয়ার মধ্যেই গ্রামবাসী শর বর্মন, মনোরঞ্জন বর্মনরা বলেই দিলেন, “বড্ড হ্যাপা। একটার কিছু হয়ে গেলে রক্ষে আছে! রাতে পুলিশ পাহারা দিলেও বড়বাবুর হুকুমে গোটা দিন যে আমাদেরই চোখে চোখে রাখতে হচ্ছে।”
থানা জুড়ে জল্পনা চলছে, এ ভাবে কতদিন চলবে? কিন্তু আদালতের নির্দেশ ছাড়া মোষগুলির নিলামও তো করা যাবে না। আনমনে হিসাব করতে গিয়েও থেমে যান জয়দেববাবুও। এক পুলিশ কর্তা বলেন, “দূর এ ভাবে আগাম বলা যায় নাকি? মোষ ধরে যে এতটা হ্যাপা পোহাতে হবে, তা আগে বুঝিনি।” তবে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশিদিন ওই মোষ আগলে রাখতে হলে, অন্য থানা থেকেও দরকারে কনস্টেবল নিয়ে আসতে হবে। |