বিজয়ার মিষ্টিমুখে লগ্নির জন্য আমন্ত্রণ জানাতে সরকারের স্থায়িত্বকেই তুরুপের তাস করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে জানিয়ে দিলেন, শিল্প গড়তে কোনও সংস্থা এগিয়ে এলে, সব রকম সাহায্য করবে রাজ্য। সব সমস্যা দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা করা হবে। আশ্বাস দিলেন জমি নিয়েও।
সোমবার সন্ধ্যায় বিজয়া সম্মেলনে শিল্পমহলের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিল রাজ্য। সেখানে রাজ্যে বিনিয়োগ করতে তাঁদের সরাসরি আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “কেন্দ্রে কোন সরকার আসবে, তার অপেক্ষায় বসে থাকবেন না। এখানে স্থায়ী সরকার আছে। আমরা আছি। আমরাই থাকব। এখানে লগ্নি করুন। সরকার সব রকম সহযোগিতা করবে।” বিশেষত পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফল সামনে আসার পর স্থায়িত্বের বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। |
বিজয়া সম্মেলন থেকে বেরিয়ে আসার পর মুকুল রায়ের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার। |
শিল্পমহলের মতে, মুখ্যমন্ত্রী বিলক্ষণ জানেন যে, সরকার যা-ই প্রতিশ্রুতি দিক না কেন, রাজ্যে লগ্নি আসার পথে প্রধান সমস্যা জমি। তাঁদের ধারণা, সেই কারণে এ দিন নিজেই জমির প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন তিনি। মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, জমির ঊর্ধ্বসীমা আইন সংশোধনের পর যথেষ্ট কম সময়ের মধ্যে শিল্পের জন্য ১২ হাজার একর জমি বরাদ্দ করেছেন তাঁরা। রাস্তা, স্বাস্থ্য পরিষেবা, পযর্টনের মতো বিভিন্ন শিল্পে সরকারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে সামিল হতেও শিল্পকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মমতা।
বণিকসভা বিসিসিআইয়ের কর্তা কল্লোল দত্ত বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী আন্তরিক ভাবেই লগ্নির জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। বিশেষত রাস্তার মতো পরিকাঠামো নির্মাণে। জানিয়েছেন, এ রাজ্যে এমনিতেই হাইওয়ে ডেভেলপমেন্ট অথরিটির হাজার কিলোমিটার রাস্তা তৈরির কথা রয়েছে। তার সঙ্গে আরও তিন হাজার কিলোমিটার রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা করছে রাজ্য। শিল্পকে সেখানে লগ্নি করতে বলেছেন তিনি।” |
মুখ্যমন্ত্রীর বিজয়া সম্মেলনে ওয়াই সি দেবেশ্বর এবং হর্ষ নেওটিয়া। সোমবার। |
বিনিয়োগ টানতে আন্তরিকতার কথা বলেছেন রাজ্যে শিল্পের দুই পরিচিত মুখ সঞ্জীব গোয়েন্কা এবং হর্ষবর্ধন নেওটিয়াও। টাটা গোষ্ঠীর সংস্থা টিএসপিডিএলের কর্ণধার সন্দীপন চক্রবর্তী বলেন, “যে রকম সহজ সরল ভাবে মুখ্যমন্ত্রী সকলের সঙ্গে মিশতে পারেন, তা দৃষ্টান্ত।” এঁরা ছাড়াও এ দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইটিসি-র ওয়াই সি দেবেশ্বর, প্যাটনের সঞ্জয় বুধিয়া, এক্সাইডের সত্যব্রত গঙ্গোপাধ্যায়, টিআইএলের সুমিত মজুমদার, অনাবাসী শিল্পপতি প্রসূন মুখোপাধ্যায়, জগমোহন ডালমিয়া-সহ আরও অনেকে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত কয়েক জন শিল্পকর্তার কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী বলছিলেন, পাহাড় আর জঙ্গলমহলের সমস্যা মিটেছে। রাজ্যের উন্নতির জন্য আন্তরিক ভাবে চেষ্টা করছে সরকার। অর্থাৎ লগ্নি টানতে স্থায়িত্ব আর সুশাসনেই ভরসা রাখছেন তিনি।” |