পঠনপাঠনের পাশাপাশি, পরীক্ষা পদ্ধতির ক্ষেত্রেও সাবেক ব্যবস্থা থেকে সরে এসে নয়া নিয়ম চালু করেছিল প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু কিছু দিন যেতে না যেতেই তা নিয়ে নানা রকম আপত্তি জানাতে শুরু করেছেন ছাত্রছাত্রীরা। তাঁদের দাবির সমর্থনে সোমবার দুপুরে উপাচার্যের ঘরে অবস্থান শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। তার জেরে শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজার সিদ্ধান্ত নিলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
স্নাতক স্তরের জেনারেল পত্র বা জেন-এডের অসংখ্য পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়নের পদ্ধতিতে আপত্তি জানিয়ে সোমবার বেলা আড়াইটে থেকে উপাচার্য মালবিকা সরকারের ঘরে অবস্থান শুরু করেন এক দল শিক্ষার্থী। বেশ কিছু শিক্ষক-শিক্ষিকার পড়ানোর ধরনও তাঁদের পছন্দ নয়। পরীক্ষা পদ্ধতি ঢেলে সাজা হবে এবং ক্লাস হাজিরার জন্য কোনও নম্বর দেওয়া হবে না বলে আশ্বাস পেয়ে অবস্থান তুলে নেন বিক্ষোভকারীরা।
উপাচার্য অবশ্য পরে জানান, ছাত্রদের বিক্ষোভের জন্য নয়, জেনারেল পত্রের পরীক্ষা পদ্ধতিতে কিছু বদলের কথা তাঁরা আগে থেকেই ভাবছিলেন। ঠিক হয়েছে, জেন-এড পত্রের একটি পরীক্ষা হবে সেমেস্টারের মাঝে। সেই সঙ্গে একটি রচনা বা সেমিনার প্রেজেন্টেশন দিতে হবে। আগামী ৯ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের এগজিকিউটিভ কাউন্সিলের (ইসি) বৈঠকে বিষয়টি আলোচনা করে চূড়ান্ত হবে। তার আগে বিভিন্ন বিভাগের পরীক্ষা স্থগিত থাকবে।
প্রেসিডেন্সিতে বিভিন্ন সেমেস্টারে মেজর পত্রের সঙ্গে মোট দশটি জেন-এড পত্রের পঠনপাঠন বাধ্যতামূলক। বিজ্ঞান শাখার ছাত্রছাত্রীদের কলা শাখার দু’টি বিষয় এবং কলা শাখার পড়ুয়াদের অন্তত দু’টি বিজ্ঞানের বিষয় জেন-এড হিসেবে পড়তেই হবে। এই পত্রগুলির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট কোনও নিয়ম তৈরি করেননি। বিভাগগুলি নিজেদের মতো করে পরীক্ষা নেয়। কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, জেন-এড পত্রের একের পর এক ছোট পরীক্ষার জেরে তাঁরা জেরবার।
আইসি-র আহ্বায়ক দেবর্ষি চক্রবর্তী বলেন, “প্রায় রোজই পরীক্ষা থাকায় ক্লাস ঠিক মতো হচ্ছে না। একটা নির্দিষ্ট পরীক্ষা পদ্ধতি চাই। আবার, অনেক শিক্ষকের ক্লাস ভাল বোঝা যাচ্ছে না। কোনও ক্লাসে অনুপস্থিত থাকলে হয়তো পরে দেখা যাচ্ছে একটা সারপ্রাইজ টেস্ট নিয়ে নিয়েছেন ওই শিক্ষক! এ ভাবে খুব সমস্যা হচ্ছে। উপাচার্যকে তা জানানো হয়েছে।” বিজ্ঞান শাখার ছাত্রছাত্রীদের কলা বিভাগের এবং কলা শাখার পড়ুয়াদের বিজ্ঞানের জেন-এড পত্র পড়া বাধ্যতামূলক হওয়া নিয়েও আপত্তি আছে পড়ুয়াদের।
ছাত্রছাত্রীদের সমস্যার কথা অস্বীকার করেননি মালবিকাদেবী। তিনি বলেন, “শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কারও কারও গবেষণা, মেধা প্রশ্নাতীত। কিন্তু বয়স কম বলে হয়তো তাঁদের পড়ানোর অভিজ্ঞতা কম। একটু সময় দিলে ঠিক হয়ে যাবে। আমার নিজেরই এমন হয়েছিল” পাশাপাশি, ক্রমাগত পরীক্ষা হলে যে ছাত্রছাত্রীদের সমস্যায় পড়তে হয়, তা-ও মেনে নিয়েছেন উপাচার্য। তিনি বলেন, “বিভাগগুলি যে এত বেশি সংখ্যায় পরীক্ষা নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মূল্যায়ন করবে, সেটা ধারণা করা যায়নি।” তবে এক শাখার পড়ুয়াদের অন্য শাখার জেন-এড পত্র পড়া নিয়ে যে আপত্তি, তা নিয়ে ইসি-তে আলোচনা না করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না বলে জানান উপাচার্য।
প্রেসিডেন্সিকে বিশ্বমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে চায় রাজ্য সরকার। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের চলার শুরুতেই ইস্তফা দিতে শুরু করেন একের পর এক শিক্ষক। এখন আবার ছাত্রছাত্রীরা কিছু শিক্ষকের পড়ানোর ধরন নিয়ে আপত্তি জানালেন। উপাচার্য অবশ্য বলেন, “যে কোনও নতুন পদ্ধতি চালু হলে একটা বিভ্রান্তি তৈরি হয়। কিছু ভাঙচুরের মধ্য দিয়েই এগোতে হয় তাকে। এ ক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে।” |